জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো) সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সিকিউরিটিজ, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, আর্থিক স্কিম ও ইন্সট্রুমেন্ট, সব ধরনের সঞ্চয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিয়েও অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো) টাকা সাদা করা যাবে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে আরেও বলা হয়েছে, ঢালাওভাবে দেওয়া এ সুবিধা নিলে সরকারের কোনো সংস্থা কোনো প্রশ্ন তুলবে না।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা মূলধারার অর্থনীতিতে আনতে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল- ‘১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১-এর মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।’ অর্থাৎ বাজেটে উল্লিখিত খাতগুলোতে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা হলে এনবিআর, দুদকসহ কোনো কর্তৃপক্ষই তদন্ত করতে বা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে না। বিশেষ এ সুযোগ নিয়ে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলেও সরকারের কোনো সংস্থাই প্রশ্ন তুলতে পারবে না। পরের বছর এ সুযোগ আর বাড়ানো হয়নি। তবে আগামী অর্থবছরেও এই সুযোগ চেয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষ এ সুবিধা নিয়ে সেই বছর অনেক ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক, শিল্পী, খেলোয়াড়সহ অনেকে কালোটাকা সাদা করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৫৯ ব্যক্তি ২০ হাজার ৬৫০ কোটি কালোটাকা সাদা করেছেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ী, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, পোশাক কারখানার মালিকসহ ৪৭৯ জন ১ হাজার ৬৭৭ কোটি কালোটাকা সাদা করেছেন। এ সময়ে এনবিআরের বড় মাপের করদাতাদের ৩১ জন ব্যক্তি ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা সাদা করেন। তাদের মধ্যে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক বেশি। ৭৩৯ জন চিকিৎসক ১ হাজার ৪২৭ টাকা সাদা করেছেন। ৬১১ জন গাড়ি আমদানিকারক, পোশাক কারখানার মালিক, স্বর্ণ ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদার ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা সাদা করেছে। এ বছর কালোটাকা শেয়ারবাজার, নগদ, ব্যাংক আমানত, বন্ড, ফ্ল্যাট, জমি ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যক্তি নগদ, বন্ড এবং ব্যাংক আমানত খাতে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা কর দিয়ে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি কালোটাকা সাদা করেছেন। পুঁজিবাজারে ২৮৬ জন ব্যক্তি ৪০০ কোটি টাকা সাদা করেছেন। এ বছর ১ হাজার ৬৪৫ জন ব্যক্তি ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা সাদা করে জমিতে এবং ২ হাজার ৮৭৩ জন ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কিনে সাদা করেছেন।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা নিয়ে যতবার কালোটাকা সাদা করা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তার চেয়ে বেশিবার কালোটাকা সাদা হয়েছে। এই এক অর্থবছরেই সাদা হয় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রশ্ন তোলা হবে, এমন ভয়ে অনেকে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করেন না। বিশেষ সুযোগ দেওয়া হলে অনেকেই কালোটাকা সাদা করেছেন।’