ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। প্রচারে বেড়েছে গতি। জেলার ছয় আসনের তিনটিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাকি তিনটিতে লড়াইয়ের কোনো ধরনের সম্ভাবনা না থাকলেও আছে কেন্দ্রে ভোটার আনার চ্যালেঞ্জ। যে কারণে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও কোনো প্রার্থীই নির্বাচনি প্রচারে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। তাদের প্রচারে মুখর প্রতিটি অলিগলি।
জেলার ছয়টি আসনে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলায় ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৪১ হাজার ৫১৭ জন ও নারী ভোটার ১১ লাখ ৪২ হাজার ৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের মোট ১০ জন। নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ২ ও ৩নং আসনে ভোটের মাঠে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাকি ৪, ৫ ও ৬নং আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিন প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত।
তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্ভার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হকের বিপক্ষে যে দুজন লড়াই করছেন তাদের দল ও ব্যক্তি সম্পর্কে এলাকার লোকজন অবগত নন। তবে ওই তিন আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীই নির্বাচনি প্রচারে পিছিয়ে নেই।
নৌকায় কলার ছড়ির ভার:
নাসিরনগরে নৌকার প্রার্থী বদরুদ্দোজ্জা মো. ফরহাদ হোসেনকে চোখ রাঙাচ্ছে বিএনপির বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী কলার ছড়ি প্রতীকের সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। দল মনোনীত প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে খুঁজে পাচ্ছেন না মো. ফরহাদ হোসেন। এমনকি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম মনিরুজ্জামান প্রকাশ্যে একরামুজ্জামানের পক্ষে নেমেছেন। একরামুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচনের মাঠে নামায় দল তাকে বহিষ্কার করে।
শ্বশুর-জামাইয়ের লড়াইয়ে সুযোগ স্বতন্ত্র আ.লীগ নেতার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ‘জোট সমর্থিত’ লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তবে আসনটিতে লাঙ্গলকে চোখ রাঙাচ্ছে কলার ছড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন। এর আগের দুই ভোটে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি বেশ লড়াই করেন।
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার শ্বশুর সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউল হক মৃধা ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করায় বেশ সুবিধায় আছেন মঈন উদ্দিন। গত ৫ নভেম্বর হওয়া উপনির্বাচনে শাহজাহান আলম সাজুর জয়ের মাধ্যমে ৫০ বছর পর আসনটি ফিরে পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। অনেক নাটকীয়তার পর জাতীয় পার্টির নেতা রেজাউল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীক পেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত শাহজাহান আলম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। জাতীয় পার্টি প্রথমে আব্দুল হামিদকে মনোনয়ন দেয়।
শিক্ষিত বনাম স্বশিক্ষিতের লড়াই:
বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে। পোস্টার ছেঁড়া, পোস্টার ছিনতাই, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের অভিযোগ- এসব মিলিয়ে জমে উঠেছে এ আসনের নির্বাচনি মাঠের লড়াই। এ আসনে টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে আপিল করে মনোনয়ন ফিরে পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানকে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি এমপি প্রার্থী হয়েছেন।
এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে তিনবারের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এবারের ভোটের এলাকায় তার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। ওই দুই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে বাহাসও চলছে। ফিরোজুর রহমানের মদের বার থাকার বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এ বিষয়ে ধৈর্য ধরে কিছু না বলার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর-বিজয়নগর)-৩ আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । অন্যদিকে কাঁচি মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফিরোজুর রহমান স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। তরুণ ভোটারদের পছন্দ মোকতাদির চৌধুরীকে । ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিগত ১৩ বছর তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শহরে চাঁদাবাজি বা ছিনতাইসহ কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় না দেওয়ায় শহরে শান্তি ফিরে এসেছে।
আনিসুল হক, ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, ফয়জুর রহমান বাদলের জয় নিশ্চিত:
একেবারেই নির্ভার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ও ফয়জুর রহমান বাদল। এ তিনজন যথাক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, ৬ ও ৫নং আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যে কারণে তিনজনই এমপি হতে যাচ্ছেন বলে এক প্রকার নিশ্চিত।