![নিয়মিত কর দেন কতজন?](uploads/2023/11/30/1701321987.NBR.jpg)
সরকারি হিসাবে এ দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষ নিয়মিত কর পরিশোধ করে থাকেন, যা প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে কম। সক্ষমতা থাকলেও জনগোষ্ঠীর বড় অংশই কর দিচ্ছেন না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি তার দেওয়া দ্বিতীয় বাজেট বক্তৃতায় এ দেশে কর প্রদানে সক্ষম করদাতার সংখ্যা চার কোটি, এমন তথ্য জানিয়েছিলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন হিসাব পাওয়া যায়।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, অনেকে করের আওতায় থাকলেও রিটার্ন এবং কর কোনোটাই জমা দিচ্ছেন না। অনেকে রিটার্ন জমা দিলেও নিয়মিত কর প্রদান করছেন না। অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নামমাত্র কিছু অর্থ জমা দিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে চলছেন। লোকবলের অভাবে এনবিআর কর ফাঁকি চিহ্নিত করতে পারছে না। এনবিআর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে পারলেই কেবল করের আওতা বাড়াতে এবং কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারবে।
আজ ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস। এ দিবস সামনে রেখে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা আরও ১০ লাখ বাড়িয়ে এক কোটিতে উন্নীত করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত মেনে নেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এনবিআর পুরোনো ১০ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাতিল করে ১২ ডিজিটের ইটিআইএন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বছরের শেষ মাসে আরও এক লাখ করদাতা চিহ্নিত করা সম্ভব হলে নিবন্ধিত মোট করদাতার সংখ্যা এক কোটির মাইলফলক ছুঁয়ে যাবে।
আয়কর-সম্পর্কিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশে কম, ১০ শতাংশ। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা কম। জনসংখ্যার অনুপাতে ভুটানের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি কর দেয়। দেশটির জনসংখ্যার ১১ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ করের আওতায় রয়েছে। নেপালের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ নাগরিক করের আওতায়। শ্রীলঙ্কায় মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশের বেশি মানুষ করজালে আছে।’
গত অক্টোবর পর্যন্ত ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ মানুষ কর নিবন্ধন নিয়েছেন। গত বছর রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩৫ লাখ। এ হিসাবে গড়ে ২ শতাংশ মানুষ রিটার্ন জমা দিয়েছেন। কর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রিটার্ন জমা দিলেও অনেকে নিয়মিত কর পরিশোধ করেন না। গড়ে প্রতি করবর্ষে নিয়মিত কর পরিশোধ করে থাকেন ২৫ লাখ করদাতা। এ হিসাবে নিয়মিত কর পরিশোধ করে থাকেন মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ করদাতা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর খবরের কাগজকে বলেন, ১৭ কোটি মানুষের এ দেশে করদাতার সংখ্যা চার কোটির বেশি হওয়া উচিত। করদাতার সংখ্যা এবং কর আদায় বাড়াতে হলে এনবিআরকে সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছে, এনবিআর এ বিষয়ে কাজ করছে। কিন্তু এখনো এ সক্ষমতা হয়নি। তাই সারা দেশে কর প্রদানে সক্ষম মানুষ থাকলে এনবিআরের নজরের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রতি করবর্ষে গড়ে সরকারের আদায়কৃত মোট আয়করের ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ উৎস কর থেকে এবং ৩০ শতাংশ করপোরেট খাত থেকে পাওয়া যায়। মাত্র ১০ শতাংশ ব্যক্তি শ্রেণির কর থেকে আদায় হয়ে থাকে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, চাকরীজীবীদের কর ফাঁকির সুযোগ আছে। এ খাতে এনবিআরের আদায় বাড়ানোর সুযোগ আছে।
তিনি আরও বলেন, করদাতা বাড়াতে এনবিআরকে শহরকেন্দ্রিকতা ছেড়ে উপজেলা পর্যায়ে যেতে হবে। এনবিআরের অনেক কর্মকর্তা শহরে থেকে চাকরি করতে চান। উপজেলায় যেতে আগ্রহী হন না। এনবিআরকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসক থেকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, যা মোট আদায়ের ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের মোট রাজস্বের ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।