![জাদুকর কিংবা রহস্যমানব](uploads/2024/02/18/1708254855.jadukor.jpg)
কোনটা বেশি আনন্দের? সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং না বোলিং? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অভিন্ন মতামত আসাই স্বাভাবিক। বিভেদও কি তৈরি হতে পারে? নাহ, সে ঝুঁকি নেই। ‘অলরাউন্ডার সাকিবকে দেখাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের’- এমন উত্তরেই তো সবটা মিটে যায়।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হয়ে আছেন সাকিব। এই সময়ে বাঁহাতের ঘূর্ণিতে যেমন মায়াজাল ছড়িয়েছেন, তেমনই ব্যাটিংয়েও তো কম বিনোদন জোগাননি। দেশের সেরা থেকে হয়েছেন বিশ্বসেরা। এমনকি সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গেও তার নাম উচ্চারিত হয় বেশ নিয়মিত। অনেকে অনেক কীর্তি তো তিনি নিজের করে নিয়েছেন বেশ আগেই। মাঠের এই সাকিবকে নিয়ে তাই মুগ্ধতার শেষ নেই অনেকের। মাঠের বাইরের নানা বিতর্ককে একপাশে সরিয়ে রেখে কীভাবে পারেন তিনি, এ উত্তরও তো খুঁজেন অনেকে। কিন্তু সে উত্তর কি আর কখনো মেলে? মেলে না। সাকিব তাই থেকে যান ক্রিকেট মাঠের একজন জাদুকর কিংবা রহস্যমানব হিসেবে। জাদুকর না রহস্যমানব? সাকিবের নামের সঙ্গে কোন বিশেষণ সবচেয়ে বেশি খাটে? সাগরিকায় সাকিবের সবশেষ দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে ‘রহস্যমানব’ শব্দটাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন সাকিব। যে কারণে তাকে আগেভাগেই দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলাকালেই জাতীয় নির্বাচনে ব্যস্ত সময় কাটে তার। নির্বাচনের মাঠেও অবশ্য বড়োসড়ো ছক্কাই হাঁকান তিনি। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরদিনই তাকে মাঠে নামার জন্য তৈরি হতে মাগুরা থেকে ঢাকায় ফিরতে দেখা যায়।
চোট কাটিয়ে বিপিএল দিয়েই সাকিব মাঠে ফিরেন, কিন্তু সেটা অর্ধেক সাকিব হয়ে! চোখের সমস্যায় ব্যাটই করতে পারছিলেন না তিনি। গত ২০ জানুয়ারি রংপুর রাইডার্সের হয়ে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা খেলে তাই সিঙ্গাপুর উড়ে যান চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে। মিস করেন দলের দ্বিতীয় ম্যাচ। যোগ দেন সিলেট পর্বে। কিন্তু দেখা মেলে ভিন্ন এক সাকিবের, যিনি আট নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন। কখনো দশজন ব্যাটার মাঠে নামলেও তিনি নামলেন না। অর্থাৎ একজন অলরাউন্ডার থেকে শুধুই বোলার হয়ে গিয়েছিলেন সাকিব।
বয়স তার ৩৭ ছুঁতে চলেছে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে সাকিব যে সমস্যার মুখোমুখি হলেন, তা শঙ্কার চোরাস্রোত বইয়ে দিচ্ছিল ভক্তের হৃদয়ে। শঙ্কাটা আরও বড় হচ্ছিল, যখন চিকিৎসকরা তার চোখের সমস্যাটা ধরতে পারছেন না বলে শোনা যাচ্ছিল। তাহলে কি এই সাকিব এখন থেকে কোনো কিছুর সঙ্গে আপস করেই খেলে যাবেন? শুধু একজন বোলার সাকিবকে দেখে কি দর্শকদের মন ভরবে? নাকি ক্যারিয়ারের শেষ সীমারেখায় চলে এসে থেমে যাওয়ার বাস্তবতা দেখছেন সাকিব?
এসব অনেক প্রশ্নের ভিড়েই সাকিব নিজেকে ফিরে পেতে থাকলেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ব্যাট হাতে চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। কিন্তু নিয়তির কি খেল। এ দফায় ‘গোল্ডেন ডাক’। তবে এরপর থেকেই তার বদলে যাওয়া। ঢাকায় ২০ বলে ৩৪ ও ১৬ বলে ২৭ রানের দুটি ইনিংস খেললেন। এরপর চট্টগ্রামের সাগরতীরের মাঠে এসে তো তার ব্যাট হয়ে উঠল উত্তাল। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৩১ বলে ৬৯ রানের ইনিংসের পর পরশু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলেছেন ৩৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস। এই দুই ম্যাচে সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার ব্যাটিং দেখতে হয়েছে। সঙ্গে বোলিং তো রয়েছেই। ৯ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল বোলারদের একজন তিনি।
এই সাকিব ২০১৯ বিশ্বকাপে দেখানো তার সেই বিস্ময়কর পারফরম্যান্সের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সেই সাকিবই কি ফের হাজির বিপিএলের মঞ্চে? অথচ এই কয়েক দিন আগের চিত্রটার কথাই ভাবুন। নাহ, এই সাকিব জাদুকরী তো বটেই, রহস্যমানবও। তাকে নিয়ে আগাম বলা যায় না কিছুই!