![নাব্যসংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর, ব্যবসায়ে লোকসান](uploads/2024/03/10/1710059755.liter.jpg)
যমুনার নাব্যসংকটের কারণে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে সরাসরি ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী বড় জাহাজ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন ও খালাস কার্যক্রম।
ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য আনতে হচ্ছে বন্দরে। লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন করায় খরচ বাড়ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। নাব্যসংকটের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, যমুনার পলি জমে চর পড়েছে। এরপরও ড্রেজিংয়ের কোনো উদ্যোগ নেই।
উত্তরবঙ্গের প্রধান নৌবন্দর সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে সার, সিমেন্ট, গম, কয়লা, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্য নিয়ে জাহাজ আসে এই নৌবন্দরে। ফলে সারা বছরই কর্মচাঞ্চল্য থাকত এ বন্দরটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদীপথে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার জন্য সার, কয়লা, সিমেন্ট, চাল, গম, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের ৯০ ভাগ আনা হয় এই বন্দর দিয়েই। বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে কয়েক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করেন। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর হওয়ায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে চরম নাব্যসংকট দেখা দেয় বন্দরের নৌ চ্যানেলে। এতে পণ্য নিয়ে বড় জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারে না। বাঘাবাড়ী থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দূরে মানিকগঞ্জের বাহাদুরাবাদ নামক স্থানে যমুনা নদীতে জাহাজগুলোকে অবস্থান করতে হয়। সেখান থেকে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে খালাস করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বন্দরে মালামাল আনতে বস্তা প্রতি ১৮ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের প্রায় ১১টি পয়েন্টে পানির গভীরতা অনেক কমে গেছে। এখন সেখানে পানির গভীরতা ৭ থেকে ৮ ফুট। এ ছাড়া পলি জমে সরু হয়ে গেছে নৌ চ্যানেলের প্রতিটি পথ। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি নদীতে পানির গভীরতার জন্য ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তর করা গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না।
মোংলা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্টবাহী জাহাজের সুকানি আব্দুল আলিম জানান, বাঘাবাড়ী বন্দরের যে নৌ চ্যানেল রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ গভীরতা না থাকায় বড় জাহাজগুলো সরাসরি বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা যাচ্ছে না। দূর থেকে ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য লোড করে আনতে হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সময়ও বেশি লাগছে।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের শ্রমিক খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ বন্দরে সারা বছরই কাজ করে থাকি কিন্তু বাঘাবাড়ী নৌবন্দর এখন প্রায় জাহাজশূন্য হয়ে পড়ায় গত কয়েক দিন ধরে আমাদের হাতে কাজ নেই।’
বন্দরে কাজ করা আরেক শ্রমিক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুম আসলেই নাব্যসংকটের কারণে আমাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।’
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসা জাহাজের সুকানি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘নদীতে ড্রেজিং না করায় পলি জমে চরের সৃষ্টি হচ্ছে এ কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য বন্দরে খালাস করতে হচ্ছে। একদিকে আমাদেরকেও জাহাজ নিয়ে গন্তব্য ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে।’
এ ছাড়াও বন্দরে কর্মরত শ্রমিক আছাদুল বলেন, ‘আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে সার, সিমেন্ট, গম, কয়লা, জ্বালানি তেল নিয়ে শতাধিক জাহাজ ভিড়ত কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো জাহাজ আসতে পারছে না। আমরা যারা এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি তারা কাজ পাচ্ছি না। কাজ না থাকায় আমরা মজুরিও পাচ্ছি না, বেকার বসে আছি ও চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’
বাঘাবাড়ী ঘাটের নৌযান লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার বলেন, ‘বিআইডব্লিইটিএর অবহেলার কারণে যমুনা নদীতে চরম নাব্যসংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে মালামাল নিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। মানিকগঞ্জের বাহাদুরাবাদে নোঙর করা জাহাজ থেকে ছোট লাইটার জাহাজে করে বন্দরে এনে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। এতে করে পরিবহন খরচ বাড়ছে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের ইজারাদার আব্দুস সালাম বলেন, ‘একটি জাহাজ প্রায় ২০ হাজার বস্তা পণ্য নিয়ে আসে এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ হাজার বস্তা লাইটার জাহাজে করে বন্দরে এনে খালাস করতে হয়। এতে ১ বস্তায় ১৮ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা পণ্য লাইটার জাহাজে করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খালি জাহাজ আসতেই ৮ থেকে ৯ ফুট গভীর পানির দরকার পড়ে। সেখানে পানির গভীরতা অনেক কমে গেছে। নদী ড্রেজিং করা খুব জরুরি।
এ ব্যপারে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি মূলত দ্বিতীয় শ্রেণির নৌবন্দর। বর্তমানে ৯ ফুট গভীর পানি রয়েছে। পণ্য নিয়ে বড় জাহাজ ঢুকতে হলে অবশ্যই ১২ ফুট পানির গভীরতা থাকতে হবে। সে কারণেই জাহাজগুলো বন্দর পর্যন্ত ভিড়তে পারছে না। নদীতে ড্রেজিং অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া বাঘাবাড়ী নৌবন্দর দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নতি করা গেলে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যসংকটের সমস্যা আর থাকবে না। তখন বড় জাহাজগুলো সহজেই বন্দরে ভিড়তে পারবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।