![যশোরে বাবা-মা হত্যায় ছেলে, ভাবী হত্যায় দেবরের ফাঁসি](uploads/2024/07/01/Jessore-1719807560.jpg)
যশোরে বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ছেলে ও ভাবীকে হত্যায় দেবরের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
রবিবার (৩০ জুন) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৭ম) আদালতের বিচারক জুয়েল অধিকারী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৪র্থ) আদালতের বিচারক সুরাইয়া সাহাব এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার মহির-আনোয়ারা দম্পতি হত্যা মামলায় ছেলে মিলন উদ্দিনকে (৩২) মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।
আদালতের পেশকার শাহরিয়ার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ হত্যা মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি মিলন উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। সে তার বাবা-মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াতো। তাকে কাজকর্ম করার কথা বললেও সে শুনতো না। ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি তার বাবা মহির উদ্দীনের (৬২) কাছে হাত খরচের জন্য দুই হাজার টাকা চায়। টাকা না দেওয়ায় মিলন ঘরে থাকা ধারালো গাছি দাঁ দিয়ে বাবাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় তার মা আনোয়ারা বেগম (৫৫) ঠেকাতে গেলে মিলন তাকেও কুপিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে মহির ও আনোয়ারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় মিলনের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন তার ভাই হুমায়ুন কবির।
আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক মিলনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণা শেষে বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে বাঘারপাড়া উপজেলার গৃহবধূ জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি হত্যা মামলায় তার দেবর বিমান বাহিনীর সাবেক কর্পোরাল প্রভোস্ট মোহাম্মদ শাহবুদ্দিনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার অপর দুই আসামি স্বামী জুলফিকার আলী ও শাশুড়ি ফরিদা বেগমকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। ঘটনা নিশ্চিত করছেন এপিপি আসাদুজ্জান আসাদ।
আসামি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বাঘারপাড়া উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের মৃত মোশারফের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল স্বামী জুলফিকার আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন তুলি। এ সময় দেবর শাহাবুদ্দিন তার ঘরে প্রবেশ করলে শাশুড়ি ফরিদা তার ঘরের দরজা আটকে দেয়। এরপর শাহবুদ্দিন ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে তুলিকে কুপিয়ে জখম করে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে শাহাবুদ্দিন ও তার মা পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা তুলিকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করে। পরে সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরের দিন দুই সন্তানের মা তুলি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের শহিদুল বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তুলির দেবর, শাশুড়ি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তুলির স্বামী জুলফিকার আলীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়কে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এ হত্যায় তার স্বামীর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।
আদালত শাহাবুদ্দিনকে ফাঁসি ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মামলার অপর দুই আসামি স্বামী জুলফিকার আলী ও শাশুড়ি ফরিদা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এ রায়ে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট নন মামলার বাদীপক্ষ। নিহত তুলির ভাই নূর আলম জানান, তুলির স্বামী জুলফিকার আলীও সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। চার্জশিটে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে ওই দুই আসামির শাস্তি নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।
এইচ আর তুহিন/জোবাইদা/অমিয়/