![এই সাকিবকে রুখবে কে?](uploads/2024/02/17/1708165319.Shakib-Al-Hasan..jpg)
চোখের সমস্যায় শুরু সাকিব আল হাসানের বিপিএল মিশন। প্রথম ম্যাচে সেই প্রভাব স্পষ্ট। ব্যাট হাতে মাত্র ২ রান করে আউট। ম্যাচ শেষে জানালেন খেলা সম্ভব না। তাই উড়াল দেন সিঙ্গাপুরে। এর আগে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে লন্ডনে শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। সব মিলিয়ে বিপিএল শুরুর আগে বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন সাকিব। সেটা স্পষ্ট ছিল বিপিএলে সাকিবের প্রথম পাঁচ ম্যাচে। দুই ম্যাচে তো তিনি খেলেন শুধুই বোলার হিসেবে। বাকি যে তিন ম্যাচে সাকিব ব্যাটিং করেন সেখানে তার ব্যাটে আসে কেবলমাত্র ৪ রান। যার মধ্যে এক ম্যাচে ছিল গোল্ডেন ডাক। এমন পারফরম্যান্সের পর সাকিব যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সেটা তো অবিশ্বাস্য।
শেষ চার ম্যাচে ৪৮ গড় ও ১৮১.১৩ স্ট্রাইক রেটে সাকিবের ব্যাটে আসে ১৯২ রান। ব্যাটিংয়ে অস্বস্তিতে থাকা সাকিব টুর্নামেন্টের শুরু থেকে বল হাতে ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। টুর্নামেন্ট যত এগোচ্ছে তত ক্ষুরধার হয়ে উঠছে সাকিবের পারফরম্যান্স। এমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সাকিবের ফর্মে ফেরা দেশের ক্রিকেটের জন্য সুখবরই বটে।
সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও সাকিবের শৈশবের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাটিং করতে না পারলে সাকিব খেলা ছেড়ে দিবে।’ চোখের সমস্যায় ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি বোধ করা সাকিব দিয়েছেন কঠোর জবাব। কথায় না, ব্যাট হাতে বোলারদের উপর তান্ডব চালিয়ে সেই জবাব দিয়েছেন। গত বিপিএলে সাকিব ছিলেন উড়ন্ত ছন্দে। প্রথম দিকে না পারলেও সঠিক ট্র্যাকে ফিরেছেন তিনি। তার ব্যাটিং-বোলিংয়ে বড় সব জয় পাচ্ছে রংপুর রাইডার্স।
সাকিব ব্যাটিংয়ে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সেটার প্রমাণ তার শেষ চার ম্যাচের পারফরম্যান্স। শেষ চার ম্যাচের দুটোতেই পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। বাকি দু’টিতে হাফ সেঞ্চুরি না পেলেও ব্যাট হাতে সাকিব ছিলেন বিধ্বংসী। শেষ চার ম্যাচের বিধ্বংসী ইনিংসে এবারের আসরে সাকিবের ব্যাটিং গড় ঠেকেছে ২৮-য়ে। স্ট্রাইক রেট ৪৪.৪৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭১.৯০।
বিপিএলে তার পারফরম্যান্স কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে দলের উপর, এমন প্রশ্ন করতে পারেন যে কেউ। সেখানেও হতাশ করেননি সাকিব। এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্টফুল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর তথ্য অনুযায়ী তার ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট ৪৭৪.৪২। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহাম্মদ নাঈমের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট ৩০৩.৬। দলের চাপের মুহূর্তে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে একজন ক্রিকেটার কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এর উপর নির্ভর করে ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট। সাকিবের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছেন।
ব্যাটিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখার তালিকায় ১১ নম্বরে আছেন সাকিব আল হাসান। এবারের বিপিএলে তার ব্যাটিং ইমপ্যাক্ট ২৫৪। মোট ইমপ্যাক্টের মধ্যে ২১৭.২ পয়েন্ট এসেছে দলের চাপের মুখে। বোলিংয়েও ইতিবাচক ইমপ্যাক্ট রাখা ক্রিকেটারের তালিকায় সাকিবের অবস্থান ৮ নম্বরে। বোলিংয়ে তার ইমপ্যাক্ট ২২০.৩। এর মধ্যে ১০ ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট এসেছে দলের চাপের মুখে। বোলিংয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকা সাকিব ৯ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৩ উইকেট। তার বোলিং গড় ১৬.৮৪ ও ইকোনমি রেট ৬.৩৭।
ব্যাটে-বলে সাকিবের এই ছন্দ থাকলে তাকে রুখে দেওয়ার সাধ্য আছে কার? এই প্রশ্নের জবাবে উত্তর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাকে থামিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য যে কম জনেরই আছে। ফর্মে থাকা সাকিব যে টুর্নামেন্ট সেরার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটা অবশ্য নতুন করে বলার প্রয়োজনীয়তা নেই।