ঢাকা ১২ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

বকেয়া অর্থ ছাড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি বিকেএমইএ

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৭ পিএম
বকেয়া অর্থ ছাড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি বিকেএমইএ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর বিপুল পরিমাণ ক্যাশ ইনসেনটিভ না নগদ সহায়তা পাওনা রয়েছে। এই অর্থ দ্রুত ছাড় করার জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিকেএমইএ। জানা যায়, নগদ সহায়তার চার হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে সরকারের কাছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সই করা চিঠিটি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়।

চিঠিতে বিকেএমইএ জানিয়েছে, বর্তমানে সর্বমোট চার হাজার কোটি টাকারও বেশি নগদ সহায়তা বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংকে বকেয়া দাবি রয়েছে। এ কারণে চরম আর্থিক সংকটে ফেলে দিয়েছে খাতটিকে। চলতি ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক ক্লোজিং। এতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের ওপর ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এতে দ্রুত এ তহবিল ছাড় করা না হলে বস্ত্র খাতে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

বিকেএমইএ মন্ত্রণালয়কে আরও জানায়, বর্তমানে টিকে থাকার সংগ্রামে দেশের শিল্প খাত হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও পোশাক খাতের মজুরি কাঠামো বাড়ানো হয়েছে অস্বাভাবিক হারে। বর্ধিত এ বেতন পরিশোধের সক্ষমতা নেই (বর্তমান পরিস্থিতি প্রেক্ষাপটে) অধিকাংশ গার্মেন্ট মালিকের। এ কঠিন পরিস্থিতিতে যথাসময়ে নতুন কাঠামোর বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে সরকারের (অর্থ মন্ত্রণালয়) বিশেষ সহযোগিতা ছাড়া এ খাতে চাপ সামলে ওঠা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। গত মাসে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার পরে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এ অনুরোধ করা হলো।

নির্ধারিত সময়ে মালিকানা পরিবর্তন করতে পারেনি ইয়াকিন পলিমার

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
নির্ধারিত সময়ে মালিকানা পরিবর্তন করতে পারেনি ইয়াকিন পলিমার
ছবি: সংগৃহীত

অনুমতি দেওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ে মালিকানা পরিবর্তন করতে ব্যর্থ দেশের পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড। এতে দ্বিতীয়বারের মতো সময় বৃদ্ধি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১২ মে ইয়াকিন পলিমারের উদ্যোক্তা পরিচালকের ২ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৫ শেয়ার ক্যাপিটা প্যাকেজিং সলিউশনসে স্থানান্তরে প্রাথমিক সম্মতি দেয় বিএসইসি। শর্তানুসারে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা কোম্পানিটি শেয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ও তিনজন ব্যক্তির নামে হস্তান্তর করতে হবে। তথ্যানুসারে, ইয়াকিন পলিমারের উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার ক্যাপিটা প্যাকেজিং সলিউশনস লিমিটেড, চাকলাদার রেজাউনুল আলম, মোহাম্মদ হারুনর রশিদ ও দিদারুল আলমের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। 

শেয়ার ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) অনুসারে, প্রতি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে সাতক্ষীরা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৬ শেয়ার, ইয়াকিন অ্যাগ্রো প্রডাক্টস লিমিটেডের ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৩৯, কাজী আনোয়ারুল হকের ২৭ লাখ ২৩ হাজার ১০৮, কাজী নাজিবুল হকের ১৯ লাখ ১১ হাজার ১৭২, এস এম আকতার কবিরের ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮৫, জুলিয়া পারভীনের ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৫, মালিহা পারভীনের ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৬, এস এম মনিরুজ্জামানের ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪১৫, সাবরিনা সামসাদের ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৯, এস কে জামিল হোসেনের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮১ ও কাজী এমদাদুল হকের ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮০৯ শেয়ার নতুন মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

বিএসইসির শর্তানুসারে পিপি ওভেন ব্যাগ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে ৩০ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে ইয়াকিন পলিমারের উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার নতুন মালিকানায় হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য দ্বিতীয় বারের মতো সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপর আর সময় বৃদ্ধি করা হবে না। এটি চূড়ান্ত বলে তারা জানান। নতুন সময়ের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিতে তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে কোনো মুনাফা পাচ্ছে না। 

ইয়াকিন পলিমারের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ারুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন মালিকদের কাছে শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। বেশ কিছু জটিলতার কারণে এমন হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে তিনি আশা করছেন যেসব জটিলতা রয়েছে তা আগামী এক মাসের মধ্যে কেটে যাবে। নির্ধারিত এক মাসের মধ্যে তাদের হাতে থাকা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে পুরো প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে’। প্রক্রিয়াটির একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।

তথ্যে দেখা যায়, ১২ মে ২০২২ সালে ইয়েকিন পলিমার শেয়ার স্থানান্তরের জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পায়। এমন সিদ্ধানের পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা স্থানান্তর-সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যেও ২০২২ সালের জানুয়ারির পর শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। 

২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমবারের জন্য সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মালিকানা পরিবর্তন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকরা। চলতি বছরের ৯ জুন কোম্পানিটি শেয়ার স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য বিএসইসি নতুন করে এক মাসের সময় বৃদ্ধি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২৩ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮০ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১৭ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৩৫ পয়সায়।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৭টি শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৫২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

চন্দ্রঘোনা ফেরি বিড়ম্বনায় যোগাযোগ ও বাণিজ্য ব্যহত

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
চন্দ্রঘোনা ফেরি বিড়ম্বনায় যোগাযোগ ও বাণিজ্য ব্যহত
রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে চন্দ্রঘোনার কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচল করছে। খবরের কাগজ

রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে চন্দ্রঘোনা ফেরির ওপর নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষ। রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার কয়েক হাজার ছোট-বড় যানবাহন, ব্যবসা-বাণিজ্য আর লক্ষাধিক মানুষের প্রতিদিনের চলাচল এ ফেরির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ফেরি বিড়ম্বনায় যাতায়াত, জরুরি রোগী, কৃষিপণ্য ও মৌসুমি ফল পরিবহন নিয়ে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। 

২০১৭ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট পরিদর্শন শেষে সেতু অথবা টানেল নির্মাণের আশ্বাস দিলেও দীর্ঘ সাত বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ফেরির তত্ত্বাবধায়ক রাঙামাটি সড়ক বিভাগ বলছে, সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

চন্দ্রঘোনা ফেরি দিয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাঙামাটি-কাপ্তাই-রাজস্থলী ও বান্দরবান জেলার মানুষই চলাচল করেন বেশি। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পর্যটকদের জন্য তিন পার্বত্য জেলা ঘুরে কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য এই পথটি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু প্রতিদিনই ফেরির বিড়ম্বনায় পড়ছেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছোট সাম্পানে যাতায়াত করতে গিয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাদের। আবার বর্ষায় পাহাড়ি ঢল, অস্বাভাবিক জোয়ার ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে পড়ে ফেরি চলাচল। এতে যোগাযোগ ও কৃষি বাণিজ্যেও দেখা দেয় ভোগান্তি। 

তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই প্রতিদিন ফেরি দিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিদিনের ভোগান্তি নিয়ে সঞ্চিত ক্ষোভের কথাই জানালেন তাদের কয়েকজন। মো. সেলিম নামে একজন বলেন, ‘ফেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় চলে যায়। একটা ব্রিজ হলে আমাদের দুর্ভোগ কমে যেত, অনেক উপকার হতো।’ 

ইসমাইল নামে আরেকজন বলেন, ‘ব্রিজ না থাকায় রোগী নিয়ে মানুষ রাতে দিনে অনেক কষ্ট হয়। পার হতে না পেরে অনেক রোগী মারাও যায়।’

সড়কপথের যাত্রী রাজস্থলী উপজেলার বাসিন্দা চন্দ্রমোহন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘ফেরির জন্য সময়মতো গন্তব্যে যাওয়া যায় না। যাত্রী কম হলে ফেরি চলাচল করে না। আবার বেশি হলেও জ্যামে আটকে থাকতে হয়, এভাবে ২-৩ ঘণ্টাও লেগে যায়।’ 

রাঙামাটির বাসিন্দা সুজিত চাকমা বলেন, ‘জোয়ার এলে পন্টুন ডুবে যায়। তখন পানি না নামা পর্যন্ত ফেরিতে পার হতে পারি না। যদি নৌকায় যেতে চাই তাহলে পুরো নৌকা রিজার্ভ করতে হয়। একটি মোটরসাইকেল পার করতে ২০০ টাকা খরচ হয়। এটা একটা বড় সমস্যা।’

১৯৮৪ সালে চন্দ্রঘোনা ফেরি সার্ভিস চালু করে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ভোগান্তি না কমায় দীর্ঘ চার দশক ধরে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছেন স্থানীয়রা। তবে ২০১৭ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট পরিদর্শন শেষে সেতু অথবা টানেল নির্মাণের আশ্বাস দিলেও দীর্ঘ সাত বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সড়কের সঙ্গে এই সেতুতেই যুক্ত হবে বরক্লের ঠেগামুখ স্থলবন্দর সড়ক। যা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে শক্তিশালী অংশীদার হয়ে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ। তাই আর আশ্বাসের ইন্দ্রজাল নয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণের বাস্তবায়ন চান স্থানীয় বাসিন্দারা। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘ফেরি পারাপার করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। বর্ষকালে নদী পার হওয়া খুব কষ্টদায়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকেই মারা গেছেন নৌকা দুর্ঘটনায়। রাঙামাটি, বান্দরবান ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, প্রাণের দাবি ফেরির পরিবর্তে একটি সেতুর।’

রাইখালী বাজারের বাসিন্দা শওকত হোসেন বলেন, ‘দৈনিক কয়েক হাজার যানবাহন আর লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে ফেরি দিয়ে। ব্রিজটা হয়ে গেলে দুর্ভোগ থাকবে না। ব্রিজ না থাকায় আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাঘাত ঘটছে। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়, তাহলে ব্রিজ হয়ে যায়। আমাদের মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ দেশে অনেক কাজ করেছেন, যদি ব্রিজটার দিকে একটু নজর দেন, তাহলে মানুষ অনেক শান্তি পায়।’

ফেরির তত্ত্বাবধায়ক রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং থেকে কর্ণফুলী নদীর ওপর চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচলের স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। 

বর্তমানে কনসালটেন্সি স্টাডি করছে, তারপর ব্রিজের ডিজাইন, লে-আউট এবং ডিপিপি তৈরি হবে। আমাদের জানানো হয়েছে, ঢাকা হেডকোয়ার্টার থেকে খুব শিগগিরই তারা স্টাডি সম্পন্ন করবেন এবং প্রকল্প তৈরি করবেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাঙামাটির সঙ্গে বান্দরবান ও সীমান্ত সড়কের যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন হবে এবং এ অঞ্চলের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে।’

'ঝামেলা কিনি' দোকানে ঘুরল ভাগ্যের চাকা

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
'ঝামেলা কিনি' দোকানে ঘুরল ভাগ্যের চাকা
ময়মনসিংহের বলাশপুর এলাকায় সড়কের পাশে পুরোনো জিনিসপত্র কেনার দোকান। ছবি: খবরের কাগজ

সব মানুষই ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। তবে এমন একজন আছেন যিনি ঝামেলা কেনাবেচা করেন। আর এর মাধ্যমেই প্রতি মাসে আয় করেন লাখ টাকা। তার নাম সায়েম আহমেদ। ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। মানুষের ঘরের পুরোনো চেয়ার, টেবিল, টেবিল ফ্যান, চার্জার, তোশক, ফার্নিচার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ কিংবা ঘরের যেকোনো ধরনের আসবাবপত্র কম দামে কিনে আনেন তিনি। এরপর এগুলো মেরামত করে কিছুটা লাভে বিক্রি করেন। 

ব্যবসাটি এমনই পরিচিতি পেয়েছে যে, প্রতিদিন স্থানীয় ক্রেতাসহ দূর থেকেও লোকজন আসেন তার দোকানে। এর মধ্যে কেউ কেউ পছন্দের পণ্য কিনে নেন। আবার অনেকে মোবাইল নম্বরে কল দিয়েও পণ্য কেনেন। এতে এক সময় অভাব অনটনে থাকা সায়েম এখন স্বচ্ছল। শুরুতে তিনি একা কাজ করলেও ব্যবসার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়েছেন কর্মচারীও। বর্তমানে তার দোকানে নিয়মিত সাত-আটজন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই কর্মচারীরা তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করেন।

সায়েম আহমেদের গড়ে তোলা দোকানটির অবস্থান ময়মনসিংহ নগরীর বলাশপুর এলাকায় সড়কের পাশে। ২০০০ সালে তার বাবা মারা যান। তখন তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করে মাত্র স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরার চাপ আসে তার ওপর। তখন ব্যবসা করার কথা ভাবেন তিনি। কিন্তু বেশি অর্থ বিনিয়োগের সামর্থ্য তার ছিল না। তখন পুরোনো জিনিস কিনে বিক্রির ভাবনা আসে তার মাথায়। সেই ভাবনা থেকেই ২০০১ সালে তার ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ দোকানের যাত্রার মাধ্যমে বেচাকেনা শুরু। যা চলছে এখনো।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি সারি দোকান। এর মধ্যে ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ লেখাসংবলিত সাইনবোর্ডে নজর সবার। এই দোকানে কী কী আছে কেউ তা দেখতে এসছেন। আবার কেউ কিনতে এসেছেন। ঠিকঠাক দামে পণ্য কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা।

এই দোকান থেকে একটি পুরোনো কম্পিউটার কিনেছেন ফয়সাল নামের এক যুবক। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল একটি কম্পিউটার কিনে টাইপিংসহ ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ শিখব। কিন্তু টাকার অভাবে নতুন কিনতে পারছিলাম না। পরে ঝামেলা কিনি দোকান থেকে টেবিলসহ কম্পিউটার ৯ হাজার টাকায় কিনেছি। কম্পিউটারটি ভালো হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ শিখতে পারছি।’

রুমানা খাতুন নামের আর এক ক্রেতা বলেন, ‘কাঠের তৈরি ভালো মানের একটি সোফার দাম অনেক। এই দোকানে ভালোমানের পুরোনো সোফা রয়েছে জানতে পেরে যোগাযোগ করি। পরে নতুনের মতোই দেখতে পুরাতন সেগুন কাঠের সোফা সেট ১৪ হাজার টাকায় কিনেছি। এই সোফা সেটটি বাজারে নতুন অবস্থায় কিনলে গুনতে হতো কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা।’

ঝামেলা কেনাবেচা করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হওয়ায় খুশি সায়েম আহমেদ। তবে তার স্বচ্ছল হওয়ার আগের রাস্তা পাড়ি দেওয়া এতটা সহজ ছিল না। সায়েম আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে একটি ব্যবসা করার জন্য মনস্থির করি। কিন্তু আমার কাছে তেমন টাকা ছিল না। ভাবতে থাকলাম কী করা যায়। 

তখন দেখলাম অনেক মানুষ ফার্নিচার পরিবর্তন করে। সে ক্ষেত্রে আমি এই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং কম টাকায় সেগুলো কিনে তা মেরামত করে একটু বেশি দামে বিক্রির চিন্তা করি। তারপর প্রচারের জন্য নগরীর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো, সংবাদপত্রের সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করাসহ নানাভাবে প্রচার চালাই। এরপর ধীরে ধীরে পরিচিতি পেয়ে যাই। পরে বেচাকেনা বাড়ার মধ্যেই ফেসবুক পেজ খুলেও প্রচার করি। এখন মানুষ সরাসরি যোগাযোগ করার পাশাপাশি অনলাইনেও যোগাযোগ করেন।’

দোকানের নাম এমন কেন, প্রশ্নে সায়েম বলেন, ‘মানুষ নিজের ঘরের পুরনো আসবাবকে তো ঝামেলাই মনে করেন। আমি সেসব ঝামেলাই যেহেতু কিনে আনি, তাই ব্যবসার নাম রেখেছি ‘ঝামেলা কিনি’। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে পুরনো আসবাবপত্র কিনে সেগুলোকে মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে পুনরায় বিক্রি করি।’

তিনি বলেন, ‘পুরোনো জিনিসের পাশাপাশি বর্তমানে কাঠের সব ধরনের নতুন আসবাবপত্রও বিক্রি করা হয়। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কর্মচারী দিয়ে এগুলো তৈরি করি।’ 

গোপালগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে মাদ্রাজি ওলকচু চাষ

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
গোপালগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে মাদ্রাজি ওলকচু চাষ
মাদ্রাজি ওলকচু

গোপালগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঔষধি গুণসম্পন্ন মাদ্রাজি ওলকচু চাষ। এ ওলকচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। তাই মাদ্রাজি ওলকচু চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা। তবে সরকারি সহায়তা পেলে পুরো জেলায় এর চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী গ্রামে ১৫টি প্রদর্শনীতে ৬৫ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজি ওলকচুর চাষ করা হয়। গত আগস্টে এসব ওলকচু খেত থেকে তুলে বিক্রি করা হয়। এ বছর সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী ও মানিকদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্তত ১০০ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজি ওলকচুর আবাদ হয়েছে। প্রতি শতাংশে এ ওলকচু ১৬০ থেকে ১৬৫ কেজি ফলন দেয়। যার বাজার দর ৭ হাজার ৩০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি শতাংশে মাদ্রাজি ওলকচু উৎপাদন খরচ তিন হাজার টাকা বাদে লাভ হয় ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর খেতে ওলকচুর ভালো ফলন দেখা দিয়েছে। কৃষকরা ধারণা করছেন এ বছরও ওলকচুর ভালো ফলন হবে। আগামী ২ মাস পর এসব ওলকচু তুলে বিক্রি করা হবে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী গ্রামের কৃষাণি সাধনা মন্ডল বলেন, ‘বাড়ির পতিত জমিতে ওল চাষ করা যায়। এতে তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বীজ, সার, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গত বছর মাদ্রাজি ওলকচু দুই শতাংশ পতিত জমিতে চাষ করি। উৎপাদিত ওল ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করি। খরচ বাদে এতে ৮ হাজার ৫০০ টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর মাদ্রাজি ওলকচু চাষ করেছি। আশা করছি এ বছরও ওল কচুর ভালো ফলন হবে।’

একই গ্রামের কৃষাণি লিপি হীরা, শিখা হীরা ও শিল্পী রায় বলেন, ‘মাদ্রাজি ওল কচুর রং সাদা এবং এটি আঠাল। খেতে খুব সুস্বাদু। দেশী ওল কচুর তুলনায় মাদ্রাজি ওল কচু দ্বিগুণেরও বেশি ফলন দেয়। আমরা মাদ্রাজি জাতের ওল কচু গত বছর চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। তাই এ বছরও এ জাতের লাভজনক ওল কচুর চাষ করেছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ‘খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের কারণে এখন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচু জাতীয় ফসলের সংযোজন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপদ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের ওপর সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ও কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষ বিষয়ে কৃষকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরছেন। কৃষকরাও বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুষ্টিগুণের দিক থেকে ওলকচুতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, লোহা, আঁশ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়া, ভিটামিন রয়েছে। তাই ওলকচু খেলে পেটের পীড়া, ফোঁড়া, হাঁপানি, গোদ, অর্শ, বাত, রক্তের ব্যাধি, প্লীহার স্ফীতি প্রভৃতি নিরাময় হয়। ঔষধি গুণসম্পন্ন মাদ্রাজি ওলকচু চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারেন। পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাদ্রাজি ওলকচু চমৎকার একটি ফসল।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিঞ্জল নাগ বলেন, ‘মাদ্রাজি ওলকচু প্রতি শতাংশে ২৩টি রোপণ করা যায়। ১১০ থেকে ১৭০ দিনে এ ওল কচুর একটি গাছ থেকে ৫ থেকে ৬ কেজি ওলকচু পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে একটি গাছে অন্তত তিনটি বীজ পাওয়া যায়। পাইকারী প্রতিকেজি ওলকচু ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। ওল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে।’

বন্দরে আটকে রয়েছে গাড়ি দুই সপ্তাহেও হয়নি পণ্য পরীক্ষা

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
বন্দরে আটকে রয়েছে গাড়ি দুই সপ্তাহেও হয়নি পণ্য পরীক্ষা
ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামে ডিপোগুলোতে এবার পণ্য পরীক্ষা ও কাগজপত্র যাচাই না করে দুই সপ্তাহ ধরে পণ্যবাহী গাড়ি আটকে থাকার অভিযোগ তুলেছেন সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীরা। বিদেশি ক্রেতারা যেসব ডিপো পছন্দ করেন সেখানে কাজের চাপ বেশি থাকে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কাজে ভাটা পড়া ও ঈদের কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)। 

জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৬টি শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। তবে বিদেশি ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মাত্র পাঁচটি ডিপো। ডিপোগুলোর মধ্যে রয়েছে- সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল), ওশান কনটেইনার লিমিটেড (ওসিএল), ইস্পাহানি সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনালস লিমিটেড, কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেড। এসব ডিপোর বিরুদ্ধে কাজের ধীরগতির বিষয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ তুলছেন পরিবহন মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী বলেন, ‘পণ্য পরীক্ষা ও নথিপত্র যাচাইয়ে গত ১১ জুন কেডিএস লজিস্টিকস নামক কনটেইনার ডিপোতে সিরিয়াল নেওয়া গাড়ি এখনো ভেতরে যেতে পারেনি। এত দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি সিরিয়ালে পড়ে থাকলে পণ্য গাড়ি থেকে কখন নামবে, কখন কাগজপত্র যাচাই হবে, কখন শিপমেন্ট হবে?’

চট্টগ্রাম কাস্টমস অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আগে ডিপোগুলোতে এক ঘণ্টার কাজ তিন দিনে হতো, আর এখন দুই সপ্তাহ ধরে গাড়ি সিরিয়ালে পড়ে আছে। গাড়ি থেকে এখনো পণ্য নামেনি, কোনো ধরনের নথিপত্রও যাচাই হয়নি। সব ডিপোতে কমবেশি কাজের ধীরগতির বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তবে বিদেশি বায়ারদের কাছে জনপ্রিয় হাতে গোনা কয়েকটি ডিপোতে কাজ করতে গিয়ে রীতিমতো আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’ 

অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কাস্টমস অফিসার থেকে শুরু করে ডিপো-সংশ্লিষ্ট সবার গাফিলতি রয়েছে। আর এদিকে দিনের পর দিন গাড়ি আটকে থাকায় বাড়তি মাশুল গুনতে হচ্ছে পণ্যপরিবহন মালিক বা চালকদের। আমরা এর আগেও বিষয়টি সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এসব সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।’ 

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, ‘ডিপোগুলোতে কাজের ধীরগতির কারণে আমাদের অনেক গাড়ি আটকে গিয়েছিল। তাই আমরা বাড়তি ভাড়াও আদায় করেছিলাম। হয়তো বড় ব্যবসায়ীদের বাড়তি ভাড়া পরিশোধে সমস্যা হয় না। কিন্তু অন্য ব্যবসায়ীদের তো সমস্যা হয়। 

হাতে গোনা কয়েকটি ডিপোতে কাজের চাপ বেশি, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও বেশি। ঈদের পরপর আমরা কিন্তু আগের মতোই ভাড়া আদায় করছি। কিন্তু পণ্যবাহী গাড়ি যদি সেখানে দিনের পর দিন আটকে থাকে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে হবে।’ 

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) প্রথম সহ-সভাপতি গওহর রিজভী বলেন, ‘মূলত বিদেশি বায়াররা নিরাপত্তা, ডিপোর আকার, যথাসময়ে শিপমেন্টের বিষয় বিবেচনা করে ডিপো পছন্দ করেন। কাজেই বিদেশি বায়ার যেসব ডিপো পছন্দ করবেন সেখানে কাজের চাপ বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এমনও ডিপো রয়েছে যেখানে মাসে ৩ হাজার কনটেইনারেরও কাজ হয় না। বায়াররা ওসব ডিপো পছন্দের তালিকায় রাখবেন না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরাতো সবসময় বলি, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার জন্য। কারণ আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার যতক্ষণ অনুমতি না দেবে ততক্ষণ গাড়ি থেকে পণ্য নামিয়ে পরীক্ষা করা যাবে না। এক্ষেত্রে ডিপো কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। দীর্ঘসময় গাড়ি সিরিয়ালে পড়ে থাকার বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে- আমার মনে হয় ঘূর্ণিঝড়ে কাজের ধীরগতি ও ঈদের কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকায় এমন হয়েছে।’ 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার নাজিউর রহমান মিয়া বলেন, ‘কিছু কিছু ডিপোতে কাজের চাপ বেশি থাকে। ফলে সেখানে গাড়ির চাপও বেশি থাকে। আমরা তো সবসময় বলি দ্রুত কাজ শেষ করতে। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের দিক থেকে কাজে গাফিলতি করার কোনো সুযোগ নেই।’ 

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়, ঈদ উৎসব- এসব থাকবে। পাশাপাশি কার্যক্রমও চালাতে হবে পরিকল্পিতভাবে। ডিপোগুলোর বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণ, কাজে ধীরগতির বিষয়ে অভিযোগটা বেশ পুরোনো। দুই সপ্তাহ ধরে গাড়ি সিরিয়ালে পড়ে থাকবে, পণ্যের পরীক্ষা হবে না- এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই কাস্টমস কর্মকর্তা ও ডিপো কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।’