যশোর-১ (শার্শা) আসনে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন শেখ আফিল উদ্দিন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের জামায়াতের প্রার্থী আজীজুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ না নেওয়ায় ফের জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আফিল উদ্দিন। ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক জয়ের গৌরব অর্জন করেন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকার টিকিট পেয়েছেন তিনি। ফলে তিনি চারবারের এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন। তবে আফিল উদ্দিনের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন (ট্রাক প্রতীক) ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান। এর মধ্যে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আফিল ও লিটনের মধ্যে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এই আসনে অবস্থিত। এই নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৬ জন।
নাভারণ ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিল জানান, এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটনের। এখানে রয়েছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। তার পরও ১১টি ইউনিয়ন ও প্রায় সব ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক, পৌরসভা ও ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শেখ আফিল উদ্দিনের আস্থাভাজন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার বিপুল ভোটে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আশরাফুল আলম লিটনের পক্ষের হয়ে কাজ করছেন বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আহসান উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শার্শার মানুষ লিটনকে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তারা পরিবর্তন চাইছে। এ জন্য ৭ জানুয়ারি তারা ভোট বিপ্লব ঘটাবে।’
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ আফিল উদ্দিন চারদলীয় জোটের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আজীজুর রহমানকে পরাজিত করে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হন তিনি। ২০০১ সালে আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের থেকে নির্বাচন করে চারদলীয় জোটের বিএনপির আলী কদরের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালে বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে ২ লাখ ৬ হাজার ৪৬২ ভোটে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি পেয়েছেলেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪৩ ভোট। তৃপ্তি পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৮১ ভোট। তাই এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নৌকার প্রার্থী চায় আসনটি ধরে রাখতে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী চায় ঝাঁকুনি দিতে।
শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে এলাকায় নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছি। নিজ অর্থে রাস্তা, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছি। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাতা-কলম দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার এ এলাকায় রাস্তা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিদ্যুৎসহ অনেক কিছু দিয়েছে। এক সময়ের ভূতুড়ে পল্লি এখন শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সংবর্ধনা দিয়েছি। আমি জুটমিল স্থাপন করে প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।’ এ জন্য তিনি আবারও ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে হবে। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী, যা শার্শার আপামর জনগণ ৭ জানুয়ারি ব্যালেটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিবে।’