বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ শীর্ষ নেতাদের প্রবেশ ও জনসমাগমকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে আবারও তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।
বুয়েটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা মধ্যরাতে কর্মসূচি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয় দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমতিয়াজ রাব্বি, তিনি বুয়েটের ২১ ব্যাচের পুরোকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী।
এর আগে বিকেলে বুয়েটের শহিদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ছয় দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘বুয়েট থেকে করব ছাড়া, পলিটিকসে যুক্ত যারা’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ এমন স্লোগান দেন।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এসেছেন। তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়েই ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০টার পরে যেখানে নিরাপত্তার কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগতদের মধ্যরাতে অনুপ্রবেশ ঘটে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের মেইন গেটের সামনে আসতে থাকে। বিপুলসংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পান মিছিলের মতো করে বিশাল একটি জনবহর। তারা হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ক্যাম্পাসে রাত ২টার পরও প্রবেশ করতে থাকেন।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘বিশাল জনবহরের সবাই বহিরাগত ছিলেন এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। ভেতরে প্রবেশ করা ওই ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চিনতে পারেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এটা সুস্পষ্ট যে, এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।’
শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ছয় দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে আমরা বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিলের দাবি জানাই।
২. ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহি বুয়েট প্রশাসনকে দিতে হবে।
৪. ১ নং এবং ২ নং দাবি আগামীকাল (আজ) সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ডিএসডব্লিউর পদত্যাগ চাই।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।