নীলফামারীর সংসদীয় চারটি আসন রয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী-১, ২, ৩ ও ৪ আসনে ইতোমধ্যে ভোটের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রচার ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ভোটে জিততে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি ও ইশতেহার ঘোষণা করছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জেলার চারটি আসনে ৩৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ২৭ জনের বৈধ হন। এর মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ওই ১০ জনের মধ্যে ৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পান। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করে একজন প্রার্থিতা ফিরে পান। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে ৭ জন সরে যান। কিন্তু দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় একজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। প্রতীক বরাদ্দ শেষে চূড়ান্ত হওয়া ২৭ প্রার্থী এখন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙ্গল) প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তসলিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির (সোনালি আঁশ) অ্যাডভোকেট এন কে আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (নোঙ্গর) জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (টেলিভিশন) সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির জেপি (বাইসাইকেল) মখদুম আজম মাশরাফি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) ইমরান কবির চৌধুরী প্রতীকে লড়ছেন।
এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ২৯৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন রয়েছেন। এখানকার ১৫৪টি ভোটকেন্দ্রের ৯৬৫টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ৭ জন নির্বাচনি লড়াইয়ে থাকলেও মূলত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থীর ‘নোঙ্গর’ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা) আসনে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন চারজন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর দলীয়, জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) শাহজাহান আলী চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) মোরছালীন ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) জয়নাল আবেদীন প্রতীকে লড়ছেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩ এবং পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৮ জন। নীলফামারী সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ১৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৮০১টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) জয়নাল আবেদীন।
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙ্গল) প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, তৃণমূল বিএনপির (সোনালি আঁশ) খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির (হাতঘড়ি) বাদশা আলমগীর, গণতন্ত্রী পার্টির (কবুতর) মোজ্জামেল হক, জাতীয় পার্টির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফারুক কাদের, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মার্জিয়া সুলতানা এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (মোড়া) আবু সাঈদ শামীম ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান ট্রাক প্রতীক পেলেও গত ২২ ডিসেম্বর আসনের একমাত্র স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানাকে (ঈগল) সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তারা। ওই আসন থেকে দলীয় সমঝোতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তাফাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাধারণ ভোটারদের কাছে ‘ঈগল’ ও ‘কাঁচি’ রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনায়।
এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ জন ও পুরুষ ১ লাখ ৪০ হাজার ৭২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন। এ আসনের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬২০টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙ্গল) প্রার্থী আহসান আদেলুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (নোঙ্গর) এম সাজেদুল করিম, তৃণমূল বিএনপির (সোনালি আঁশ) ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাসদ (মশাল) আজিজুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম) আব্দুল হাই সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) মোকছেদুল মোমিন ও জাতীয় পার্টি মনোনয়বঞ্চিত ও জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর আলম ‘কাঁচি’ প্রতীকে লড়ছেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ২৩৮ জন, পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৪৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ১৬৯টি ভোটকেন্দ্রের ৯৬৮টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন বাবুলকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ‘লাঙ্গল-ট্রাক-কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ খবরের কাগজকে জানান, নীলফামারী-১ আসনে ৭ জন, নীলফামারী-২ আসনে ৪ জন, নীলফামারী-৩ আসনে ৯ জন ও নীলফামারী-৪ আসনে ৮ জনসহ মোট ২৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনি আরও জানান, জেলায় মোট ভোটার ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৫ জন। পুরুষ ৭ লাখ ৫০ হাজার ৪৩০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৮ জন ভোটার রয়েছেন। জেলার মোট ৫৬৩টি ভোটকেন্দ্রের ৩ হাজার ৩৫টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।