![বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতি](uploads/2024/03/11/1710145050.jossere.jpg)
অনুমোদনের প্রায় পাঁচ বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে।
গত বছর অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা)।
প্রায় ৫৬৬ একর জমিতে এই প্রকল্পে মোট ৪৩৮ শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। শিল্প প্লট বরাদ্দ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধ শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যশোর ইপিজেডে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর বেপজার ৩৪তম বোর্ড সভায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যশোরে ইপিজেড স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যশোর ইপিজেড ঘিরে আশার আলো দেখছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে দেড় লাখ ও পরোক্ষভাবে আরও তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ইপিজেডকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় দেশি-বিদেশে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতির গতিপথ।
পরিকল্পনা কমিশন ও বেপজা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অধীনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটিশন কোম্পানির (আইআইএফসি) মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। বেপজা থেকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে প্রকল্পের কিছু বিষয় সংশোধন করে অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পে রয়েছে, চারটি ছয়তলা বিল্ডিং নির্মাণ, চারতলা একটি সিকিউরিটি ভবন, একটি আবাসিক মসজিদ, ১০ তলা একটি বি-ক্যাটাগরির এবং একটি ডি-টাইপের আবাসিক ভবন নির্মাণ, ছয়তলা একটি অফিসার্স ডরমেটরি ভবন ও একটি স্টাফ ডরমেটরি ভবন। একটি চারতলা পুলিশ আউট পোস্ট ভবন ও একটি কাস্টমস ভবন এবং একটি হেলিপ্যাডও নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনের যাতায়াতে লিফট, সাব-স্টেশন, জেনারেটরসহ সব সুবিধা থাকবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৬৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৮২ হাজার বর্গমিটার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট ব্যয়ের ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় হবে ভূমি উন্নয়নে। এখানে প্রায় ৭৪ লাখ বর্গমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তা করা হবে চার লাখ বর্গমিটার। তাতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা বা মোট ব্যয়ের ৭ শতাংশ।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার গ্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া, মহাকাল, পোমবাগ, বালিয়াডাঙ্গা, আলডাঙ্গা আরাজি বাটিরঘাট, মাগুরা ও রাজাপুর মৌজায় ৫৬৫ দশমিক ৮৭১ একর ভূমিতে স্থাপিত হবে দেশের দশম এই ইপিজেড।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী যশোর ইপিজেডে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর সদর, অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান ভবদহ। ভবদহ বিল পাড়ের ১২০টি গ্রামের অন্তত ৫ লাখ মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার।
প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বনগ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান জানান, ভবদহের স্লুইসগেটে পলি জমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ধলের বিলসহ দক্ষিণের প্রায় ২৭টি বিলের পানি জমে আছে। এসব বিলপাড়ের মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপিত হলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বলেন, যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধতা। ইপিজেড স্থাপিত হলে এই এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, সরকার যশোর ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। কারণ প্রকল্পটি ঘিরে গড়ে উঠবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তখন জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে।
যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রফিকুল হাসান জানান, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দেশের দশম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।