যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়ায় গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি অনিবন্ধিত ক্লিনিকে অবহেলায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মৃতের স্বজনরা ক্লিনিকে ভাঙচুর চালিয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতের স্বজনরা জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে যশোর সদর উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী লিমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। এ সময় এক ধাত্রীর পরামর্শে তাকে রূপদিয়া বাজারের গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়।
এরপর তাকে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ও রক্তের ব্যবস্থা না করেই সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় প্রসূতি মারা গেলে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে রক্তস্বল্পতার কারণে জ্ঞান ফিরছে না জানিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে খুলনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন।
মারা যাওয়ার সংবাদে স্বজনরা ক্লিনিকে গিয়ে তালা ঝোলানো দেখতে পায়। পরে দুপুর ১টার দিকে নবজাতক ছেলেসন্তানটি মারা গেলে স্বজনরা ওই ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ক্লিনিকের দালালচক্রের সদস্য নরেন্দ্রপুর গ্রামের এক নারী ১২০০ টাকার বিনিময়ে রিমা বেগমকে সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কৌশলে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করে। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক নুরছালী তুলি।
রিমা বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে রিমা খাতুন সিজার করার সময় মারা গেছেন। সিজারিয়ান অপারেশনের পরে রিমা বেগম বেঁচে আছে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে তালা মেরে দেয় এবং খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরবর্তী সময়ে সেখানে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, রিমা অনেক আগেই মারা গেছেন। আর দুপুরে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মিহির মণ্ডল বলেন, ‘প্রসূতির মৃত্যুর পর স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের লোকজন গ্রামীণ ক্লিনিক ঘেরাও করে। এ সময় ক্লিনিকের লোকজন তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। পরে নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেলে একপর্যায়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশের একটি টিম নিয়ে আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, পরিবার যেহেতু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ করছে সেহেতু লাশ উদ্ধার করে আমরা ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, বিষয়টি জেনে ওই ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রামীণ ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা আছে।
এইচআর তুহিন/ইসরাত চৈতী/অমিয়/