ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতি

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ০২:১৭ পিএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ০২:১৮ পিএম
বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতি

অনুমোদনের প্রায় পাঁচ বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে।
গত বছর অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা)। 

প্রায় ৫৬৬ একর জমিতে এই প্রকল্পে মোট ৪৩৮ শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। শিল্প প্লট বরাদ্দ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধ শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যশোর ইপিজেডে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর বেপজার ৩৪তম বোর্ড সভায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যশোরে ইপিজেড স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যশোর ইপিজেড ঘিরে আশার আলো দেখছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে দেড় লাখ ও পরোক্ষভাবে আরও তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ইপিজেডকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় দেশি-বিদেশে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতির গতিপথ।

পরিকল্পনা কমিশন ও বেপজা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অধীনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটিশন কোম্পানির (আইআইএফসি) মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। বেপজা থেকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে প্রকল্পের কিছু বিষয় সংশোধন করে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পে রয়েছে, চারটি ছয়তলা বিল্ডিং নির্মাণ, চারতলা একটি সিকিউরিটি ভবন, একটি আবাসিক মসজিদ, ১০ তলা একটি বি-ক্যাটাগরির এবং একটি ডি-টাইপের আবাসিক ভবন নির্মাণ, ছয়তলা একটি অফিসার্স ডরমেটরি ভবন ও একটি স্টাফ ডরমেটরি ভবন। একটি চারতলা পুলিশ আউট পোস্ট ভবন ও একটি কাস্টমস ভবন এবং একটি হেলিপ্যাডও নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনের যাতায়াতে লিফট, সাব-স্টেশন, জেনারেটরসহ সব সুবিধা থাকবে। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৬৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৮২ হাজার বর্গমিটার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট ব্যয়ের ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় হবে ভূমি উন্নয়নে। এখানে প্রায় ৭৪ লাখ বর্গমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তা করা হবে চার লাখ বর্গমিটার। তাতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা বা মোট ব্যয়ের ৭ শতাংশ। 

যশোরের অভয়নগর উপজেলার গ্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া, মহাকাল, পোমবাগ, বালিয়াডাঙ্গা, আলডাঙ্গা আরাজি বাটিরঘাট, মাগুরা ও রাজাপুর মৌজায় ৫৬৫ দশমিক ৮৭১ একর ভূমিতে স্থাপিত হবে দেশের দশম এই ইপিজেড।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী যশোর ইপিজেডে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর সদর, অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান ভবদহ। ভবদহ বিল পাড়ের ১২০টি গ্রামের অন্তত ৫ লাখ মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার।

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বনগ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান জানান, ভবদহের স্লুইসগেটে পলি জমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ধলের বিলসহ দক্ষিণের প্রায় ২৭টি বিলের পানি জমে আছে। এসব বিলপাড়ের মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপিত হলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বলেন, যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধতা। ইপিজেড স্থাপিত হলে এই এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। 

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, সরকার যশোর ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। কারণ প্রকল্পটি ঘিরে গড়ে উঠবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তখন জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে।

যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রফিকুল হাসান জানান, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দেশের দশম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়েছে

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে একটি চাকরি মেলা। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। সে কারণে দেশটির বেকারত্বের হারও বেড়েছে। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে গত মাসে দেশটির নিয়োগকর্তারা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করেছেন। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নিয়োগকর্তারা জুন মাসে ২ লাখ ৬ হাজার জনের নতুন কর্মসংস্থান করেছেন। এর আগে গত মে মাসে দেশটিতে ২ লাখ ৭২ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সেখান থেকে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল, জুন মাসে নতুন করে ২ লাখ ১৮ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

কর্মসংস্থান কম হওয়ায় সঙ্গত কারণেই জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মজুরি বৃদ্ধির হার গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ছিল।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যানটি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমকে চলতি বছরের শেষের দিকে সুদহার কমানোর এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, মার্কিন অর্থনীতি জুনে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বোওয়ারস্টক ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী এমিলি বোওয়ারস্টক হিল বলেছেন, পরিসংখ্যানগুলো ‘তুলনামূলকভাবে অনুকূল’। তিনি আরও বলেন, এই পরিসংখ্যান দেশটির বাজারকে সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট খারাপ নয় এবং ফেডের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোও যথেষ্ট খারাপ নয়।

এমিলি বোওয়ারস্টক আরও বলেন, ফেড ‘খুব স্পষ্টভাবে টেলিগ্রাফ করেছে যে, এই বছর তারা একটি ‘কাট’ (সুদহার হ্রাস) আশা করছে।’

চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার আবার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্যাংকটি গত বছরের জুলাই থেকেই এই পরিসরের সুদহার বজায় রেখেছে।

গত বুধবার প্রকাশিত হওয়া মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি মন্থর হচ্ছে এবং জিনিসপত্রের ‘মূল্যের চাপ কমছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারগুলো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদহার কমানোর প্রায় ৭২ শতাংশ সম্ভাবনার ওপর বাজি ধরছে এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার সুদহার কমানোর ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের মূল্য নির্ধারণ করছেন। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজার (ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট) হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আর্থিক সম্পদ যেমন- স্টক, বন্ড, ডেরিভেটিভ ও মুদ্রা, ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন করা হয়।

খবরে বলা হয়, তবে জুন মাসে কর্মকর্তারা মার্চের পূর্বাভাস বাতিল করে দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, চলতি বছরে সুদের হার ১ শতাংশের তিন-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমে যাবে। এর অর্থ হলো এবার গ্রীষ্মে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সুদের হার কমানো অব্যাহত থাকত।

খবরে বলা হয়, জুন মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ‘স্থিতিশীল’ থাকায় এবং কর্মসংস্থানের বাজার শক্তিশালী বলে ইঙ্গিত দেওয়া বিভিন্ন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। এখন তারা মনে করছে, এই বছর সুদের হার কেবল একবার, মাত্র একটি কোয়ার্টার পয়েন্ট কমানো হবে।

বিবিসি জানায়, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডের পথনির্দেশ অনুসরণ করে। অর্থাৎ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর ফলে অন্য দেশগুলোতেও সুদহার কমতে পারে। যদিও মে মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, ‘এমন কোনো আইন নেই যে, ফেডকেই (সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে) প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।’

ভৈরবে বস্তায় আদা চাষে বাড়ছে আগ্রহ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
ভৈরবে বস্তায় আদা চাষে বাড়ছে আগ্রহ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ঝগড়ারচরে বাড়ির আঙিনায় আদা বাগানের পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাড়ির আঙিনাসহ অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর উপজেলার ঝগড়ারচর, আতকাপাড়া, বাঁশগাড়ি, গজারিয়া ও মানিকদীতে সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক। এ পন্থায় আদা চাষে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হওয়ার আশা করছেন। বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরচ হলেও প্রতি বস্তায় গড়ে এক থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন তারা। সে হারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও অনেকটাই লাভবান হবেন আদাচাষিরা। আর বস্তায় আদা চাষ আরও বৃদ্ধি পেলে একসময় আমাদের দেশ থেকেও আদা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের পতিত জমি, বসতবাড়ির আঙিনা কিংবা সুউচ্চ ভবনের ছাদেও আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন। উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন, গজারিয়া, শিবপুর এলাকায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। 

জানা গেছে, এভাবে আদা চাষ করলে তুলনামূলকভাবে রোগবালাই হয় না এবং খরচও অনেক কম হয়। চাষের জায়গাটি ছায়াযুক্ত হওয়ার ফলে ফলনও ভালো হয়। প্রতি বস্তায় তিনটি করে বীজ রোপণ করা হয়। এতে প্রতি বস্তায় এক কেজি করে আদা হলেও এখানে সাড়ে ছয় হাজার কেজি আদা উৎপাদন হবে। বাজারদর ভালো থাকলে কম করে হলেও ৬ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন তারা। 

এদিকে অনেকেই বাসাবাড়ির ছাদ, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বস্তায় উৎপাদিত আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে আয় হবে লাখ লাখ টাকা। এতে দেশে আদার চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে উঠান বৈঠক ও পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। 

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আতকাপাড়া, নয়াহাটির কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম বস্তায় আদা চাষ করে আবার না লোকসানে পড়ি। এখন দেখছি ফলন ভালো হচ্ছে। একেক বস্তায় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরচ হয়। ফলন হয় একেক বস্তায় কম করে হলেও এক থেকে দেড় কেজি। প্রায় দুই হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমাদের অনেক টাকা আয় হবে।’

ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কবির বলেন, ‘আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। আমার চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি কৃষির প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ কারও বাড়ির আঙিনা, এমনকি অনাবাদি জমি যেন খালি না রাখে। কিছু একটা হলেও যেন আবাদ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার অনাবাদি জমিসহ বাড়ির আঙিনাতেও বিভিন্ন সবজি বাগান আর ফলদ গাছ লাগিয়েছি। বস্তায় আদা চাষ এটা আমার কাছে নতুন পদ্ধতি বলে মনে হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগমের পরামর্শ নিয়ে আমার বাড়ির আঙিনায় এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। এক হাজার বস্তা থেকে কম করে হলেও আশা করছি প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কেজি আদা উত্তোলন করা যাবে। এটা সম্পূর্ণ দেশি আদা।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ‘এ বছর ভৈরবে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ ও উঠান বৈঠকসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে বস্তায় আদা চাষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছেন। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অধিক পরিমাণে বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এভাবে আদা চাষ করার ফলে কৃষকদের অল্প খরচ হয়। একেকটি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়া যায়। এভাবে আদা চাষ করলে ফলন ভালো হয়। পোকামাকড়ের উপদ্রব হয় না। এতে করে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারবেন। এ আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। বর্তমান সময়ে বস্তায় আদা চাষ বাণিজ্যিক কৃষিতে চলে যাচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশে বাইরে থেকে আর আমদানি করতে হবে না। আমরা আশা করছি, এ বছরের তুলনায় সামনের বছর বস্তায় আদা চাষ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।’

ময়মনসিংহে মাছ-সবজির বাজারে উত্তাপ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
ময়মনসিংহে মাছ-সবজির বাজারে উত্তাপ
ময়মনসিংহ শহরতলির শম্ভু বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি ও মাছ। ছবি: খবরের কাগজ

ময়মনসিংহে বেড়েছে সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম। মাছের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে গরু, খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দাম বাড়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে শহরতলির শম্ভুগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সিলভার কার্প ২৮০, দেশি পুঁটি ও কৈ ২০০, শিং ৪০০, শোল ৭৫০, মাঝারি আকারের রুই ৪০০, পাঙাশ ১৮০, তেলাপিয়া ২০০, টেংরা ৩৮০, পাবদা ৪৯০, মলা ৬৫০, কাতল ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেগুন ৮০, কচুরমুখী ৮০, করলা ৪০, শসা ৮০, গাজর ১৬০, টমেটো ১৫০, লতা ৪০, ঢ্যাঁড়স ৫০, কাঁচা পেপে ৫০, পটোল ৫০ কাঁকরোল ৫০ ও মিষ্টি লাউ ৩০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা হালি দরে। সবচেয়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। বর্তমানে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে গরুর মাংস কেজিতে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ ও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় মাছ বিক্রেতা ফারুক মিয়ার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে মাছের বিক্রিও কমেছে।

বাজারে মাছের ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রেতা। ভোরে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ নিয়ে আসেন পাইকাররা। তারা এখন আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করায় আমরাও ক্রেতাদের কাছে বেশি দামেই বিক্রি করছি।’

সবজি বিক্রেতা মো. ফরাজি জানান, সদরের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক নিচু ফসলি জমিতে পানি ঢুকেছে। কৃষকের অনেক সবজি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচা সড়কগুলোতে খানাখন্দের কারণেও বাজারে সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা সাইদুল মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহেও মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এখন বাজারে সরবরাহ বেশি। পাইকাররা দাম কমিয়ে দেওয়ায় আমরা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’

হাতে ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে এসেছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছে। বাজারে এসে দেখি মাছ-সবজির বাজার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তাই খরচ বাঁচাতে এক কেজি মাছ ও কিছু সবজি কিনেছি।’

পাঙাশ মাছ কিনছিলেন ভ্যানচালক মুজার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল সিলভার কার্প কিনব। কিন্তু মাঝারি আকারের এই মাছটি ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এত দামে মাছ খাওয়ার স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই ১৮০ টাকা কেজি দরে এক কেজি ওজনের একটি পাঙাশ মাছ কিনেছি। সঙ্গে কিছু তরিতরকারি কিনে বাড়িতে যাব।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘বাজারে অভিযান চালানো হবে। বিক্রিতে কোনো অসংগতির প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পেঁপে চাষে সফল ধামরাইয়ের কৃষকরা

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
পেঁপে চাষে সফল ধামরাইয়ের কৃষকরা
ঢাকার ধামরাইয়ে রোয়াইল ইউনিয়নে পেঁপে বাগান। ছবি: খবরের কাগজ

পেঁপে চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন ঢাকার ধামরাইয়ের কৃষকরা। উপজেলার প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এতে ভিন্ন পেশা ছেড়ে অনেকেই পেঁপে চাষে মনোনিবেশ করেছেন। তবে উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ হয়েছে।

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এতে একাধিক কৃষক পেঁপে চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ফিরে এসেছে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা। অল্প খরচে বেশি আয়ের পথ সবজি চাষ। তাদের মধ্যে পেঁপে চাষ অন্যতম। খরচ কম লাভ বেশি। অন্য ফসলের চেয়ে পেঁপে চাষে খরচ কম। রোগবালাইয়ের ঝামেলাও নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না বলে জানান কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলায় প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে পাইকারি ও স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করছেন।

রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচড় গ্রামের পেঁপে চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে রিকশা চালাতাম। তবে এবার রিকশা বাদ দিয়ে সবজি চাষ করছি। আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁপের দাম ২৮-৩৩ টাকা। আমি প্রায় ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। এভাবেই যদি পেঁপের দাম থাকে তা হলে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। খরচ অনুযায়ী পেঁপের বাজার বেশ ভালো।’

আমিনুল আরও বলেন, ‘পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে এসেছে। সবজি চাষেই নিজের পরিবারে সুখ ফিরে এসেছে। আগামীতে পেঁপে চাষের সঙ্গে অন্য সিজনাল সবজি চাষ করব।’

বহুতকুল এলাকার একলাস খান বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে তাই বেশি জমিতে পেঁপে চাষ করতে পারিনি। তারপরও ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা। কারণ সার বিষ কম লাগে। শুধু ভারী বৃষ্টি হলে উঁচু পেঁপে গাছের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে খুঁটি দিতে হয়। তা ছাড়া অন্য কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আমি ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। যদি বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হয় তা হলে আরও প্রায় ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারব।’ 

তবে একলাস খান ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবজি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেনি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আসেন বাজারে বসেই কথা বলে চলে যান। শুধু বলেন, কোনো সমস্যা হলে জানাইয়েন। কিন্তু পেঁপে গাছ দেখে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কথা বলেন না। আমরা এলাকার ফার্মেসি থেকে কোনো ওষুধ লাগলে নিয়ে যাই, তাদের কথা মতো সেই সার বিষ জমিতে ও গাছে দিই।’

ইব্রাহিম হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এখন সারা বছরই বাজারে কাঁচা পাকা পেঁপে পাওয়া যায়। দাম স্বাভাবিকের মতোই আছে। ৩০-৩৫ টাকায় কেনা যায়। তবে বেশির ভাগ পেঁপেই ঢাকার দিকে চলে যায়।’

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সবজি চাষের মধ্যে পেঁপে অন্যতম। সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। পেঁপে চাষে খরচ কম লাগে তা ছাড়া বেশ কিছু দিন সংরক্ষণ করা যায়। আমরা কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বলে থাকি। এই চাষের জন্য ব্রঙ্ক এবং জিংক সার ব্যবহার করতে বলি। ব্যালেন্স সার ব্যবহার করলে পেঁপে গাছগুলো ভেঙে পড়ে না। ধামরাইতে সবজি চাষের জন্য প্রায় ৬২ হেক্টরের মতো জমি রয়েছে। কৃষকরা সারা বছর পেঁপে চাষ করে বাজারে কম বেশি সবজি বিক্রি করে নগদ টাকা আয় করতে পারেন। পেঁপে গাছগুলো ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খাটো জাতের হাইব্রিড পেপের চাষ করলে ঝুঁকি কম।’

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৩০ জুন থেকে ৪ জুলাই) দৈনিক গড় লেনদেন প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি এ সময় ডিএসইর মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডিএসইর সব কটি সূচক। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে  প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৫৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। 

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর সব কটি সূচকও বেড়েছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৪২ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ২৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। আর ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩২৯টির, কমেছে ৪০টির এবং ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সব খাতের শেয়ারে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। 

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। ১০ দশমিক ৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ২ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। আর সাধারণ বিমা খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ১ শতাংশ।

আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে সব খাতের শেয়ারেই ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। এর মধ্যে সেবা খাতে ৯ দশমিক ২ শতাংশ, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ৮ দশমিক ১, কাগজ খাতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিমা খাতে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে।

লেনদেনের শীর্ষে যারা
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।
সমাপ্ত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ যমুনা অয়েলের।

লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের সপ্তাহজুড়ে গড়ে ২০ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে বিচ হ্যাচারির বিদায়ী সপ্তাহে গড়ে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার।

সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে গড়ে ওরিয়ন ফার্মার ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, সি পার্ল রিসোর্টের ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ইউনিলিভার কনজ্যুমারের ১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড। 
সমাপ্ত সপ্তাহে আফতাব অটোর শেয়ার দর আগের সপ্তাহের তুলনায় ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সায়।

দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা সিলকো ফার্মার শেয়ারদর বেড়েছে ২০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর ১৮ দশমিক ০৫ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেছে রতনপুর স্টিল।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেমিনি সি ফুডের ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ, সাইফ পাওয়াটেকের ১৬ দশমিক ০৪ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, নাভানা সিএনজির ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং এডিএন টেলিকম লিমিটেডের ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।

দরপতনের শীর্ষে যারা
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মাঝে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড।

গত সপ্তাহে ফান্ডটির ইউনিট দর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য ছিল ১৫ টাকা ৬০ পয়সা।

দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর কমেছে ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর শেয়ারের দাম ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কমায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে এটলাস বিডি।

সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, আলহাজ টেক্সটাইলের ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল  ফাইন্যান্সের ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, লিনডে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ৮১ এবং জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১৫ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৫ হাজার ৮৯ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৩১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৯ হাজার ৮৬ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৬৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩০৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩৭টির, কমেছে ৬৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির বাজারদর।