সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের পক্ষে-বিপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ এবং কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়।
ঢাবিতে গণপদযাত্রা, শাহবাগ অবরোধ
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গণপদযাত্রা করেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকেল ৩টার আগেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে মিছিল সহকারে নীলক্ষেত-নিউমার্কেট-সাইন্সল্যাব-কাটাবন হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে অংশ নেন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় অবরোধ করে রাখেন। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবিলম্বে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন গড়ে তুলেছি। কোটা নামক এই বৈষম্য থেকে আমরা মুক্তি চাই। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। বুধবার (আজ) ও বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) রাজপথ দখল রেখে এই আন্দোলন সফল করতে হবে। বুধবার দুপুর আড়াইটায় আমরা আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেব এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করব।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুন আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
কোটা বহালসহ সাত দাবি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণসহ সাত দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হওয়া জামায়াত, বিএনপি ও রাজাকারের সন্তানদের কোনো অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রশাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের শূন্য করার লক্ষ্যে কোটা বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ তারা জানে যে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অফিস-আদালতে থাকলে দুর্নীতি করা খুবই কঠিন হবে।’
সংগঠনটির সাত দাবির মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে অবসরের বয়স ৬১ বছর করা, মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন পাস, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন নিশ্চিত করা, দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স, বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধে অভিযান, ভাতার অংশ নাতি-নাতনির নামে চালু করা।
কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে জবিতে মিছিল
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস ছাড়াও নিকটবর্তী বাহাদুর শাহ পার্ক, রায় সাহেব বাজার মোড়, তাঁতীবাজার মোড় হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশে মিলিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিকারীদের বহিষ্কার দাবি
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় ভাষাশহিদ রফিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগঠনের জবি শাখার সভাপতি রাকিবুল হাফিজ অন্তর বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, কটূক্তি করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গত ৫ জুন হাইকোর্ট ‘২০১৮ সালে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে’ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসগুলো। এদিকে আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে কি না, এমন বিষয়ে আগামী ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হবে।