ঢাকা ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

স্ত্রীকে হাসি-খুশি রাখা সুন্নত

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
স্ত্রীকে হাসি-খুশি রাখা সুন্নত
নামাজ শেষে মোনাজাতরত স্বামী-স্ত্রীর ছবি

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার তিনি এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল অল্প। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগিয়ে যাও।’ এরপর (আমাকে) বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ এরপর আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। পরবর্তী সময় আবার তাঁর সঙ্গে সফরে গেলাম। তখন তিনি সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা সামনে এগোতে থাকো।’ এরপর বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব।’ আমি আগের প্রতিযোগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর তখন আমার শরীর কিছুটা স্থূলকায় হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় কী করে আমি আপনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব?’ তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে।’ এরপর আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম। দৌড়ে তিনি আমার আগে চলে গেলেন। এরপর বললেন, ‘এই জয় আগের পরাজয়ের বদলা।” (নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৪৫)। 


রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দ বিনোদন করতেন। তাদের মন ভালো হয়ে যায়, এমন আচরণ করতেন। এখানে হাদিসের একটি ঘটনা বলা যেতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, “একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য গোশত, ঝোল ও রুটি মেশানো খাবার তৈরি করে তাঁর কাছে এলাম। এসে সাওদাকে বললাম, তুমি খাও। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আমার ও তার মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সাওদা খেতে চাইল না। আমি বললাম, অবশ্যই তুমি খাবে, না হয় আমি তোমার চেহারা লেপ্টে দেব। তারপরও সে খেতে চাইল না। এরপর আমি খাবারের পাত্রে হাত ঢুকিয়ে (হাতে ঝোল মাখিয়ে) সাওদার চেহারায় লেপ্টে দিলাম। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এরপর তাঁর উরু সাওদার জন্য বিছিয়ে দিলেন এবং সাওদাকে বললেন, ‘এবার তুমি ওর চেহারায় লেপ্টে দাও। তা শুনে সেও আমার চেহারায় লেপ্টে দিল। আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন। এমন সময় উমর (রা.) আবদুল্লাহ... আবদুল্লাহ...’ ডাকতে ডাকতে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর হয়তো এখানে প্রবেশ করবেন ভেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দুজনকে বললেন, ‘তোমরা যাও। তোমাদের চেহারা ধুয়ে নাও।’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘উমর (রা.)-এর ডাক শুনে সেদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয় পাওয়ার পর থেকে আমিও উমরকে ভয় পাই।’ (নাসায়ি, ৮৯১৭)


আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলাধুলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।’ (বুখারি, ৮৭৭৯)। 
রাসুলুল্লাহ (সা.) পারিবারিক পরিবেশকে সব সময় আনন্দমুখর রাখতে চেষ্টা করতেন। তিনি পরিবার তথা স্ত্রীদের গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে উত্তম স্বামী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, ১৯৭৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

সৌদি সরকারের সম্মাননা পেলেন হাব সভাপতি

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১১ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১২ পিএম
সৌদি সরকারের সম্মাননা পেলেন হাব সভাপতি
হাব সভাপতিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা। ছবি: সংগৃহীত

হজ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা হাব সভাপতিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের ডিজি ড. বদর আল সোলায়মানি।

অনুষ্ঠানে সৌদি উপমন্ত্রী ড. আল হাসান আল মানাখরা বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় হাব সভাপতির ভূমিকার প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের হজে সৌদি মোয়াল্লিমদের সেবা প্রদানে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে জানতে চেয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

চলতি বছরের হজে পাথর নিক্ষেপের জন্য জামারাতে প্রবেশের সময় অব্যবস্থাপনাসহ কিছু সৌদি মোয়াল্লিমের গাফিলতির বিষয়ে সৌদি উপমন্ত্রীকে হাব সভাপতি অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে ড. আল হাসান আল মানাখরা বলেন, ‘আগামী (২০২৫) হজের বিষয়ে একটি রোডম্যাপ শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এ সময় তিনি আল্লাহর মেহমানদের কল্যাণে আগামীতে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং হাজিদের কষ্ট লাঘবে কি কি করা যায় এ বিষয়ে হাব সভাপতির মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করেন।’

সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাব সভাপতি বলেন, ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের হজযাত্রী ও হজ এজেন্সির কষ্ট লাঘব হয়েছে। একসময় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার আকদ ও হজ ভিসার বারকোডের জন্য এজেন্সিকে মক্কার মোয়াসসাসায় দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো এবং অমানবিক শারীরিক কষ্ট করতে হতো। সৌদি সরকারের ই-হজ চালু করার পর এখন আর এ ভোগান্তি নেই।’

এদিকে সৌদি সরকারের ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে হজযাত্রীদের মোয়াল্লেম সিলেকশন, বাড়ি ভাড়া, ট্রান্সপোর্ট, প্যামেন্ট, ই-ভিসা ইত্যাদি সহজ করার জন্য তিনি সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হজযাত্রীদের কল্যাণে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছেন। বর্তমান ডিজিটাল ই-হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ পর্বও সহজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের কল্যাণে সার্বক্ষণিক হজ কার্যক্রম ব্যক্তিগতভাবে তদারকি করেন।’

২০২৪ সালের হজে সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ করে সময় শেষ হয়ে যাবার পরও হজ ভিসা ইস্যু চালু রাখার জন্য সৌদি হজ ও ওমরা উপমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় তিনি সৌদি বাদশাহ, ক্রাউন প্রিন্স, হজ ও ওমরা মন্ত্রী, ভাইস মিনিস্টারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার বার্তা পৌঁছাতে উপমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলানের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাব সভাপতি। পাশাপাশি হাবকে সম্মানিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

রায়হান/মিরাজ রহমান

ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া
রাসেলস ভাইপার সাপের ছবি

আল্লাহতায়ালা এই ধরণীকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সাজিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানান প্রাণীর বিচরণ পৃথিবীতে ঘটেছে। এর মধ্যে সাপ-বিচ্ছু অন্যতম। সম্প্রতি এ দেশে রাসেলস ভাইপার তথা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ জাতীয় সব ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক আগেই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যা বিভিন্ন হাদিসে লক্ষণীয়। 


হাদিসে এসেছে, একবার বিচ্ছুতে দংশিত এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আনা হলে তিনি বলেন, সে যদি বলত: আউুযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের সাহায্যে তাঁর সৃষ্ট বস্তুর অনিস্ট থেকে আশ্রয় চাই। তা হলে তা তাকে দংশন করতে পারত না অথবা তার ক্ষতি করতে পারত না। (আবু দাউদ, ৩৮৯৯)

অনুরূপ, উপরিউক্ত হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি যদি কেউ সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করে, তা হলে ওই রাতে কোনো বিষাক্ত প্রাণীর বিষ তার অনিষ্ট করতে পারবে না। (তিরমিজি, ৩৬০৪) 

আরেক হাদিসে লক্ষ্য করা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় নাতি হাসান এবং হুসাইন (রা.)-এর জন্য সব অনিষ্ট থেকে রক্ষার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে আশ্রয় চাইতেন, আউুযু বিকালিমা তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আয়নিল লাম্মাতিন। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারি, ৩৩৭১)

তবে ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে ওই প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) পাঁচ প্রকার প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ বলেছেন। এর মধ্যে সাপ, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর অন্যতম। (মুসলিম, ২৭৫২)

তাই সকল প্রকার ক্ষতিকর ও বিষাক্ত প্রাণীর অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকতে হাদিসে নববিতে বর্ণিত দোয়াসমূহ আমাদের নিয়মিত পাঠ করা উচিত। পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাতে দুই হাত তুলে সব সৃষ্ট প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৬৪)

লেখক: শিক্ষার্থী , আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়
হাদিসের বিখ্যাত ৩টি কিতাবের ছবি

আমরা সবাই উন্নত জীবনযাপন করতে চাই। ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলতে চাই জীবনোদ্যান। প্রশান্তির ফল্গুধারায় সজীব করে তুলতে চাই প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুখ অধরাই থেকে যায় অনেকের। কাঙ্ক্ষিত সুখ কিংবা আত্মতৃপ্তির জীবন পেতে ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে সবাইকে। কারণ, কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাগুলোর ছত্রে ছত্রে রয়েছে সুখময় জীবনলাভের অমূল্য পাথেয়। এখানে উন্নত জীবনলাভে হাদিসের ৫ নির্দেশনা তুলে ধরা হলো


আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন কে আছ, আমার কাছ থেকে এ কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং সে অনুযায়ী নিজে আমল করবে অথবা কাউকে শিক্ষা দেবে, যে এমনভাবে আমল করবে? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আছি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং গুনে গুনে এ পাঁচটি কথা বললেন, এক. তুমি হারাম কাজ থেকে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ (ইবাদতকারী) বলে গণ্য হবে। দুই. তোমার ভাগ্যে আল্লাহতায়ালা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে, লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে। তিন. প্রতিবেশীর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে। চার. যা নিজের জন্য পছন্দ কর, তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে। পাঁচ. অধিক হাসা থেকে বিরত থাকো। কেননা অতিরিক্ত হাসি-কৌতুক হৃদয়কে মৃত করে দেয়।’ (তিরমিজি, ২৩০৫)

হারাম থেকে বেঁচে থাকা

সুখময় জীবন পেতে হারাম ও সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড়গুলো থেকে বিরত থাক, তা হলে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদের এক মহামর্যাদার স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সুরা নিসা, ৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে জান্নাতি, আর যারা আমার অবাধ্য হবে, সেই অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, ৭২৮০)

আল্লাহর বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকা

সব সময় আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সম্পদের প্রাচুর্য না থাকলেও ধনী হওয়া যায়। প্রকৃত ধনাঢ্যতা আত্মার ধনাঢ্যতা। যে হৃদয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার এবং মানুষের কাছে না চেয়ে শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়ার চেতনা তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সুখী এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার  ধনাঢ্যতাই হচ্ছে প্রকৃত ধনাঢ্যতা।’(মুসতাদরাক, ৮১৪২)

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ

পরিপূর্ণ মুমিন তারা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করেন যারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি, ৬০১৮)

নিজের ও অন্যের জন্য পছন্দ

নিজে যা পছন্দ করেন, অন্যের জন্যও তা পছন্দ করা; উন্নত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মুসলিম মাত্র এমন মানিসকতা লালন করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।’(বুখারি, ১৩)

অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকা

অতিরিক্ত হাসি মানুষের ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা থেকে বেঁচে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটির অভ্যাস গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে (জাহান্নামের ভয়াবহতা যদি উপলব্ধি করতে) হাসতে কম, কাঁদতে বেশি। (বুখারি, ৬৪৮৫)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

সুরা ফিলের উচ্চারণ ও অর্থ

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম
সুরা ফিলের উচ্চারণ ও অর্থ
আরবিতে সুরা ফিল লেখা ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনের ১০৫ তম সুরা ফিল। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে আয়াত আছে ৫টি। তৎকালীন ইয়েমেনের শাসক ছিল আবরাহা। সে ছিল খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। কাবা ঘিরে সে সময়ের মানুষের আগ্রহ, শ্রদ্ধাবোধ এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কাবার জৌলুস তার পছন্দ হয়নি। সে ঈর্ষায় ফেটে পড়ত। কাবার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে রাজধানী সানায় একটি গির্জা নির্মাণ করে। মানুষ আসবে, এ আশায় বুক বাঁধে। কাজ হয়নি। তেমন সাড়া পড়েনি। সে ক্ষুব্ধ হয়। কাবা ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়। সে বিশাল বিশাল হাতি (৯-১৩ টি) ও বিপুল সৈন্য (৬০ হাজার) নিয়ে কাবার অভিমুখে রওনা হয়। সে বছর হস্তী বাহিনীর বছর বলা হয়। কুরাইশরা তা দেখে ভয় পেয়ে বসে। কাবাঘর ছেড়ে দূরে অবস্থান নেয়। আল্লাহ ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি পাঠিয়ে হস্তী বাহিনী ধ্বংসে করেন। এই প্রেক্ষিতে এ সুরাটি নাজিল করা হয়েছে। 

সুরা ফিল

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ (1) أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ (2) وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ (3) تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ (4) فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍ (5)

বাংলা উচ্চারণ: আলাম তারা কাইফা ফাআলা রাব্বুকা বি আসহাবিল ফিল। আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফি তাজলিল। ওয়া আরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিল। তারমিহিম বি হিজারাতিম মিন সিজ্জিল। ফাজা আলাহুম কাআসফিম মাকুল।

বাংলা অর্থ: তুমি কি দেখনি যে, তোমার প্রতিপালক হাতি ওয়ালাদের সঙ্গে কেমন (আচরণ) করেছিলেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি? তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। যারা তাদের ওপর পোড়া মাটির কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদের চিবানো তৃণ-ঘাসের মতো করে দিয়েছিলেন। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার দোয়া

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার দোয়া
মোনাজাতরত হাতের ছবি। ইন্টারনেট

মানুষের জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া একদমই স্বাভাবিক ব্যাপার। আল্লাহতায়ালা মানুষকে কখনো সমস্যায় ফেলে পরীক্ষা করেন। আবার কখনো বিপদ-আপদ ও সমস্যায় ফেলে মানুষকে পাপমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। কিন্তু সমস্যায় পড়লে মানুষ কষ্ট পায়, দুঃখ-ব্যথায় জর্জরিত হয়। কেউ কেউ বিপদে ধৈর্য হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কারও কারও স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায়। কী করবেন ও কী করা উচিত—তা নির্ণয় করতে পারেন না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার (আল্লাহর) সাহায্য কামনা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) 

‘হাসবুনাল্লাহু’ দোয়াটি পড়া
কখনো অসহায় লাগলে বা ক্ষতির আশঙ্কা করলে কিংবা শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া উত্তম। দোয়াটি হলো—

বাংলা উচ্চারণ: ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বিশেষ দোয়াটি পাঠ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৪৩) 

‘লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা’ পড়া
আবু মুসা (রা.) বলেন, ‘আমরা কোনো এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন মানুষেরা উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে মানবজাতি, তোমরা জীবনের উপর সদয় হও। কেননা তোমরা তো কোনো বধির অথবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী সত্তাকে যিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন। হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স, আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের মধ্যে কোনো একটি গুপ্তধনের কথা জানিয়ে দেব? আমি বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেন, তুমি বলো—

বাংলা উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৫৫)

বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া
আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া হলো—

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা রহমাতাকা আরজু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইনিন, ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’ 

বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার রহমতপ্রার্থী। আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র উপাসক।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৯০)

লেখক: আলেম ও গবেষক