![‘পরাজয় নিশ্চিত’ জেনে প্রচার নেই](uploads/2023/12/27/1703695934.Bogura.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের বাকি মাত্র ৯ দিন। এর আগেই বগুড়ার সাতটি আসনের অনেক প্রার্থী প্রচার কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছেন। জয়ের সম্ভাবনা না থাকায় ব্যয় বাড়াতে চান না বলে জানান সেসব প্রার্থীর কয়েকজন। বগুড়ায় সাতটি আসনে তিন নারীসহ মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। তবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন।
এদিকে জেলার সাতটি আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক প্রার্থীই তাদের ব্যানার-পোস্টার ঝোলাননি। ভোটারদেরও অনেকে বলেছেন, এখনো নতুন প্রার্থীদের অনেককেই দেখার সুযোগ হয়নি তাদের।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে ‘ফুলের মালা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। অন্তত ১০টি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তার কোনো পোস্টার-ব্যানার নেই। কেন এ অবস্থা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে ভোট চাচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যদি ভোটে কারচুপি না হয়, তবে আমি জয়ী হব।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রার্থী আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. শাহাজাদী আলম লিপি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শোকরানা ও কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনএফ) প্রার্থী সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব ও বগুড়া জেলা কমিটির সভাপাতি বরকত উল্লাহ। প্রচার কার্যক্রম কিছুটা কম ছিল স্বীকার করে তিনি জানান, শিগগিরই তিনি তার প্রচার বাড়াবেন। জয়ের বিষয়ে কতটা নিশ্চিত, এ প্রশ্নের জবাবে বরকত উল্লাহ বলেন, ‘এটা ভাগ্যের বিষয়। তবে আমি শক্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের কাহালু এলাকার এরুইল বাজারে বহু বছর ধরেই ব্যবসা করেন আলহাজ আবু তালেব। তিনি জানান, এখনো কোনো প্রার্থী তার কাছে ভোট চাইতে আসেননি। এবার এ আসনে কতজন প্রার্থী তাও তিনি জানেন না। তবে বাজারে দু-তিনজনের পোস্টার দেখেছেন। নন্দীগ্রামের পাঠান মির্জাপুর গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ভোট নিয়ে প্রচার এখনো তেমন নেই।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তাফা কামাল। তিনি গত সংসদ উপনির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। এবার কত ভোট পেতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অনিশ্চিত। নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে শাহীন মোস্তাফা কামাল বলেন, জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় তার জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত নয়।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মো. মামুনার রশিদ। প্রচারে পিছিয়ে কেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জয়ের জন্য নয়, নিজের পরিচিতি বাড়াতেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া। আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারব না। পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত বলেই ব্যয় কমাতে প্রচারে তেমন জোর দেওয়া হচ্ছে না।’
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাতমাথায় গত রবিবার পর্যন্ত ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলামের কোনো প্রচারপত্র দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘যেকোনো ভোট এমনকি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনেও সাতমাথা ঢাকা পড়ে পোস্টার-ব্যানারে। কিন্তু এবার ফাঁকা।
সাতমাথা এলাকার ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলারচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলো সাতমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে পোস্টার-ব্যানারে প্রার্থীরা ছেয়ে দিয়েছিলেন, এবার সে রকম দেখা যাচ্ছে না। এমন জায়গায় গেছি যেখানে এখনো কোনো পোস্টারই ঝোলানো হয়নি। অথচ গত সংসদ নির্বাচনে সে জায়গায় দেখেছি বিভিন্ন প্রার্থীর শতশত পোস্টার।’
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. ফজলুল হক। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় বগুড়া শহরের জামিলনগর এলাকার বাড়িতে। প্রচারে কেন পিছিয়ে আছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই প্রচার কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি।’ তার নির্বাচনি এলাকায় অন্তত চারটি জনবহুল বাজারে এই প্রার্থীর কোনো পোস্টার দেখা যায়নি। মো. ফজুলুল হক জানান, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা না থাকলে তিনি জয়ী হতেন। এবার তার জয়ের সম্ভাবনা নেই। কারণ ভোট ভাগাভাগি হবে।