![পঁয়তাল্লিশেও বুড়ো নন তাহির](uploads/2024/02/15/1707978681.Imran-Tahir---Tofail.jpg)
বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই হলেই নাকি শরীরের সঙ্গে অনেক কিছুতেই আপস করতে হয়। ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো খেলায় তো এই কথা চূড়ান্ত সত্য। চল্লিশের আগেই থেমে যায় বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার। ব্যতিক্রম যে নেই, তা অবশ্য নয়। এই ব্যতিক্রমী গল্প যারা লিখে যান, তাদের একটি প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়। কীভাবে সম্ভব?
এবারের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহিরকেও এ প্রশ্ন শুনতে হয়েছে একাধিকবার। সবার কৌতূহল তিনি মুখে তো নিবারণ করেছেনেই। তারচেয়েও বেশি মিটিয়েছেন পারফরম্যান্স দিয়ে। কদিন পরই ৪৫ পূরণ করবেন এই লেগ স্পিনার। অথচ পাকিস্তান বংশোদ্ভূত এই দক্ষিণ আফ্রিকানকে মাঠে দেখে কে বলবে তা! মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে পটাপট ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। প্রতিটি উইকেটের পর মাঠে অনেকটা দূর পর্যন্ত ছুটেছেন। করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ‘সিইউ’ উদযাপন। যা কেবলই বিস্ময় উপহার দিচ্ছিল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তো আরও বড় বিস্ময় উপহার দেন তাহির। আঙুল উঁচিয়ে দেখান ভাঙা আঙুল নিয়ে এই পারফরম্যান্স তার।
বয়স নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাহিরকে। আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই বলেন, ‘আমার মনে হয় না বয়স কোনো বাধা। আমি এটা আসলে বলতে চাইতেছিলাম না। কিন্তু আমি আজকে ভাঙা আঙুল নিয়ে খেলেছি।’ এরপর তাহির নিজেই বলেন, ‘এটা আসলে দেখায় আমার খেলাটার প্রতি কতটা সম্মান আছে। কারণ এই সুযোগ আমি পাইনি যখন ছোট ছিলাম অথবা আমার বয়স ২০ ছিল। আমি যখন সুযোগ পেয়েছি, তখন আমার বয়স ৩২ বছর। এরপর আমি দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। যেটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আর এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমার স্বপ্ন দেরিতে এসেছে। কিন্তু আমি চাই না জেগে উঠে সেই স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে।’
তাহিরের মন্ত্র এখন একটাই। উপভোগ করে যাওয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও এই উপভোগের মন্ত্রেই বিশ্বজোড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন তিনি। পারফরম্যান্সও যে করছেন, তা তো সবশেষ ম্যাচই বলে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের মতো ব্যাটিং স্বর্গের উইকেটেও নিয়েছেন ৫ উইকেট।
তাহির ২ ম্যাচ খেলেই বিদায় নিয়েছেন। যাওয়ার আগে অবশ্য ফের চলতি আসরেই যোগ দেওয়ার আশার কথা জানিয়ে গেছেন। সেটা হলে তো হলোই। না হলেও দুই ম্যাচেই তাহির যে মায়াজাল ছড়িয়ে গেছেন, তা এই বিপিএল ভুলবে না নিশ্চিত। খুলনার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার আগে ঢাকায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে নেন ১ উইকেট। এসএ-২০ শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঢাকায় এসেই মাঠে নেমেছিলেন। আর মাঠে নেমে নিজের প্রথম বলেই তুলে নিয়েছিলেন উইকেট। সেদিনও দেখা গিয়েছিল তার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো সিইউ উদযাপন।
তাহির ফিরে যাওয়ার আগে বলে গেছেন ফের বিপিএলে আসার কথা। এমনকি বয়স নিয়ে প্রশ্নে ৫০ বছর বয়সেও খেলে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন। সেটা বিপিএলেও। তাহিরের কথাটা ছিল এমন- ‘আমার জন্য ৪৫, ৪৬, ৪৮ কোনো ব্যাপার না। যতক্ষণ অবধি আমি ভালোভাবে মুভ করছি, ভালো বল করছি, দলের জন্য কাজটা করে দিচ্ছি। তারা যেটা প্রত্যাশা করছে, সেটা যদি পূরণ করতে পারি, তারা আমাকে সম্মান করবে। না হলে আমি সম্মান হারাব। আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি। আপনি জানেন না হয়তো ৫০ বছর বয়সে খেলে আমি বিশ্বরেকর্ড করতে পারি। হতে পারে তখনও রংপুরের হয়ে খেলছি।’
সংবাদ সম্মেলনে তাহির যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, তখন মোটেও তাকে ৪৫ বছর বয়সী মনে হচ্ছিল না। সেটা কি খানিক আগের দুর্দান্ত কীর্তির জন্য? তাহিরের কোনো কিছুতেই আসলে এখনো বয়সের ছাপ নেই। সবচেয়ে বড় যে মনের দিক থেকে এখনো চির তরুণ তিনি। তাহিরের সাফল্যের সবচেয়ে বড় রহস্য হয়তো এটিই।