![জাকাত প্রদানের সঠিক পদ্ধতি](uploads/2024/03/22/1711046928.zakat3.jpg)
জাকাত হলো মুসলমানদের ওপর অর্পিত আর্থিক ইবাদত এবং ইসলামি রাষ্ট্রের রাজস্বের অন্যতম উৎস। এটি সঠিকভাবে আদায়ের মাধ্যমে যেমন অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা যায়, তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণও সম্ভব। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও সম্পদ পবিত্রকরণের উদ্দেশ্যে কোনো অভাবী বা মিসকিনকে নগদ অর্থ বা সম্পদ দান করা হলো জাকাত। অন্য নবি-রাসুলদের যুগেও জাকাত ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের ইমাম বানিয়েছি, তারা আমারই বিধান অনুযায়ী মানুষকে পরিচালিত করে; আমি অহির সাহায্যে তাদের সৎ কাজ করার, নামাজ কায়েম করার ও জাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭৩)
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ৮২ বার জাকাতের কথা বলছেন। আল্লাহ জাকাতের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন এ জন্য যে, জাকাত আদায়ের মাধ্যমে বান্দা সম্পদ পবিত্র করবে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সঠিক ভূমিকা পালন করবে।
আমাদের দেশে যে নিয়মে জাকাত আদায় করা হয়, তাতে প্রায় পরিবার বা লোক সচ্ছল হতে পারে না। জাকাতের মূল উদ্দেশ্যই সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করা। জাকাত এমনভাবে দেওয়া উচিত, পরবর্তী বছর যাতে জাকাতগ্রহীতা লোক বা পরিবার নিজেই জাকাত আদায় করতে পারে। এ প্রসঙ্গে ওমর ফারুক (রা.) বলেন, ‘যখন তোমরা ফকির-মিসকিনদের কোনো কিছু দেবে, তখন তাকে ধনী বানিয়ে দাও।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১০৫২৬)
ইমাম নববি বলেন, ফকির বা মিসকিনদের এতটুকু পরিমাণ সম্পদ দিতে হবে, যাতে তারা অভাবের গ্লানি থেকে মুক্তি পায় এবং ধনী ব্যক্তির পর্যায়ে এসে উপনীত হয়।’ বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ বা স্বল্প পরিমাণ নগদ অর্থ বিতরণের ফলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য-বিমোচন হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয়ও লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে যদিও কোনো কোনো সংগঠন বা সংস্থা জাকাত আদায় ও বণ্টন করে থাকে, তবে তাদের মাঝে পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। ফলে জাকাত যে দারিদ্র্য-বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, তারও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো, জাকাতগ্রহীতাকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার মাধ্যমে গ্রহীতার পর্যায় থেকে দাতার পর্যায়ে উন্নীত করা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত জাকাত পদ্ধতির ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের কোনো পরির্বতন হচ্ছে না।
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক