![প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ জবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে](uploads/2024/07/01/ju-satrolig-1719820528.jpg)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগে মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মো. ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এস এম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির নেতারা জন্ম দিচ্ছেন নানা বিতর্কের।
আড়াই বছর ধরে চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠল।
রবিবার (৩০ জুন) প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আকতার হোসাইনের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও পরে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিয়েছে গণমাধ্যমটি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আকতার হোসাইন তার নিজ ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমসিকিউয়ের উত্তর অন্যজনকে দেন। উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে যায়।
মেসেঞ্জার বার্তায় দেখা যায়, যিনি উত্তর নিচ্ছেন তিনি আকতারের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ জানান। জবাবে আকতার সব দিয়েছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান। সেই সঙ্গে এটি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আকতারের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্য এসব তো ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য না। যারা এসব করবে তারা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হোক। তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এসব অপরাধ করে সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে।’
জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহসভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আকতার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
এ কমিটির সহসভাপতি হাবুল হোসেন পরাগ বলেন, ‘একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে সংগঠনকে কলুষিত করেই যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। জবি ছাত্রলীগ ইব্রাহীম ও আকতারের কাছে ইজারা দেওয়া হয়নি। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের মান ক্ষুণ্ন করে যখন কেউ প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এদিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে একটি অডিও ক্লিপও। আকতারের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাকন মিয়া ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দেয় একজনকে।
ওই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, কাকন মিয়া নিজেকে আকতারের আপন মামাতো ভাই পরিচয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন এবং কল রেকর্ড যাতে লিক না হয় সেসব ব্যাপারে সতর্ক করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে কাকন মিয়াকে প্রশ্ন করা হলে যিনি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলতে বলে কল কেটে দেন।
তবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার দাবি করেন আকতার হোসাইন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার আপন ছোট ভাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ছিল। সে প্রাইভেটে পড়ছে কেন? আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে কথাগুলো বলছেন এর কোনো প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?’
অপরাধে জড়িত থাকলে আকতারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটা এসেছে। যাচাই-বাছাই চলতেছে। অনুসন্ধান করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গঠনতন্ত্র, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুজাহিদ/জোবাইদা/অমিয়/