![১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেল টাঙ্গাইলের বিপ্লব-নাজমুল-সোমারা](uploads/2024/03/14/1710392216.Tangail-police.jpg)
‘বাবা ইটভাটায় কাজ করে সেই ৩০ বছর ধরে। কত কষ্ট করে বাবা দুই ভাইকে যে মানুষ করতাছে তা বলার মতো না! এবার মনে হচ্ছে বাবার কষ্টের ফল একটু হলেও দিতে পারব। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। আর সেই ১২০ টাকায় আবেদন করে যে আমার নিজ যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হয়ে গর্ববোধ করছি।’
কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইটভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেনের ছেলে সদ্য পুলিশে নিয়োগ পাওয়া বিপ্লব হোসেন।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিল শেডে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এ সময় ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি। উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা সহকারী পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিপ্লবের মতো গোপালপুর উপজেলার অটোচালক আইয়ুব নবীর ছেলে নাজমুল হোসেনও পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
নাজমুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘জীবনের কষ্টগুলো হয়তোবা দূর হবে এখন। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে এই কষ্টের শেষ হবে কবে। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে বাবার কষ্টটা একটু হলেও কমাতে পারব।’
নাজমুলের বাবা আইয়ুব নবী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম ছেলে পড়াশোনা করে কিছু করতে পারবেনা কি না এই ভয়ে। কারণ মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলেই টাকা লাগে। কিন্তু মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর স্বচ্ছভাবে চাকরির পরীক্ষার জন্য।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়ার মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মতো পুলিশ সদস্য হব, তাই ছোটবেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মতো পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তান মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার তেমনি আমিও সেবা করব।’
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা একদম স্বচ্ছ ছিলেন। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোনো প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিল না। প্রথমে ৪ হাজার ২০০ জন আবেদন করেছিল, পরে ৩ হাজার ৮০০ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয় ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে চূড়ান্তভাবে ৯০ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছি এবং অপেক্ষমাণ তালিকায় ১৩ জনকে রেখেছি। প্রাথমিকভাবে মোট ১০৩ জনকে আমরা নিয়োগ দেব।’
জুয়েল রানা/ইসরাত চৈতি/অমিয়/