![দুই আসনে চ্যালেঞ্জ, একটিতে ফুরফুরে প্রার্থী](uploads/2023/12/27/1703695338.Sherpur.jpg)
শেরপুর-১ ও ৩ আসনে নৌকা এবং স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থীর মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। তবে শেরপুর-২ আসনে নৌকার অবস্থান শক্তিশালী। ওই আসনে নৌকার প্রার্থীর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শেরপুর-১ আসনে মোট সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আছে পাঁচবারের এমপি সংসদের হুইপ ও নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছানোয়ার হোসেন ছানু, জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের প্রার্থী মো. মাহমুদুল হক মনি, বিএনএফ-সমর্থিত নোঙ্গর প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছার প্রার্থী বারেক বৈদেশী, বিএসপি সমর্থিত একতারা প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশের প্রার্থী মো.ফারুক হোসেন।
ওই আসনে আরও পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও নৌকা ও ট্রাকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনপ্রিয়তায় ওই দুই প্রার্থীর অবস্থান প্রায় সমানে সমান। আতিকের বাড়ি উপজেলার পূর্ব পাশে আর ছানুর বাড়ি পশ্চিম পাশে। মূলত সদরের আওয়ামী রাজনীতি এখন পূর্ব ও পশ্চিম দুই অংশে বিভক্ত। এ ছাড়া বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে না থাকায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
তবে নির্বাচনে জয়ী হতে প্রচার ও গণসংযোগে সরব ওই দুই প্রার্থী। তার মধ্যে লাঙ্গলের প্রার্থী শিল্পপতি মাহমুদুল হক মনি আঞ্চলিক কিছু ভোট পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। জেলায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটা দুর্বল। যার কারণে নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। এর মধ্যে অন্য প্রার্থীদের নিজ এলাকাতে তেমন পরিচিতি নেই। ভোটাররা এসব প্রার্থীকে ডামি প্রার্থী মনে করেন। পূর্বশেরী মহল্লার সাইদুর রহমান বলেন, ‘যতই অন্য প্রার্থী থাকুক, ওই আসনে নৌকা ও ট্রাকের মধ্যে ব্যাপক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’ চরশেরপুর এলাকায় বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আগে নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, এবার ভিন্ন। দুজনেই আওয়ামী লীগের নেতা।’
শেরপুর-২ আসনে মোট তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হেভিওয়েট বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাসদ-সমর্থিত মশালের প্রার্থী লাল মোহাম্মদ শাজাহান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সৈয়দ মোহাম্মদ সাঈদ আঙ্গুর। এই আসনে প্রতিযোগিতা নেই বললে চলে। অনেকের ধারণা, এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া বাকি দুজন ডামি। এ ছাড়া ভোটার উপস্থিতি যেমন থাকুক, আওয়ামী লীগ প্রার্থীই জয়ী হবেন বলে জানান স্থানীয়রা।
নালিতাবাড়ীর নয়াবিল এলাকার সুকুমার কুমার সরকার বলেন, ‘এখানে মতিয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে একজন স্বতন্ত্র আছেন কিন্তু তার তেমন অবস্থান নেই। এ ছাড়া মশাল প্রার্থীর অবস্থান বেশ দুর্বল। এই আসনে নৌকা জয়ী হবে আমরা মনে করি।’
শেরপুর-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এ ডি এম শহিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রার্থী সিরাজুল হক, জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) প্রকৌশলী ইকবাল আহসান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগর গামছার প্রার্থী সুন্দর আলী।
স্থানীয়রা জানান, ওই আসনে নৌকা ও ট্রাকের মধ্যে লড়াই হবে। ট্রাক নিয়ে ইকবাল আহসান ভোটের মাঠে বেশ উত্তাপ ছড়াছেন। এতে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক ভাগাভাগি হবে। যার কারণে নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলামকে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া ওই আসনে লাঙ্গলসহ অন্য প্রার্থী তেমন অবস্থান নেই।
শ্রীবরদী উপজেলার কলিমুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সব জায়গায় নৌকার অবস্থান আছে। তবে ট্রাক মার্কার ভোটও কম নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পিছিয়ে নেই।’
ঝিনাইগাতীর উপজেলার রজব আলী বলেন, ‘এবার নির্বাচন জমছে। একই দলের দুজন। একজন নৌকা, অন্যজন ট্রাক মার্কা। আসলে কে জিতবে বোঝা যাচ্ছে না। এর মধ্যে যে যোগ্য তাকে আমরা ভোট দেব।’
শেরপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
শেরপুরে তিনটি আসনে মোট ভোটার ১২ লাখ ২২ হাজার ৩৯৩ জন। নির্বাচনকে ঘিরে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপির মোট ১৬ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন।