আমরা সবাই উন্নত জীবনযাপন করতে চাই। ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলতে চাই জীবনোদ্যান। প্রশান্তির ফল্গুধারায় সজীব করে তুলতে চাই প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুখ অধরাই থেকে যায় অনেকের। কাঙ্ক্ষিত সুখ কিংবা আত্মতৃপ্তির জীবন পেতে ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে সবাইকে। কারণ, কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাগুলোর ছত্রে ছত্রে রয়েছে সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়। এখানে উন্নত জীবনলাভে হাদিসের ৫ নির্দেশনা তুলে ধরা হলো—
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন কে আছ, আমার কাছ থেকে এ কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং সে অনুযায়ী নিজে আমল করবে অথবা কাউকে শিক্ষা দেবে, যে এমনভাবে আমল করবে? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আছি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং গুনে গুনে এ পাঁচটি কথা বললেন, এক. তুমি হারাম কাজ থেকে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ (ইবাদতকারী) বলে গণ্য হবে। দুই. তোমার ভাগ্যে আল্লাহতায়ালা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে, লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে। তিন. প্রতিবেশীর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে। চার. যা নিজের জন্য পছন্দ কর, তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে। পাঁচ. অধিক হাসা থেকে বিরত থাকো। কেননা অতিরিক্ত হাসি-কৌতুক হৃদয়কে মৃত করে দেয়।’ (তিরমিজি, ২৩০৫)
হারাম থেকে বেঁচে থাকা
সুখময় জীবন পেতে হারাম ও সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড়গুলো থেকে বিরত থাক, তা হলে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদের এক মহামর্যাদার স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সুরা নিসা, ৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে জান্নাতি, আর যারা আমার অবাধ্য হবে, সেই অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, ৭২৮০)
আল্লাহর বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকা
সব সময় আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও ধনী হওয়া যায়। প্রকৃত ধনাঢ্যতা আত্মার ধনাঢ্যতা। যে হৃদয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার এবং মানুষের কাছে না চেয়ে শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়ার চেতনা তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সুখী এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার ধনাঢ্যতাই হচ্ছে প্রকৃত ধনাঢ্যতা।’(মুসতাদরাক, ৮১৪২)
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ
পরিপূর্ণ মুমিন তারা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করেন যারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি, ৬০১৮)
নিজের ও অন্যের জন্য পছন্দ
নিজে যা পছন্দ করেন, অন্যের জন্যও তা পছন্দ করা; উন্নত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মুসলিম মাত্র এমন মানিসকতা লালন করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।’(বুখারি, ১৩)
অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকা
অতিরিক্ত হাসি মানুষের ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটির অভ্যাস গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে (জাহান্নামের ভয়াবহতা যদি উপলব্ধি করতে) হাসতে কম, কাঁদতে বেশি। (বুখারি, ৬৪৮৫)
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক