![প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি: শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কর্মবিরতি](uploads/2024/06/30/Dhaka-Univresity-1719685031.jpg)
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে এবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ ছাড়াও একই দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে আশানুরূপ সাড়া না পেলে আগামী পহেলা জুলাই থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালনের হুশিয়ারী দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেতারা।
রবিবার (২৯ জুন) পূর্ণ কর্মদিবস বিরতি থাকলে এই সময়জুড়ে চলমান পরীক্ষা ও জরুরি সভা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা নিজ ক্যাম্পাসে এক দিনের এই পূর্ণবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পহেলা জুলাই থেকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনে যাবে। রবিবার সাড়ে ১২টায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন রয়েছে সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। এর মধ্যে যদি আমাদের বিষয়টি সুরাহা করা চেষ্টা করা হয়, তখন হয়ত আমরা চিন্তা করে দেখব পরবর্তীতে আমরা কোন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করব।’
এদিকে ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমাদের দাবির বিষয়ে কোন সাড়া দেওয়া হয়নি। আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করতে যাচ্ছি। এর মধ্যেও দাবি না মানা হলে আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাব। সেদিন থেকে কোনো ক্লাস চলবে না, পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
সেশনজটের আশঙ্কা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে প্রথমত এর জন্য দায়ী থাকবে যারা এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম তৈরি করে এ রকম পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। যদিও জটের সৃষ্টি হয় আমরা শিক্ষকেরা সেটি পুষিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব; যেমনটা আমরা করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি একই দাবিতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ৩০ জুন ঢাবিতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ জুনের মধ্যে আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পেলে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।’
রবিবার ৫৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবে বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের মহাসচিব মো. আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রবিবার ৫৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে। সেই সঙ্গে কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি ৩০ তারিখের (রবিবার) মধ্যে আমাদের দাবি যদি বাস্তবায়ন হবে, সেটি না হলে ১ জুলাই থেকে ৩ জুলাই পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাব। এই সময়ের মধ্যেও যদি দাবি বাস্তবায়নের কোন ইঙ্গিত না পাই তাহলে ৩ জুলাইয়ে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বি এম আশিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা পূর্ণ কর্মদিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছি না। রবিবার শুধু শিক্ষকরা পালন করবেন, সেই সঙ্গে আপত আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতেও যাচ্ছি না। তাছাড়া দেশের ৫২ বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে পহেলা জুলাই থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও রবিবার এ ব্যাপরে আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত আসবে যে আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাব কি-না?’
এর আগেও একই দাবি কয়েক দফা কর্মবিরতি পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরসহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি। এদিকে গত ১৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাই তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।
আরিফ জাওয়াদ/এমএ/