থানায় জব্দ করা চোরাই চিনি। ছবি : খবরের কাগজ
চিনির চোরাই পথে এখন মাদকও আসছে। গত এক সপ্তাহে দুটি অভিযানে চোরাই চিনির রুটে ফেনসিডিল ও ভারতীয় মদ উদ্ধার করা হয়েছে। সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জৈন্তাপুরে চোরাই চিনি ধরতে পুলিশের অভিযানে মঙ্গলবার (২৫ জুন) ৪২ বস্তা চোরাই চিনির সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৫ বোতল মদ। এ ছাড়া সিলেটে চোরাই চিনি পাচারের সব কটি লাইনে ধরপাকড় চলায় চোরাকারবারিরা নতুন রুটে চোরাই চিনি পাচার করছে। সিলেটের বিশ্বনাথে সোমবার রাতে ২২০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।
জৈন্তাপুর থানা সূত্রে জানা যায়, নৌপথে চোরাই চিনির চালান যাচ্ছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টায় নয়াগাং নদীর চাঙ্গিল নামক স্থানে এসআই মো. আশরাফুল আলম ও এসআই নাইমুল ইসলামের নেতৃত্বে জৈন্তাপুর থানার একদল পুলিশ নয়াগাং নদী এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় একটি নৌকা নদীতীরে ভিড়িয়ে বাহকরা পালিয়ে যায়। নৌকায় তল্লাশি চালিয়ে ৪৫ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করা হয়।
একই নৌপথে নজরদারির সময় সকাল সাড়ে ৮টায় জৈন্তাপুর ইউনিয়নসংলগ্ন চাঙ্গিল ব্রিজের নিচে দুটি বারকি নৌকায় চোরাই চিনির বস্তা দেখে অভিযান চালিয়ে ৪২ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যায় চোরাকারবারিরা।
জৈন্তাপুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘চোরাকারবারিদের নৌপথ ব্যবহারের খবর পেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চোরাই চিনির পথে মাদক আসছে- এরকম সংবাদও পুলিশের কাছে রয়েছে। পৃথক দুটি অভিযানে ৪৫ বোতল ভারতীয় মদ ও ৪২ বস্তা চিনি জব্দ করে দুটি মামলা করা হবে। চোরাকারবারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলবে।’ এর আগে গত রবিবার রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের টহলে ধরা পড়েছিল ফেনসিডিলসহ দুই মাদককারবারি।
অন্যদিকে বিশ্বনাথ থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ২২০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। বিশ্বনাথ রুটে এই প্রথম থানা পুলিশ চোরাই চিনি জব্দ করেছে। এ সময় ট্রাকচালক মিজানুর রহমান সুমনকে (২৮) আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাকে চোরাই চিনির বাহক বলে ধারণা পুলিশের। তার নাম বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গগাউড়া গ্রামে।
পুলিশ জানায়, রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কের বাইপাস রোড সংলগ্ন পেট্রল পাম্পের সামনে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় একটি ট্রাক থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে চোরাই চিনি বস্তা পাওয়ার পর চালকসহ ট্রাকটি থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় ট্রাকে থাকা দুই চোরাকারবারি পালিয়ে যায়। জব্দ করা ২২০ বস্তার প্রতিটিতে ৫০ কেজি করে চিনি রয়েছে, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। বস্তার গায়ে বাজার ও মোড়কজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম রয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার ‘সুবহা ফুড প্রোডাক্টস’।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, চোরাই চিনি ধরপাকড়ে সিলেটের প্রায় সব পথে নজরদারি থাকায় নতুন কৌশল ও নতুন রুটের সন্ধান করছে সংঘবদ্ধ চোরা কারবারিরা। এ ক্ষেত্রে ‘লামাকাজী-রামপাশা-বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়ক’ নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে। কৌশল হিসেবে ভারতীয় চিনির প্যাকেট পরিহার করে দেশীয় চিনির নানা নামের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রউফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘নতুন রুট ব্যবহার করার সংবাদ পেয়ে বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কের বাইপাস রোডসংলগ্ন পেট্রল পাম্পের সামনে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছিল এবং একটি ট্রাক থামিয়ে তল্লাশির সময় ২২০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকচালককে আটক করে মামলা হয়েছে।’