রিজিক আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তবে কিছু আমলের দ্বারা রিজিকের বৃদ্ধি ঘটে। আবার কিছু কাজের মাধ্যমে রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়-উপার্জন কমে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি বলো! নিশ্চয় আমার রব যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন আর যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সংকুচিত করে দেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৬)
কোরআন-হাদিস থেকে জানা যায়, এমন কিছু কাজ রয়েছে; সেগুলো করলে মানুষের রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থাৎ আয়-উপার্জন কমে যায়। যথা—
১. গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া : গুনাহ বা পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা রিজিক কমে যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎকর্ম মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে এবং দোয়া মানুষের তাকদির (ভাগ্য) পরিবর্তন করতে পারে। আর মানুষ তার পাপ কাজের কারণে প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০২২)
২. কৃতজ্ঞতা আদায় না করা : নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা ইবাদত। কৃতজ্ঞতা আদায় না করলে রিজিক কমে যায়। মানবজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো— আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ০৭)
৩. মিথ্যা কসম খাওয়া ও ধোঁকা দেওয়া : উপার্জনের বরকত চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মিথ্যা কসম খাওয়া এবং মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। বরকত চলে যাওয়া মানে রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বেচাকেনা করার সময় তোমরা অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কারণ মিথ্যা কসমের দ্বারা বিক্রি বেশি হয়, কিন্তু বরকত ধ্বংস হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা যতক্ষণ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন না হয়; ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা কিংবা বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। যদি তারা সত্য বলে এবং পণ্যের প্রকৃত অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)
৪. সুদের ব্যবসা করা : সুদি কারবারের দ্বারা ব্যবসার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। আয়-উপার্জন কমে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সদকাকে বর্ধিত করে দেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
৫. জাকাত না দেওয়া : ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বা মৌলিক বিধান হলো জাকাত। সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এতে রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনও জাতি জাকাত আদায় করা বন্ধ করে দেয়; আসমান থেকে তখন বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পৃথিবীর বুকে যদি কোনও চতুষ্পদ জন্তু না থাকত, তাহলে আর কখনও বৃষ্টি হতো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)
৬. হারাম উপার্জন : রিজিকে বরকত কমার অন্যতম কারণ হলো হারাম উপার্জন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল ও বৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি হারাম ও অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, সে এমন ব্যক্তির মতো—আহার করেও তৃপ্ত হয় না (অর্থাৎ সে যতই ভক্ষণ করুক না কেন; তার ক্ষুধা নিবারণ হয় না)।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৫২)
আরও পড়ুনঃ
লেখক : আলেম ও গবেষক