![খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন, অন্যথায় যেকোন পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে: মির্জা ফখরুল](uploads/2024/06/29/bnpkk-1719667736.jpg)
দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন, অন্যথায় যেকোন পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে বলে সরকারকে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয়ের মরে যাওয়ার চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশের পরিবর্তন আসে তরুণ-যুবকদের দিয়ে। তোমাদের হাতে নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যত, দেশের পরিবর্তন। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
শনিবার (২৯ জুন) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের 'বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।
বেলা পৌনে ৩টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে দুপুর থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমাবেশের মূল লক্ষ্য একটাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি। তিনি এ দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কারাগারে ছিলেন। টানা ৯ বছর তিনি স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র আলাদা রাখার সুযোগ নেই।
৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনে নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ করছেন। ৬০০ এর বেশি নেতাকে গুম করা হয়েছে। অনেক নেতাদের মিথ্যা মামলা সাজা দিয়ে এ দেশ থেকে গণতন্ত্রকে স্তিমিত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ব্যাংক লুট করে টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আজকে অবাক লাগে, পুলিশের বড় বড় কর্মকতারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, এনবিআর কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। যাদের নাম প্রকাশ পাচ্ছে দুর্নীতিতে, শুধু তারাই নন, এর চেয়ে বড় রাঘববোয়ালরা জড়িত আছে।
সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তাকে মুক্তি করি।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, গত ১৫ বছরে কোনো আন্দোলনের ফল আমরা ঘরে আনতে পারিনি। যথাসময়ে মাঠে থাকলে চূড়ান্ত ফলাফল আসতো। ২৮ অক্টোবর আমরা একটা পাল্টা মিছিল নিয়ে দাঁড়াতে পারলে চূড়ান্ত ফলাফল আসতো। আমাদের জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে রাজপথের আন্দোলনে নিয়ে আসতে হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কারো সঙ্গে আপোষ করব না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যেকোন মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। চোরা-বাটপার মুক্তি পেয়ে যায় কিন্তু খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না কেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন থামবে না। সামনে আরও কর্মসূচি আসছে। কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানিয়ে আসছি বহুদিন ধরে। কিন্তু তিনি এখনো কারাগারে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি জামিন পান না। জামিন পান খুন ও মৃত্যুদণ্ডের আসামি। কোনো কারণ ছাড়াই শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, খালেদা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের হার্ট। তাকে তাড়াতাড়ি মুক্ত করতে না পারলে বাংলাদেশ মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা মানেই বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে লাগবে আন্দোলন। বক্তৃতায় মুক্তি মিলবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই সরকারের নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান, ডিএমপি কমিশনার, এনবিআরের কর্মকর্তারা দুর্নীতি দায়ে অভিযুক্ত। তাহলে এই সরকারি তো দুর্নীতিবাজ।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারো কোন টাকা তছরুপ করেননি। আমরা দেখলাম একটি বিচার করে তাকে ৫ বছর সাজার রায় দিলেন। এরপর নিম্ন আদালতে দেখলাম সাজা না কমে বরং আরও ২ বছর বেড়ে গেল। বিনাচিকিৎসায় খালেদা জিয়া দ্রুত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকার চিকিৎসার মতো মানবিক সেবা নিতে বাধা দিচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ আহনের শাসন নেই। বাংলাদেশ যদি অন্যায় আইন হয়, তাহলে সেখানে প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আজকে দেশে নিরাপত্তা নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, যেদেশে রেজিমের বিরুদ্ধে কথা বলে গুম হয়ে যায়, জেলখানায় বিনাচিকিৎসা মৃতু্বরণ করতে হয়, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়, সেখানেই প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ করে মুক্তি মিলবে না। প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, খালেদা জিয়া মুক্ত করতে না পারা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। খালেদা জিয়া হলো গণতন্ত্রের প্রতীক। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আর গৃহবন্দি করে রাখতে দেব না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশ চলবে না। বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে। তাই দেশকে বাঁচাতে ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দেশপ্রেমিক জনগণকে আগামী দিনে আন্দোলন ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আজিজ-বেনজীর, আসাদুজ্জামানরা নাকি গণভবনে আছেন। এখন নতুন আবিষ্কার ফয়সাল। বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়া তারেক রহমানের সঙ্গে আছে। আজকে জনগণের উপস্থিত তার প্রমাণ। বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের রেললাইন চলবে, দেশের বন্দরগুলো ব্যবহার করবে, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন আশঙ্কাজনক। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা চাইলে বিদেশে চলে যেতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছেন না। আমাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও, জীবনের বিনিময়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আজকে থেকে সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আজক থেকে শুরু হয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি সমাবেশ।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাশ থেকে সরে গেলে আপনার সরকারের অপমৃত্যু ঘটবে। আপনার সরকার রাজপথে লুটোপুটি খাবে। আপনার সরকারের পতন ঘটবে। তিনি বলেন, ভারতে সঙ্গে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি ও ৩০ ডিসেম্বরের আগের নির্বাচন জায়েজ করতে তিনি এসব দেশ বিরোধী চুক্তি করেছেন। আর এসব কারণেই খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, অনেক আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি। আজকে তিনি যদি মুক্ত থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের রেল চলবে সেই দেশবিরোধী চুক্তি হতো না। দেশ থেকে টাকা পাচার ও দুর্নীতি হতো না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, বিশ্বের গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়া সারা বিশ্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী খালেদা জিয়াকে দেশের স্বার্থে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে গণজাগরণের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা এই দাবি পূরণ করব।
বিএনপি'র ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া বাঁচলে জিয়া পরিবার বাঁচবে, দেশের রাজনীতি বাঁচবে। শুধুমাত্র সমাবেশ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। সরকার অনেক জুলুম নির্যাতন করেও জিয়া পরিবারকে কিছুই করতে পারেননি, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। অবিলম্বে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে দেশের জনগণকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।
এর আগে সকালে বৃষ্টির মধ্যেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৬টি পিকআপের ওপর অস্থায়ীভাবে সমাবেশের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়। টাঙানো হয় ব্যানার। মূল মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি নয়াপল্টন থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত এবং অন্যপাশে কাকরাইল থেকে কর্ণফুলী মার্কেট পর্যন্ত লাগানো হয় মাইক। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ২টার আগেই নয়াপল্টন এলাকা নেতাকর্মীদের পদচারণায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কার্যালয়ের সামনের দু'পাশের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।
শফিক/এমএ/