ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

মুহসীন হলের ক্যান্টিনে তরকারিতে ১০ টাকার নোট

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
মুহসীন হলের ক্যান্টিনে তরকারিতে ১০ টাকার নোট
তরকারিতে ১০ টাকার নোট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ক্যান্টিনে খাবার খেতে গিয়ে তরকারিতে ১০ টাকার নোট পেয়েছেন হলের এক শিক্ষার্থী। 

ওই শিক্ষার্থীর নাম কাজি শামীম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন শামীম।

শুক্রবার (২৮ জুন) এ ঘটনা ঘটে। 

পরে তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করে তরকারি পরিবর্তন করে দেন ক্যান্টিনের পরিচালক রিপন মোহাম্মদ।

কাজি শামীম বলেন, ‘নামাজ শেষে অন্যান্য দিনের মতো ক্যান্টিনে খেতে যাই। ৫৫ টাকা দিয়ে খাসির মাংস অর্ডার করি। মাংস থালায় ঢালতে গিয়ে দেখি ১০ টাকার নোট। পরে পরিচালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে খাবার পরিবর্তন করে দেন। টাকা যেভাবে ছিল, মনে হয়েছে টাকাসহ রান্না করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেব ভাবছি। কিন্তু পরীক্ষা চলায় দেরি হচ্ছে।’

এদিকে ক্যান্টিনের পরিচালক রিপন মোহাম্মদ বলেন, ‘নামাজের পর অনেক চাপ থাকে। সবাই একসঙ্গে খেতে আসেন। ভিড়ের মধ্যে ভুলে খাবার যেখান থেকে দেওয়া হয় সেখান থেকে হয়তো টাকা উড়ে মাংসের প্লেটে পড়তে পারে। টাকা তো কাগজ, এটি রান্না করলে আস্ত থাকত না। তা ছাড়া এখন আগের তুলনায় খাবারের মান অনেক ভালো।’

সার্বিক বিষয় জানতে একাধিকবার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমানকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

আরিফ/পপি/অমিয়/

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি, মঙ্গলবার পদযাত্রা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি, মঙ্গলবার পদযাত্রা
ছবি : খবরের কাগজ

সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের ২১ দিনের আল্টিমেটাম শেষে ফের আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাস। 

একইসঙ্গে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্রের পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। 

পরে হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সেখান থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি কলা ভবন, শ্যাডো, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ভিসি চত্বর হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ’ এর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, ‘২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দেওয়া হয়েছিল। যখন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র-জনতার কথা বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কীভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বলা হয়েছিল ৪ জুলাই হাইকোর্ট থেকে ২০১৮ সালের ওই পরিপত্রের শুনানি দেওয়া হবে। তাই ৪ তারিখ পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মসূচি চলবে। ততদিন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, ‘২০১৮ সালে আমাদের যে আন্দোলন সে আন্দোলনের ফসলকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেখানে উচিত ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকুরিতে কোটার একটি সুরাহা করা। কিন্তু দেখা গেল উল্টোটা হয়েছে। অবিলম্বে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্রের পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেসা হিমু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এখন মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানী পাচ্ছে। সেইসব পরিবার কিভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার? যারা শিক্ষা, খাদ্য ও চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে, পাহাড়ে বসবাস করে তারাই পিছিয়ে আছে। আজকে আমাদের আন্দোলন ভূণ্ডুল করার জন্য প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমরা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী না, আমরা চাই তারা তাদের অধিকার সম্মানের সাথে পেয়ে যাক। আমরা চাই কোটা নামের এই প্রহসন বন্ধ হোক। অন্যথায় ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।’

পরে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় গণ-পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এছাড়া সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। 

দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে), সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরিফ জাওয়াদ/অমিয়/

ঢাবি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়েই হবে

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
ঢাবি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়েই হবে

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার (৩০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী সোমবার (১ জুলাই) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ও কার্জনহল পরীক্ষাকেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।’

আরিফ জাওয়াদ/পপি/

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ জবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ জবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
জবি শাখা ছাত্রলীগে মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগে মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজি ও এস এম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। 

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মো. ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এস এম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির নেতারা জন্ম দিচ্ছেন নানা বিতর্কের। আড়াই বছর ধরে চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। 

রবিবার (৩০ জুন) প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আকতার হোসাইনের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও পরে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিয়েছে গণমাধ্যমটি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আকতার হোসাইন তার নিজ ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমসিকিউয়ের উত্তর অন্যজনকে দেন। উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে যায়। 

মেসেঞ্জার বার্তায় দেখা যায়, যিনি উত্তর নিচ্ছেন তিনি আকতারের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ জানান। জবাবে আকতার সব দিয়েছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান। সেই সঙ্গে এটি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আকতারের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। 

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্য এসব তো ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য না। যারা এসব করবে তারা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হোক। তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এসব অপরাধ করে সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে।’

জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহসভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আকতার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’

এ কমিটির সহসভাপতি হাবুল হোসেন পরাগ বলেন, ‘একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে সংগঠনকে কলুষিত করেই যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। জবি ছাত্রলীগ ইব্রাহীম ও আকতারের কাছে ইজারা দেওয়া হয়নি। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের মান ক্ষুণ্ন করে যখন কেউ প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

এদিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে একটি অডিও ক্লিপও। আকতারের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাকন মিয়া ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দেয় একজনকে।

ওই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, কাকন মিয়া নিজেকে আকতারের আপন মামাতো ভাই পরিচয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন এবং কল রেকর্ড যাতে লিক না হয় সেসব ব্যাপারে সতর্ক করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে কাকন মিয়াকে প্রশ্ন করা হলে যিনি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলতে বলে কল কেটে দেন।

তবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার দাবি করেন আকতার হোসাইন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার আপন ছোট ভাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ছিল। সে প্রাইভেটে পড়ছে কেন? আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে কথাগুলো বলছেন এর কোনো প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?’

অপরাধে জড়িত থাকলে আকতারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটা এসেছে। যাচাই-বাছাই চলতেছে। অনুসন্ধান করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গঠনতন্ত্র, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুজাহিদ/জোবাইদা/অমিয়/

১০৩ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম
১০৩ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: খবরের কাগজ

বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, মাঝে মাঝে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে দেশ-জাতির দুঃসময়ে কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে অন্যায়কে পিষ্ট করে যখন বিজয় কেতন ওড়ায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞাকেও ছাড়িয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়; রূপ নেয় অধিকার আদায় এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা এক পীঠস্থানরূপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) হলো সেই পীঠস্থান, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই অঞ্চলে নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকেছে, ছিনিয়ে এনেছে অধিকার, সৃষ্টি করেছে নতুন ইতিহাস, বিশ্ব মানচিত্রের বুকে বাংলাদেশ নামক দেশ সৃষ্টিতে যার অবদান কোনো অংশে কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে নেতৃত্ব দিয়ে পাশে থেকেছে। 

ব্রিটিশ শাসনামলে অবহেলিত এই ভূখণ্ডের পথপ্রদর্শক হিসেবে ও উচ্চশিক্ষা বিস্তারে ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গৌরবগাথা ১০৩ বছরে এই বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস। জানা যায়, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতবর্ষজুড়ে মুসলিম শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার এক ধরনের নবজাগরণ তৈরি হয়। যার প্রভাব পড়ে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গতেও। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এরপর ভাইসরয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ বাংলার অন্য নেতারা।

তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৬০ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণাকেন্দ্র এবং ছাত্রছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার শিক্ষক।

১০৩ বছরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগ্রাম-ঐতিহ্যের ও গৌরবময় কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় অর্জনের তালিকাও বেশ লম্বা। রাষ্ট্র সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে রাষ্ট্র সৃষ্টিতেও ভূমিকা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীর হয়তো অনেক নামি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে, তবে রাষ্ট্র সৃষ্টি এবং রক্ষায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর ৪৮ থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে নাম জড়িয়ে আছে দেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির।
বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিবি) ও ভৌত অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান (পিএমপি) নামে দুটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। যার ফলে পাল্টে যাবে এর একাডেমিক ভৌত অবকাঠামোর চিত্র। 

ভৌত অবকাঠামোগত পরিকল্পনা (পিএমপি) সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে আধুনিক গবেষণাগারসহ একাডেমিক ফ্লোর স্পেস ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ বর্গফুট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৯ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ বর্গফুট হবে। লাইব্রেরির সুবিধা ১ হাজার ৫০০ জন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার জন হবে এবং নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা ৩৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে। মাস্টারপ্ল্যানে প্রদর্শিত ভবনগুলো বহুতলবিশিষ্ট হওয়ায় ভবনের ফুটপ্রিন্ট ২৭ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২২ শতাংশে নেমে আসবে। ফলে সবুজ চত্বর ও উন্মুক্ত স্থান বৃদ্ধি পাবে। 

গেল মাসে প্রকাশিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সাময়িকী কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। যেখানে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে দেখা যায়, ২২.৫০ সামগ্রিক নম্বর নিয়ে ঢাবি এবারের অবস্থান ৫৫৪তম। গতবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে যা ছিল ৬৯১-৭০০তম। এদিকে বিগত দশ অর্থবছরে তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়েছে গবেষণার বরাদ্দের আকার। গত ১০ বছর বিশ্লেষণ করে দেখা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২.১২ শতাংশ। যদিও এই বাজেট পর্যাপ্ত না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দীন। যেখানে শিক্ষকপ্রতি গড়ে গবেষণা বাবদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ঘিরে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলাভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণ এবং রোড ডিভাইডার ও আইল্যান্ডসমূহে সাজসজ্জা করা হয়েছে।

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ
‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে পায়রা চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হবেন। স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে পায়রা চত্বরে যাবেন। সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

বন্ধ থাকবে রাস্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নীলক্ষেত ও ফুলার রোডসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে অংশ নেবে না শিক্ষক সমিতি
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।

রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি উপলক্ষে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এই ঘোষণা দেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবস, একটি আনন্দের দিন কিন্তু দুঃখের বিষয়, এমন একটি দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজপথে থাকতে হবে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তাকে জানিয়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কোনো কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অংশ নেবে না।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় স্বেচ্ছাসেবায় আত্মার আত্মীয় ‘কিন’

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
স্বেচ্ছাসেবায় আত্মার আত্মীয় ‘কিন’
কিন স্কুলে মে দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এটি কিনের ‘সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড পাবলিসিটি’ বিভাগের অন্যতম কার্যক্রম। ছবি : সংগৃহীত

সময়টা ২০০২ সাল। চারদিকে চলছিল অ্যাসিড নিক্ষেপের মহোৎসব। ছোট ছোট শিশু শিক্ষার অভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছিল। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর বিবেক তখন নাড়া দেয়। তাদের সেই বিবেকের তাড়না থেকেই জন্ম নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’। ইংরেজি শব্দ ‘কিন’-এর বাংলা ‘আত্মীয়’ থেকেই সংগঠনটির নাম রাখা হয়।

২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘আত্মার কাছে দায়বদ্ধতার হাতে রাখি হাত’, এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করে ‘কিন’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির সদস্যরা আত্মীয়ের মতো করে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মূলত পাঁচটি শাখায় তারা কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে- কিন স্কুল, রক্তদান কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা এবং চ্যারিটি। 

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে, বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের প্রস্তুত ‘কিন স্কুল’। শিশু থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৮০ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠদান করানো হয়। বিতরণ করা হয় প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সিলেট ও সিলেটের আশপাশে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে রক্তদাতা সংগ্রহ করে দেওয়া হয়। রক্তদানকে সহজ করার জন্য ‘কিন ব্লাড অ্যাপ’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে সংগঠনটি। এ ছাড়া মাঘের তীব্র শীতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ কিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ। শীতের তীব্রতায় মানুষ যখন একটু উষ্ণতার পরশ খুঁজে বেড়ান, কিনের স্বেচ্ছাসেবীরা তখন পুরোনো শীতের কাপড়ের খোঁজে ঘরে ঘরে ছোটেন। ওই কাপড় এবং নতুন কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয় শীতার্ত মানুষের হাতে। 

সামাজিক সচেতনতা নিয়েও কাজ করে কিন। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তারা যৌক্তিক উপায়ে মানুষের সামনে তুলে আনে। সামাজিক অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। বিভিন্ন দিবসে সচেতনতামূলক প্রচার চালায়। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের কেউ বিপদে পড়লে কিনের সদস্যরা এগিয়ে আসেন। এ ছাড়া কিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইং হলো চ্যারিটি।

শারীরিকভাবে অসুস্থ কোনো মানুষ যখন কিনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন, তখন তারা বই উৎসব, ফিল্ম ফেস্ট, পোস্টার ফেস্ট, পিঠা উৎসব, চ্যারিটি কনসার্টের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিকিৎসা সহায়তার তহবিল গঠন করে। এ ছাড়া বন্যা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার জন্যও কিন তহবিল সংগ্রহ করে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইনজামামুল হক ইরাম বলেন, ‘এই সংগঠনের সদস্যরা সবসময় সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ থেকে শুরু করে দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করে। মানুষের বিপদে-আপদে তার আত্মীয়রা যেমন ছুটে আসেন, তেমনি কিন সবখানে সহানুভূতিশীলতা চর্চা করে। আমরা বিশ্বাস করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুন্দর, সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারব।’

সংগঠনটির সভাপতি ইসরাত জাহান রিফা বলেন, ‘কিন মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহায়তায করে। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা স্বপ্ন দেখি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন এক বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা থাকবে।’