![সদকাতুল ফিতরের পরিচয় ও বিধান](uploads/2024/04/06/1712395903.27.jpg)
পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। সদকাতুল ফিতর একটি অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন গরিবদের খাবারের জন্য শরিয়ত প্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র এ ফিতরা। সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এ দিনটিতে তাদের অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত রাখো।’ (কিতাবুল আসল, ২/১৭৩-১৭৪)
ইসলামি শরিয়তের হুকুম মোতাবেক ঈদের দিনের ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।
ফিতরা বা ফেতরা আরবি শব্দ। জাকাতুল ফিতর বা সদাকাতুল ফিতর নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয়, যা দ্বারা রোজাদাররা রোজা ভঙ্গ করেন। (আল-মুজামুাল ওয়াসিত, পৃষ্ঠা: ৬৯৪)
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী ছাড়া নেসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ দেওয়ার বিশেষ আয়োজনকে সদকাতুল ফিতর বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো। সেগুলো হলো—যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল—যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (ইবনে মাজাহ, ২২৮২)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে গমের ভালো ফলন ছিল না বিধায় আলোচিত চারটি পণ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করা হতো। এরপর মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে গমের ফলন বেড়ে যাওয়ায় গমকে আলোচিত চারটি পণ্যের সঙ্গে সংযোজন করা হয়। আর তখন গমের দাম ছিল বাকি চারটি পণ্যের তুলনায় বেশি। আর মূলত এই দাম বেশি থাকার কারণেই মুয়াবিয়া (রা.) গমকে ফিতরার পণ্যের তালিকাভুক্ত করেছিলেন। (বুখারি, ১৫০৮)
অতএব, গম দ্বারা আদায় করলে আধা সা বা এক কেজি ৬২৮ গ্রাম দিলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আর বাকি চারটি পণ্য অর্থাৎ খেজুর, যব, পনির ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করার ক্ষেত্রে জনপ্রতি এক সা বা তিন কেজি ২৫৬ গ্রাম দিতে হবে।
নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। ইবনে উমর (রা.) থেকে জানা যায়, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের জাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ফরজ করেছেন।’ (বুখারি, ১৫০৭)
গরিব, দুস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিরাই ফিতরার দাবিদার। তবে যার জন্য জাকাত খাওয়া জায়েজ এবং যার ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তিকে ফিতরা দেওয়া যাবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯০)
বেতনভুক্ত কাজের ব্যক্তির পক্ষে ফিতরা দেওয়া মালিকের ওপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক ইচ্ছা করলে কাজের লোককে ফিতরা দিতে পারবেন। তবে তিনি বেতন বা পারিশ্রমিক হিসেবে ফিতরা দিতে পারবেন না। (আল মাবসুত, ৩/১০৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মুদ্রা হিসেবে দিরহাম প্রচলিত ছিল। দিরহামের দ্বারা কেনাকাটা, দান খয়রাত করা হতো। তবু খুদরি বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা দিতেন। (বুখারি, ১৫০৬) এ জন্য ইসলামবেত্তাদের বড় অংশ টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। তবে প্রয়োজনে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা বৈধ।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক