![স্বেচ্ছাসেবায় আত্মার আত্মীয় ‘কিন’](uploads/2024/07/01/SUST-Kin-1719804669.jpg)
সময়টা ২০০২ সাল। চারদিকে চলছিল অ্যাসিড নিক্ষেপের মহোৎসব। ছোট ছোট শিশু শিক্ষার অভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছিল। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর বিবেক তখন নাড়া দেয়। তাদের সেই বিবেকের তাড়না থেকেই জন্ম নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’। ইংরেজি শব্দ ‘কিন’-এর বাংলা ‘আত্মীয়’ থেকেই সংগঠনটির নাম রাখা হয়।
২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘আত্মার কাছে দায়বদ্ধতার হাতে রাখি হাত’, এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করে ‘কিন’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির সদস্যরা আত্মীয়ের মতো করে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মূলত পাঁচটি শাখায় তারা কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে- কিন স্কুল, রক্তদান কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা এবং চ্যারিটি।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে, বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের প্রস্তুত ‘কিন স্কুল’। শিশু থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৮০ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠদান করানো হয়। বিতরণ করা হয় প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সিলেট ও সিলেটের আশপাশে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে রক্তদাতা সংগ্রহ করে দেওয়া হয়। রক্তদানকে সহজ করার জন্য ‘কিন ব্লাড অ্যাপ’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে সংগঠনটি। এ ছাড়া মাঘের তীব্র শীতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ কিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ। শীতের তীব্রতায় মানুষ যখন একটু উষ্ণতার পরশ খুঁজে বেড়ান, কিনের স্বেচ্ছাসেবীরা তখন পুরোনো শীতের কাপড়ের খোঁজে ঘরে ঘরে ছোটেন। ওই কাপড় এবং নতুন কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয় শীতার্ত মানুষের হাতে।
সামাজিক সচেতনতা নিয়েও কাজ করে কিন। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তারা যৌক্তিক উপায়ে মানুষের সামনে তুলে আনে। সামাজিক অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। বিভিন্ন দিবসে সচেতনতামূলক প্রচার চালায়। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের কেউ বিপদে পড়লে কিনের সদস্যরা এগিয়ে আসেন। এ ছাড়া কিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইং হলো চ্যারিটি।
শারীরিকভাবে অসুস্থ কোনো মানুষ যখন কিনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন, তখন তারা বই উৎসব, ফিল্ম ফেস্ট, পোস্টার ফেস্ট, পিঠা উৎসব, চ্যারিটি কনসার্টের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিকিৎসা সহায়তার তহবিল গঠন করে। এ ছাড়া বন্যা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার জন্যও কিন তহবিল সংগ্রহ করে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইনজামামুল হক ইরাম বলেন, ‘এই সংগঠনের সদস্যরা সবসময় সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ থেকে শুরু করে দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করে। মানুষের বিপদে-আপদে তার আত্মীয়রা যেমন ছুটে আসেন, তেমনি কিন সবখানে সহানুভূতিশীলতা চর্চা করে। আমরা বিশ্বাস করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুন্দর, সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারব।’
সংগঠনটির সভাপতি ইসরাত জাহান রিফা বলেন, ‘কিন মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহায়তায করে। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা স্বপ্ন দেখি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন এক বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা থাকবে।’