![সাগরিকায় বিপিএল রোমাঞ্চ](uploads/2024/02/13/1707799668.CTG-BPL.jpg)
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর সাগরিকা রোডে দাঁড়িয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। এই মাঠে এলে যে কারও মনে বাড়তি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। অদূরেই বঙ্গপোসাগরের সৈকত। সাগর তীরে দাঁড়ালে যেমন মন ভালো হয়ে যায়, এই মাঠে ক্রিকেট দেখার অনুভূতিও তাই।
গতকাল সোমবার রংপুর রাইডার্সের অনুশীলনের কথাই উল্লেখ করা যায়। বেলা ১টা মাঠে এসে এক ঘণ্টা ঘাম ঝড়ায় দলটির দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়রা। পুরো মাঠে তখন ঝকঝকে রোদ। বসন্ত আসি আসি করছে। একদিকে শীত আর রোদের মিশেল। সঙ্গে সবুজ গালিচায় ব্যাট-বলের সুমধুর আওয়াজ। অন্তরে অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি দোলা দিয়ে যায়।
রংপুর রাইডার্স মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগেই খুলনা টাইগার্সও মাঠে হাজির হয়েছিল প্রস্তুতি সারতে। আজ মঙ্গলবার সাগরিকার মাঠটিতে রাতের ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি। তার আগে বেলা দেড়টায় স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স খেলবে কুমিল্লা ভিক্টোয়ান্সের বিপক্ষে। এই দুই দল অনুশীলন করেছে সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠের রূপও বদলায়। সকাল, দুপুর আর বিকেল- একটার সঙ্গে অন্যটার তুলনা করা যায় না। রংপুর ও খুলনা অনুশীলন সেরে চলে যাওয়ার পর যেমন কিউরেটর ও মাঠ কর্মীরা থেকে গেলেন। মাঠে তুলির শেষ আচড় দিচ্ছিলেন তারা। বেলা শেষের আলোয় সেই কর্মযজ্ঞও কম আকর্ষণীয় ছিল না। সূর্য তখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। আগের দুই বেলার চেয়ে ভিন্ন রূপ মাঠে। প্রেসবক্স থেকে উইকেটগুলো দেখা যাচ্ছিল পরিস্কার। বেশির ভাগ উইকেটেই তখন পর্যন্ত ঘাস দৃশ্যমান। এমনকি যে উইকেটে আজ খেলা হবে, সেটাতেও ঘাসের সবুজাভ আভা টের পাওয়া যায়। শেষ মুহূর্তে এই রূপ বদলাবে কি না কে জানে? তবে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা হয়ে বিপিএল এখন চট্টগ্রাম বলে এই উইকেট নিয়েও কিন্তু সবার কৌতূহল। চট্টগ্রামে বিপিএল মানেই যে রান উৎসব।
দর্শকরাও তাই চট্টগ্রাম পর্বের বিপিএলের কাছে একটু বেশি কিছুই চেয়ে থাকেন। শুধু দর্শকরা নয়, ক্রিকেটাররাও। শুভগত হোমের কথাই শুনুন। ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই সেনানীর নেতৃত্বেই খেলছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কাল অনুশীলনের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘শেষ কয়েক বছর থেকে যেটা দেখছি, এখানে হাইস্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে। ১৮০-১৯০ রান হচ্ছে। আশাকরি সে রকম উইকেট এবারও পাব।’ খুলনা টাইগার্সের আকবর আলীও বলেছেন একই কথা, ‘চট্টগ্রামের উইকেট তো সচারচর ভালো থাকে। উইকেট দেখে ভালো লাগছে। ম্যাচ ডেতে যদি ভালো উইকেটে খেলা হয়, অবশ্যই রান হবে।’
শুভাগত-আকবরদের প্রত্যাশা পূরণ হলে চট্টগ্রামে আগামী ১২টি ম্যাচে দর্শক যে দারুণ কিছু দেখবে, সেটা বলাই যায়। কারণ বাড়তি রোমাঞ্চের বাতাবরণ ছড়িয়েই দলগুলো বন্দর নগরীতে এসেছে। বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগটির দশম আসর এখন শেষের দিকে। ফের ঢাকায় ফিরে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনে দুটি ম্যাচ হওয়ার পরই শুরু হয়ে যাবে প্লে অফ পর্ব। তার আগে এই সাগরিকাতেই ঠিক হয়ে যাবে দলগুলোর ভাগ্য।
চট্টগ্রামের এই পর্ব তাই দলগুলোর জন্য প্লে-অফ নিশ্চিত করার মঞ্চ। অবশ্য এ মঞ্চ প্রস্তুত হওয়ার আগেই দুর্দান্ত ঢাকা ছিটকে গেছে বাজেভাবে ব্যর্থ হয়ে। বাকি ৬ দলই এখানে এসেছে প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা নিয়ে। গতবারের রানার্সআপ সিলেটের ভাগ্য অবশ্য সুতোয় ঝুলছে। তাদের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে আজ মাঠে নামতে যাওয়া চার দলের সঙ্গে ফরচুন বরিশালও দারুণভাবে লড়াইয়ে আছে। শেষ চারে যেতে পাঁচ দলের রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের বার্তা মিলছে তাই এই পর্যায়ে এসে।
এখন চট্টগ্রামের উইকেটে যদি বরাবরের মতো আচরণ করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এ রোমাঞ্চ বেড়ে যাবে ঢের। আর প্রতিটি ম্যাচই হবে দর্শকদের পয়সা উসুলের। তারার মেলাও একেবারে কম নেই এখানে। পিএসএলের ব্যস্ততা থাকায় বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা ফিরে গেছেন। তবে তাদের শূন্যতা ঢেকে দিয়েছেন ইমরাম তাহির, কেশব মহারাজ, জিমি নিশাম, ওয়েইন পারনেলের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চের বড় তারকারা।
ক্রিকেটের আগামী কটাদিন তাই সাগরিকার-এভাবে বোধ হয় বলাই যায়!