![শিশুর খিঁচুনি হলে](uploads/2024/05/09/nira-jabe-1715241276.jpg)
লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু
মস্তিষ্ক কোষ বা নিউরনের ত্বরিত বেগের অস্বাভাবিকতার কারণে যেকোনো ধরনের ক্ষণস্থায়ী শারীরিক প্রতিক্রিয়া বা বাহ্যিক লক্ষণকে খিঁচুনি বলা হয়। যদি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বা ততোধিকবার খিঁচুনি হয়, তাহলে এটিকে মৃগীরোগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি স্নায়ুতন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ। যেকোনো বয়সের পুরুষ ও নারী এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
ধরন
সারা শরীরে খিঁচুনি- জেনারেলাইজড এপিলেপসি।
শরীরের বিশেষ কোনো দিকের খিঁচুনি- ফোকাল এপিলেপসি।
শরীরের এক জায়গা থেকে শুরু হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাওয়া খিঁচুনি, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সিনড্রোম আকারে খিঁচুনি রোগ আসতে পারে।
কারণ
পরিবারে খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে বা বংশগত কারণ।
গর্ভকালীন জটিলতা।
খুব কম ওজন নিয়ে জন্মলাভ।
জন্মের পরই শ্বাসনালিতে কষ্ট।
জন্মের সময় মাথায় আঘাত লাগা।
জন্মের পরই জন্ডিসের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
ছোটবেলায় কোনো কারণে মস্তিষ্কে ইনফেকশন। এ ছাড়া অনেক অজানা কারণেও খিঁচুনি রোগ হতে পারে।
চিকিৎসা
ফেনোবারবিটল, ফেনিটয়েন, ভ্যালপ্রোয়েট ইত্যাদি ওষুধ প্রায় সব ধরনের খিঁচুনি রোগের জন্যই কার্যকর হলেও এসব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বর্তমানে নতুন ধরনের খিঁচুনিরোধক কিছু ওষুধ বাজারে এসেছে, যেগুলো অধিকতর কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। তবে এসব ওষুধ অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-
নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ খাওয়ানো।
জ্বর, ঠাণ্ডা বা কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা করানো।
আগুন ও পানি থেকে দূরে রাখা।
পুকুরে ডুব দিয়ে গোসল করতে না দেওয়া, বাসায় বাথরুমে গোসল করলে দরজা লক বা ছিটকিনি বন্ধ না করা।
কমপক্ষে দু-তিন বছর ওষুধ সেবন করা। তবে খিঁচুনি বন্ধ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বন্ধ করা যেতে পারে।
খিঁচুনি রোগীদের সঙ্গে সবসময় একটা কার্ড রাখা, যাতে রোগীর ও রোগের নাম, ওষুধের নাম ও পরিমাণ এবং পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ থাকবে।
প্রতিরোধ
শিশুর জন্মের আগে গর্ভাবস্থায় মাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো।
গর্ভকালীন জটিলতা দূর করার জন্য ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে প্রসব করানো।
পরিবারে এ ধরনের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চেকআপ করানো।
কখন হাসপাতালে নিতে হবে
কারও খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে অথবা একনাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে খিঁচুনি চলতে থাকলে।
একবার খিঁচুনির পর জ্ঞান না ফিরলে আবার কিংবা বারবার খিঁচুনি হতে থাকলে।
ওষুধ দিয়েও মারাত্মক খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে না এলে।
জরুরি অবস্থায় করণীয়
রোগীকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া।
জোরপূর্বক দাঁত খোলার চেষ্টা না করা।
শর্ট বা টাইট কাপড় পরা থাকলে যথাসম্ভব ঢিলা করে দেওয়া।
রোগীর পাশে থাকা আগুন, পানি, ধারালো জিনিস সরিয়ে ফেলা।
পানি পান করানোর চেষ্টা না করা।
ফ্যান বা পাখার মাধ্যমে শরীরকে ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করা।
আক্রান্ত ব্যক্তির চারদিকে ভিড় না করা।
মনে রাখতে হবে, বেশির ভাগ খিঁচুনি হঠাৎ শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর থেমে যায়।
অনুলিখন হৃদয় জাহান
কলি