![সিন্ডিকেটে জড়িতদের খোঁজা হচ্ছে, কাউকে ছাড় নয় : অর্থমন্ত্রী](uploads/2024/01/22/1705862955.finance minkk.jpg)
আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। রবিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠকে বলা হয়েছে, যারা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে বলা হয়েছে, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য সরবরাহ রয়েছে। কোনো ধরনের সংকট নেই, কিন্তু কিছু মহল কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজারে পণ্যের সংকট নেই। তারপরও কিছু মহল কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আমরা ওই সব অসাধু ব্যবসায়ীকে ধরব। সেভাবে সরকার কাজ করছে।’ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কাজেই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। দরকার হলে আইন করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রমজান আমাদের লক্ষ্য নয়। তবে রমজান যেহেতু আসন্ন, সে জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সে জন্য সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। একটা কিছু করার জন্যই আমরা আলোচনা করেছি। অপেক্ষা করুন এবং দেখুন কী হয়, ওয়েট অ্যান্ড সি।’
চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মাহমুদ আলী বলেন, দাম কিছুটা কমেছে। আরও কমবে। তিনি বলেন, চালের দাম নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। সে জন্য চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এখন আলুর ভরা মৗসুম। তারপরও ৭০ টাকা কেজি কেন? এর জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। শুধু বলেছেন, আলুচাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেটকারীদের খুঁজছি কঠোর অ্যাকশন নেওয়ার জন্য।’ কবে নাগাদ জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক হবে, এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা বলা সম্ভব নয়। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি, একটা ভালো ফলাফল পাব।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
এদিকে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, কিছু মহল কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এটা যাতে আর না হয় সে জন্য বৈঠকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ মুহূর্তে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ রয়েছে।
কোনো নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই। তা হলে দাম বাড়ছে কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু মধ্যস্বত্বভোগী, মতলববাজ কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে অস্থির করে তুলছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্ট করছে। আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৫ বছর ধরে সিন্ডিকেট ধরতে পারেননি কেন–এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছিল না। এখন আমরা শনাক্ত করার কাজ শুরু করেছি। নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর তাদের ধরা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে। দায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।’
গর্ভনর
ডলারসংকট নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘রজমানের যেসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, গত বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৮টি প্রোডাক্টের যত এলসি হয়েছিল, এবার তার থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি এলসি হয়েছে। পণ্যগুলো সময়মতো দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী সমস্যা না করলে পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না।’
এমএ/