![‘নির্বাচন ঘিরে পক্ষপাত সহ্য করা হবে না’](uploads/2023/12/08/1702026913.EC_Anisur_Rahman.jpg)
তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ইসির সব কার্যক্রম। ভোটের আগে কমিশনারদের নির্বাচনী সফর, মাঠপ্রশাসনের পরিস্থিতি, প্রশাসনে রদবদলসহ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহনাজ পারভীন এলিস
খবরের কাগজ: তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যায়ে ইসির নির্বাচন-প্রক্রিয়া কীভাবে এগোচ্ছে?
আনিছুর রহমান: সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনা, সেগুলো বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নির্দেশনা প্রদানসহ অনুষ্ঠানিক সব ধরনের প্রস্তুতিই আমরা নিয়েছি। পাশাপাশি এবারের ভোটকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করতে যা যা করা দরকার, তার সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের পক্ষপাত ও অরাজকতা সহ্য করা হবে না।
খবরের কাগজ: সম্প্রতি আপনারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী সফর করেছেন। এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
আনিছুর রহমান: সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের মাঠপ্রশাসনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা, সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া। ভোটের মাঠকে প্রভাবমুক্ত করা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।
কেউ পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে পারবে না। নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেওয়া। যদি কেউ ব্যত্যয় ঘটায়, তার বিরুদ্ধে আইনি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সেসব বার্তা দিয়েছি।
খবরের কাগজ: আপনাদের দ্বিতীয় দফা সফরও শুরু হয়েছে। আপনি কি আবারও যাবেন?
আনিছুর রহমান: যাব, তবে এখনই না। কারণ এ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীদের আপিল দায়ের চলছে। এরপর সংক্ষুব্ধদের করা এসব আপিলের শুনানি ও নিষ্পত্তির পর ঘোষণা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ- এসব নিয়ে আমরা পুরো কমিশন এখন ব্যস্ত। এসব কাজ শেষ হলে প্রার্থীদের প্রচার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমরা আবারও মাঠে যাব।
সেই সফরে আমরা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করব। তাদের অভাব-অভিযোগ শুনব, পরামর্শ থাকলে সেটাও আমলে নেওয়া হবে।
খবরের কাগজ: শোকজের পরও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটছে। প্রতীক বরাদ্দের পর তো এসব ঘটনা আরও বাড়বে। পদক্ষেপ কি নেওয়া হচ্ছে?
আনিছুর রহমান: আইনি সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শোকজ করা হচ্ছে, তাদের সশরীরে হাজিরা দিতে বলা হচ্ছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে বা গুরুতর অভিযোগ থাকলে প্রয়োজনে পুনরায় কমিশনেও তলব করা হচ্ছে, হবে। এটা চলমান আছে, থাকবে। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত রিপোর্ট পাচ্ছি।
খবরের কাগজ: রাজনৈতিক কোনো প্রভাব ও মাঠপ্রশাসনের অবস্থা নিয়ে কর্মকর্তাদের বক্তব্য কী ছিল?
আনিছুর রহমান: আমি যে কয়েকটি জেলায় গেছি, সেখানকার সর্বস্তরের কর্মকর্তা, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, থানার ওসি, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি পরিস্থিতি কী আছে, কোনো হুমকি-ধমকি ও চাপে আছে কি না, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। সেই অনুযায়ী তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাদের জানিয়েছি, আমাদের এই নির্বাচন দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে আমরা গ্রহণযোগ্য করতে চাই। নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, তারাও আমাদের আশস্ত করেছেন। আমরা আশাবাদী যে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারব।
খবরের কাগজ: নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের পরিস্থিতি আপনারা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
আনিছুর রহমান: মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের কথা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সোর্স, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, এমনকি সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও আমরা তথ্য পাচ্ছি। সব ধরনের তথ্যই আমরা আমলে নিই, দায়িত্বপ্রাপ্তদের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিই।
এ ছাড়া একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে, সেখানে সিইসি, সচিবসহ আমরা চার কমিশনার আছি। কোথা থেকে কোন পরিস্থিতি কে জানলাম বা দেখলাম, তা সেখানে আমরা নোট দিই। ছোটখাটো বিষয়ে গ্রুপেই পরামর্শ হয়। প্রয়োজন হলে বসেও আলোচনা করি।
খবরের কাগজ: চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তো একটা আলাদা পরিস্থিতি থাকে। নির্বাচনকে ঘিরে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন দেখলেন?
আনিছুর রহমান: আপনি ঠিকই বলেছেন। ওখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলাদা দৃষ্টি রাখছি। কারণ ওখানে কিছু দল আছে, গোষ্ঠী আছে, নির্বাচন এলে তাদের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়। সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বিত তৎপরতা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে।
খবরের কাগজ: আপনাদের নির্বাচনী সফরের পর ইসির সিদ্ধান্ত হলো প্রশাসনে রদবদল। মাঠপ্রশাসনের তথ্য কী ছিল?
আনিছুর রহমান: মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নোট ছিল যে, রদবদল হলে কাজের সমন্বয় করা এবং নির্বাচনী মাঠকে প্রভাবমুক্ত রাখা তাদের পক্ষে সহজ হবে। তাই ঘুরে আসার পরই আমাদের সিদ্ধান্ত হয়। পরে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিকে ডেকে ওই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে এ পর্যায়ে সারা দেশে ইউএনও (দায়িত্বকাল যাদের এক বছরের বেশি) এবং ওসিকে (দায়িত্বকাল যাদের ছয় মাসের বেশি) বদলির কাজ চলছে। যাদের বদলি করা হচ্ছে, ওই দুই মন্ত্রণালয় থেকে তাদের তালিকা ইসির কাছে প্রস্তাব আকারে আসছে। রদবদলের মেসেজ এরই মধ্যে সারা দেশে পৌঁছে গেছে। তারা দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হয়েছেন, আমরা খবর পাচ্ছি।
খবরের কাগজ: ভোটের আগে নির্বাচন উপলক্ষে ইসির নির্বাচনী অ্যাপ নিয়ে মাঠের কর্মকর্তারা কী বললেন?
আনিছুর রহমান: ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা এই অ্যাপ করেছি। ঢাকায় তারা যখন প্রশিক্ষণে এসেছিলেন, ওই বিষয়ে তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে। মাঠে গিয়ে কথা বলেও জেনেছি।
অ্যাপকে তারা ইতিবাচক মনে করছেন। এ বিষয়ে যাদের কম ধারণা আছে, তারা চর্চাও করছেন। তবে পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় এতে কিছুটা অসুবিধা আছে। বাস্তবতা মেনে সেসব স্থানে এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে। তবে অ্যাপটির তথ্য সর্বস্তরে জানাতে আমরা এখনো সে পর্যায়ে প্রচার করতে পারিনি। ভোটের এ বিষয়ে আরও প্রচারে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খবরের কাগজ: কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ সম্পর্কে কী ভাবা হচ্ছে?
আনিছুর রহমান: এ বিষয়ে আমরা মতবিনিময় সভায় বলেছি, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সচেষ্ট থাকতে হবে, যাতে ভোট উৎসবমুখর হয়। আমাদের দায়িত্ব পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া, সেটা করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনিছুর রহমান: খবরের কাগজের জন্য শুভকামনা।