শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ আসন। আসনটিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। তার প্রতীক ঈগল। তবে তার প্রচার একটু ব্যতিক্রম। গোলাম মোস্তফার প্রচারে নেই কোনো নেতা-কর্মী বা সমর্থক। নিজের প্রচার নিজেই চালিয়ে যাচ্ছেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিষয়টি শরীয়তপুর-১ আসনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পরেই শরীয়তপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেন মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবার বাসিন্দা তিনি।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারে যখন এ আসনের অন্য প্রার্থীরা দলবল নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা নিজের প্রচার চালাচ্ছেন নিজের মতো করে। গাড়িতে মাইক লাগিয়ে একাই ভোট চাইছেন। ভাড়ায় নেওয়া একটি অটোরিকশা দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬টি ইউনিয়নে গণসংযোগ ও প্রচার করছেন তিনি। নির্বাচনি কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন অটোরিকশাচালক ও এক সহযোগী। অটোরিকশায় দুটি মাইক লাগানো রয়েছে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পোস্টার ও লিফলেট নিয়ে যান। সঙ্গে মইও রাখেন। নিজেই মই দিয়ে বিভিন্ন স্থানে উঠে পোস্টার সাঁটিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে লড়ছেন গোলাম মোস্তফা।
পালং জাজিরার ভোটার আব্দুর রহমান, সোহেল খান, নুর মোহাম্মদ সিকদার জানান, এই স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজের প্রচার নিজেই করছেন। অটোরিকশাচালক বলেন, ‘গোলাম মোস্তফা ভাই যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন আমি তাকে সহযোগিতা করি।’
ভোট চাইতে গিয়ে কাউকে সঙ্গে না রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভোটের আগে কেউ যদি আমার জন্য কাজ করে, তাহলে আমি নির্বাচিত হলে আমার কাছে তার একটা চাহিদা থাকবে। একজন এমপি যত ভালো হোক না কেন, কর্মী ভালো হবে এটা আশা করা যায় না। কর্মী আসে তার স্বার্থে। তিনি জনগণের স্বার্থে আসবেন না। ন্যায্য চাহিদা হলে হয়তো আমি পূরণ করতে পারব। কিন্তু যদি কোনো অনৈতিক সুবিধা নিতে চায়, তাহলে সেটা আমি দিতে পারব না। এ জন্য আমি সঙ্গে কাউকে রাখছি না। মানুষ আমার প্রচার দেখে নয়, সততা দেখে ভোট দেবেন।’
খবরের কাগজকে তিনি আরও বলেন, ‘এমনও দেখা যাচ্ছে, প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করে, নির্বাচিত হলে ওই জনপ্রতিনিধি তার কর্মীদের প্রাধান্য দেয়। এতে সাধারণ জনগণ তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। আমি মনে করি সবাই আমার। কেউ দূরের বা কাছের নয়। তাই নির্বাচিত হলে জনগণের সমান অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আমি নির্বাচিত হলে সবাইকে সমান চোখে দেখব। আমি সৎ থাকার চেষ্টা করব। আরেকজনকে সুবিধা দিতে হলে আমাকে অসৎ পন্থার আশ্রয় নিতে হবে। সেটা আমি পারব না। ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের সম্মানী দেওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নেই। যদি কেউ স্বেচ্ছায় এজেন্ট হয় তাহলে হতে পারে।’
তার ছোট ভাই কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, ‘আমার ভাই আধুনিক, আদর্শিক ও ব্যতিক্রম নির্বাচন করতে চায়। শুধু ভালোবাসা এবং সততা দিয়েও মানুষের মন জয় করা যায়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আহসান উল্লাহ্ ইসমাঈলী খবরের কাগজে বলেন, ‘শরীয়তপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফার প্রচার একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। পেশিশক্তি, স্বজনপ্রীতি, দলীয় শক্তি ছাড়াও যে মানুষের ভালোবাসায় ভোট পাওয়া যায় এটি তার প্রমাণ। সাধারণত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা টাকা দিয়ে ভোট কিনে থাকে। সেদিক দিয়ে তিনি কোনো খরচ না করেই নির্বাচনের মাঠে লড়ছেন।’