স্কলারশিপ অনেকের কাছে একটি স্বপ্নের নাম। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার। তাই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ভালো শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ সুবিধা দিয়ে থাকে। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানারকম স্কলারশিপের ব্যবস্থা। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বা তারপর থেকে স্কলারশিপ নিয়ে থাকে।
এদিকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর অনেকেরই স্বপ্ন হয়ে যায় স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়া। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীই সঠিক সময়ে স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আবেদন করতে পারে না। তাই প্রত্যেকের এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্কলারশিপ সম্পর্কিত সাধারণ বিষয়াবলি।
স্কলারশিপের ধরণ
সাধারণত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের উন্নত সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় কিছু মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্কলারশিপ দাতা প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত থাকে। শিক্ষার্থীকে তাদের নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতার মান পূরণ করে সেই স্কলারশিপে অংশগ্রহণ করতে হবে। যেমন শিক্ষাগত অর্জন বা যোগ্যতা, অথবা বিশেষ কোনো প্রতিভা, বৈশিষ্ট্য বা আগ্রহের সংমিশ্রণের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্কলারশিপগুলো আর্থিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়ে থাকে।
এদিকে কিছু কিছু স্কলারশিপ নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। যেমন শুধু নারী বা স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু স্কলারশিপ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে স্কলারশিপ দাতা প্রতিষ্ঠানে আপনি অথবা আপনার বাবা-মা কাজ করলেও স্কলারশিপ পাওয়া যায়। তাছাড়া কিছু স্কলারশিপ পারিবারিক পটভূমির ওপর ভিত্তি করেও দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ- সামরিক পরিবারগুলোর জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্কলারশিপের মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। সেটা হতে পারে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার পুরো খরচ অথবা কয়েক শ ডলার এককালীন অনুদান। তবে যেভাবেই হোক না কেন, স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার বিশেষ কারণ হলো, এটি শিক্ষার্থীর শিক্ষার ব্যয় হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
যেভাবে স্কলারশিপ পাওয়া যাবে
স্কলারশিপ পেতে হলে সর্বপ্রথম এটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন। এর জন্য শিক্ষার্থী যেই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পরিকল্পনা করছেন, সেখানকার আর্থিক সহায়তা বিভাগে যোগাযোগ করা এবং পাবলিক লাইব্রেরি বা অনলাইনে তথ্য যাচাই করাসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা আজকাল কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান স্কলারশিপের নামে বিভ্রান্ত করে সাধারণ মানুষকে নানা রকম ফাঁদে ফেলছে। তাই স্কলারশিপের সামগ্রিক তথ্য এবং প্রস্তাবগুলো বৈধ কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, স্কলারশিপ বা অন্যান্য আর্থিক সহায়তার জন্য শিক্ষার্থীর কোনো অর্থ দিতে হয় না। স্কলারশিপ অনুসন্ধানের জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেওয়া যায়। তবে Scholarships.com ও একটি ভালো মাধ্যম।
কখন আবেদন করবেন
প্রতিটি স্কলারশিপ নির্ধারিত সময়সীমার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কলেজের প্রথম বর্ষের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ দেওয়া হয়। সুতরাং শিক্ষার্থীকে শিক্ষাগত অবস্থান বিবেচনা করে এবং স্কলারশিপের যাবতীয় বিষয়াদি গবেষণা করে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা উচিত। যদি শিক্ষার্থী কোনো স্কলারশিপ সুবিধা মিস করে থাকেন, তবে হাল ছেড়ে দেবেন না। বরং এখন কোনটিতে আবেদন করার যোগ্যতা বা সুযোগ আছে তা খুঁজে দেখুন।
যেভাবে আবেদন করবেন
প্রতিটি স্কলারশিপের একটি নিজস্ব আবেদন প্রক্রিয়া থাকে। শিক্ষার্থী যে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান, সেটির ওয়েবসাইট থেকেই ওই স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। কিছু স্থানীয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে আবেদনপত্র পূরণ করতে বলবে। তবে বেশির ভাগ আবেদনপত্র অনলাইনেই ফাইল করা হয়।
সাধারণ একাডেমিকভিত্তিক স্কলারশিপগুলোর জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণের প্রয়োজন হয়, পাশাপাশি কোনো প্রদত্ত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রবন্ধও প্রয়োজন হয়।
তাছাড়া ক্রীড়াবিষয়ক এবং প্রতিভাভিত্তিক স্কলারশিপের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীকে দক্ষতার প্রমাণ সরবরাহ করতে বলবে। যেমন একটি লাইভ পারফরম্যান্স, একটি পোর্টফোলিও বা শিক্ষার্থীর ক্রীড়াবিষয়ক সাফল্যের চলচ্চিত্র ইত্যাদি হতে পারে।
তাই আবেদনপত্রটি মনোযোগসহকারে পড়ুন, তা পুরোপুরি পূরণ করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আবেদনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আবেদনপত্রটি স্কলারশিপ দাতার কাছে পৌঁছাবে।
স্কলারশিপের অর্থ যেভাবে পাওয়া যায়
এটি সম্পূর্ণভাবে স্কলারশিপ দাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। কিছু প্রতিষ্ঠান এই অর্থটি সরাসরি শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিতে পারে। যেখানে এটি কোনো ফি বা অন্যান্য পরিমাণে দেওয়া হবে এবং তারপর অবশিষ্ট কোনো তহবিলের জন্য দেওয়া হবে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান সরাসরি চেকের মাধ্যমে অর্থটি প্রেরণ করতে পারে। তবে শিক্ষার্থীর উচিত স্কলারশিপ পাওয়ার পর তাদের জানানো যে, আপনি কোন মাধ্যমে অর্থটি গ্রহণ করতে চান। তাহলে পরবর্তী সময়ে আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
স্কলারশিপ যেভাবে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে
স্কলারশিপ পেতে হলে প্রয়োজন যোগ্যতা ও প্রতিভা। কারণ যেকোনো স্কলারশিপ দাতা প্রতিষ্ঠান একজন ভালো শিক্ষার্থীকেই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে, যেন সে পড়াশোনা করে ভালো কিছু করতে পারে। তার প্রতিভার আলো যেন অর্থ বা অবস্থানের অভাবে নিভে না যায়। যখন একজন ভালো শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। তারাও চাইবে স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে। অর্থাৎ স্কলারশিপ তাদের উৎসাহকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
কলি