![সংসদ সদস্য হয়ে বোনদের চেনেন না মমতাজ](uploads/2024/01/03/1704289586.Momtaz.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। এরই মধ্যে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের তিন সৎবোন নৌকা ছেড়ে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুকে সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে জয়মন্টপ ইউনিয়নের পূর্ব ভাকুম এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর উঠান বৈঠকে ফুলের মালা দিয়ে সমর্থন জানান মমতাজের তিন সৎবোন। এতেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন তারা।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বাবা প্রয়াত মধু বয়াতি দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ঘরে এক ছেলে ও তিন মেয়ে আছেন। তারা হলেন রেহেনা বেগম, জাহানারা বেগম ও শাহনাজ পারভীন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী উজালা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে মমতাজ বেগম। জমিজমাসহ পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মমতাজের সঙ্গে তার তিন বোনের বিরোধ রয়েছে। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে মমতাজ বেগমের পাশে নেই তিন বোন।
জয়মন্টপ ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য শাহনাজ বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা দুই বিয়ে করেছিলেন। আমরা প্রথম ঘরের চার ভাইবোন আর পরের ঘরে এমপি মমতাজ ও এক ভাই আছে। আমার বাবা সাড়ে ৪৬ শতাংশ জমি রেখে মারা যান। হিসাব মতে, আমার মা ও আমরা তিন বোন মোট ১৬ শতাংশ জায়গা পাই। কিন্তু এর মধ্যে ১০ শতাংশ জমি রেকর্ড থাকলেও আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয় মাত্র ৩ শতাংশ। এই জমির মধ্যেই আমার মা ও আমার পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে বসবাস করছি। বারবার মমতাজ বেগমকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললেও এ বিষয়ে তিনি কর্ণপাত করেন না। তিনি এমপি হয়েও অন্য কোনো সহায়তা করা তো দূরের কথা, আমাদের পৈতৃক জায়গা দখল করে বিল্ডিং করে হোটেলের কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এত শত্রুতা করলে তার সঙ্গে কেমন করে চলব।’
মমতাজের আরেক সৎবোন জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমাদের ও আমার মায়ের ন্যায্য অধিকার এমপি মমতাজ বেগম দিচ্ছেন না। তা ছাড়া আশপাশে অনেক মানুষের কাছে ভোট চাইলেও আমার বোন শাহনাজ বেগম ও আমার মায়ের কাছে একবারও আসে নাই বা কাউকে দিয়ে কোনো খবরও পাঠায়নি। আমরা অনেক আশায় ছিলাম হয়তো আগের নির্বাচনের মতো এবারও আমাদের নির্বাচন করতে ডাকবে। তার হয়তো আমাদের ভোটের প্রয়োজন। তাই আমরা তিন বোন ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুকে সমর্থন জানাই। তিনি অনেক ভালো লোক। সবার সুখে-দুঃখে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ান।’
মমতাজ বেগমের ছোট সৎবোন রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমরা মমতাজ বেগমের বোন। তিনি আমাদের কোনো খোঁজখবর কিংবা বোন হিসেবে কারও কাছে পরিচয় দেয় না। তিনি মানুষের কাছে বলেন, তারা এক ভাই এক বোন। মমতাজ বেগমের বাসায় গেলে তার নেতা-কর্মীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, কথাও বলতে দেয় না। এমনকি বাড়ির কাজের লোকও আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এই কথা মমতাজ বেগমকে বললে বলে খারাপ ব্যবহার করে কেন? আমাদের কোনো মূল্যায়ন করে না। তা ছাড়া আমরা দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুকে সমর্থন করেছি বিধায় আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা কীভাবে এখানে বসবাস করি সেটা নির্বাচনের পরে দেখে নেবে।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে মমতাজের কটূক্তি ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এখন ভোটারদের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ ছাড়া হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দলীয়ভাবে কোণঠাসা দুবারের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম। মমতাজ বেগমের নিজ ইউনিয়ন জয়মন্টপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।