আর মাত্র এক দিন পরই ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু কেনাকাটায় সবাই এখন ব্যস্ত। তবে গাইবান্ধায় এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট। জেলার প্রধান গরুর হাটগুলোতে অসংখ্য পশু উঠলেও বেচাকেনা তেমন জমেনি। গরুর প্রত্যাশিত দাম ও বিক্রি নিয়ে খামারি ও ব্যবসায়ীরা চিন্তিত।
খামারিরা বলছেন, গত বছর এই সময়ে খামার থেকেই বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়েছিল। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। কিন্তু এবার বেচাকেনা একেবারেই কম। ফলে পশুর হাটে নিয়ে যেতে হচ্ছে। হাটগুলোতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর ভিড় থাকছে। জেলায় সাধারণ ক্রেতা কমেছে এবং অন্য এলাকা থেকে গরু ব্যবসায়ীও কম আসছেন হাটে।
গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট ১৬ হাজার ৭৫৯টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৫৭৫, পলাশবাড়ীতে ২ হাজার ৫১৮, গোবিন্দগঞ্জে ২ হাজার ৬০৫, সুন্দরগঞ্জে ২ হাজার ৮৬৭, সাদুল্যাপুরে ২ হাজার ১১৫, সাঘাটায় ২ হাজার ২২ ও ফুলছড়িতে ২ হাজার ৫৭টি খামার রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে জেলায় এবার কোরবানির জন্য ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮১টি গবাদিপশু মজুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৬৩ হাজার ২৪৬টি, মহিষ ১৪৭টি, ছাগল ও ভেড়া ৮১ হাজার ৯৮৮টি। আর কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫১টি। চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত থাকবে ২২ হাজার ৩৩০টি পশু। জেলার সাত উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট বসেছে ১৫৫টি।
সরেজিমনে ১০টি হাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকআপ ও হেঁটে লোকজন পশু নিয়ে আসছেন। প্রচণ্ড গরমেও লোকজন গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে দেশি জাতের গরু বেশি দেখা গেছে। ঘুরে ঘুরে লোকজন গরু দেখছেন। হাটগুলোতে টোল (খাজনা) বেশি। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মোট ১ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন ইজারাদারা।
গরু বিক্রেতারা বলছেন, ‘এক দিন পরই ঈদ। কিন্তু ক্রেতারা পশু পছন্দ করতে যেভাবে যাচাই-বাছাই করছেন, সেভাবে কিনছেন না। ঘুরেফিরে দেখছেন, দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সাধারণ ক্রেতাই বেশি। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি।’
সদর উপজেলার খামারি জুয়েল মিয়া বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি কম। কোরবানি উপলক্ষে খামারে ৪৫টি ষাঁড় প্রস্তুত রয়েছে। এবার গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় একটি গরুর পেছনে যে খরচ হয়, তা পুষিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদুল আজহার সময় প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আসে। ফলে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’
নয়ন সরকার নামে আরেক খামারি বলেন, ‘বাজারে গরুর দাম এবার কম। ঈদে বিক্রির জন্য খামারের ১৮টি গরু প্রস্তুত করেছিলাম। এখন পর্যন্ত ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে।’
গোবিন্দগঞ্জের নাকাই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তো চাকরি নেই। ধান বিক্রির টাকা দিয়েই কোরবানি দিতে হয়। কিন্তু প্রতিবছরের মতো এবারও ধানের দাম কম। ফলে কোরবানিদাতার সংখ্যাও কম।’
পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামের সুলতান খন্দকার বলেন, ‘গত বছর ভাগে গরু কোরবানি দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার পারছি না। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তবে ধান আর ভুট্টার দাম কম। কোরবানির জন্য ছাগল বা ভেড়া কিনতে হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ বছরও দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেশি। এবার জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। প্রত্যেকটি হাটে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম রয়েছে। আশা করছি, ব্যবসায়ী ও খামারিরা কোনো সমস্যা ছাড়াই পশু বিক্রি করতে পারবেন।’