![গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাকে নিয়ে ধোঁয়াশা](uploads/2024/06/16/Rhuiyanga-1718505911.jpg)
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধের ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ছেই। গুলিবিদ্ধ ওই রোহিঙ্গা যুবকের নাম আলী জোহার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঘটনার দিন ওই নৌরুট দিয়ে সেন্ট মার্টিন থেকে কোনো ট্রলার নাফ নদ হয়ে টেকনাফ আসেনি। মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করে থাকতে পারে এই রোহিঙ্গা।
তবে ওই রোহিঙ্গার দাবি, সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে ফেরার পথে মায়ানমারের অংশ থেকে আকস্মিক ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন।
আলী জোহারের দেওয়া তথ্যমতে, তার পিতা হামিদ হোসেন। তিনি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমার থেকে পালিয়ে পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
গত শুক্রবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলী জোহার খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিন থেকে চারটি ট্রলারে করে দ্বীপে আটকা পড়া লোকজনকে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেই ট্রলারগুলোতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দ্বীপে আটকে থাকা সবাই উঠতে পারেননি। পরে ওই দিন বিকেলে ৩০ জন একজোট হয়ে একটি ট্রলার ভাড়া করে রওনা দেন। শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাশ থেকে কূলে ওঠার কথা থাকলেও ট্রলারের মাঝি শাহপরীর দ্বীপের পূর্বপাশের ঘাটের দিকে তাদের নিয়ে যান। একপর্যায়ে তাদের বহনকারী ট্রলারটি নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে পৌঁছালে আকস্মিক মায়ানমারের জলসীমা থেকে দুটি ট্রলার বের হয়ে সীমানার কাছাকাছি এসে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সেই গুলি এসে লাগে তার ডান পায়ে।’
আলী জোহার দাবি করেন, নাফ নদের ৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। আর গুলি লাগার পর অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আর কিছু বলতে পারেন না। পরে জ্ঞান ফিরে দেখেন উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে গত শুক্রবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। একমাস আগে ক্যাম্প থেকে কাজের জন্য সেন্ট মার্টিনে যান বলে দাবি করেন তিনি।
তবে আলী জোহারকে কোনো দিন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেন্ট মার্টিন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার চারটি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফ যায়নি। নাফ নদে গোলাগুলি হচ্ছে তাই কোনো ট্রলার নাফনদ হয়ে টেকনাফ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আলী জোহার হয়তো মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন।’
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, গত বৃহস্পতিবার বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের মালিকানাধীন ৪টি ট্রলারে করে প্রায় ৩০০ মানুষ বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ পৌঁছায়। এর বাইরে আর কোনো ট্রলার নাফ নদ কিংবা বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ আসেনি। সব মাধ্যম থেকে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। এখন গুলিবিদ্ধ দাবি করা রোহিঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি হয়তো মায়ানমারের অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধি হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এখন চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, সেন্ট মার্টিন থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ৪টি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফ আসেনি। এখন গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে টেকনাফে আসার পথে গুলিবিদ্ধি হয়েছে এই ধরনের কোনো তথ্য নেই।
এদিকে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুকে) নানা গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এতদিন কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে দ্বীপটিতে যেতে বাংলাদেশের নৌযানগুলো নাফ নদের মিয়ানমারের কিছু অংশ ব্যবহার করত। কিন্তু মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই রুট কিছুটা সরিয়ে আনা হয়েছে। আর এটাকেই কেন্দ্র করে ফেসবুকে নানা গুজব ছড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তবে এসব গুজবকে ভিত্তিহীন বলছে প্রশাসন।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/