![চট্টগ্রামে বিপিএলের সফল মঞ্চায়ন](uploads/2024/02/22/1708585411.BPL-CTG..jpg)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার প্রদর্শনী। হবে রানের ফুলঝুরি। বিপিএলের দশম আসর চট্টগ্রামে গিয়ে যেন পূর্ণতা পেয়েছিল অনেকটাই। দলগত ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের পাশাপাশি সেরা বোলিংও হয়েছে চট্টগ্রামে। দুশোর্ধ্ব ইনিংস হয়েছে একাধিকই। সেঞ্চুরিও হয়েছে একাধিক। এমন কি পাঁচ উইকেট নেওয়ার ঘটনাও হয়েছে একাধিক। বাদ যায়নি হ্যাটট্রিকও। আবার মান সম্পন্ন বিশ্ব মানের ক্রিকেটারদের উপস্থিতিও বেড়েছিল। সব মিলিয়ে দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন চট্টগ্রামে ৮ দিন স্থায়ী বিপিএল।
৮ দিন চট্টগ্রামে অবস্থানকালীন বিপিএলে পেয়ে গেছে প্লে অফের তিন দলকেও। দল তিনটি হলো রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বাকি একটি আসনের জন্য লড়াই হবে ফরচুন বরিশাল ও খুলনা টাইগার্সের জন্য। এখানে আবার এগিয়ে বরিশাল। শেষ ম্যাচে তারা যদি কুমিল্লাকে হারাতে পারে, তাহলে চলে যাবে প্লে অফ রাউন্ডে। আর যদি হেরেও যায়, সেক্ষেত্রেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। কারণ খুলনাকে তাদের শেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে জিততে হবে বড় ব্যবধানে। আপত দৃষ্টিতে খুলনার জন্য যা কঠিনই মনে হচ্ছে। লিগ পর্বের খেলা বাকি আছে এই দুটিই। এই দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় ২৩ ফেব্রুয়ারি। ৭ দলের আসর থেকে বাদ পড়েছে বর্তমান রানার্সআপ সিলেট স্ট্রাইকার্স ও নবাগত দুর্দান্ত ঢাকা। সিলেট ক্ষীণ সম্ভাবান নিয়ে চট্টগ্রাম গেলেও ঢাকা আগেই বাদ পড়ে গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচ জেতার পর তারা টানা ১১ ম্যাচ হেরেছে।
ঢাকায় দুই দফা ও সিলেটে বিপিএল দর্শকদের খুব একটা আনন্দ দিতে পারেনি। ব্যক্তিগত ইনিংস যেমন বড় হচ্ছিল না, তেমনি দলগত ইনিংসও। তারপরও ঢাকা থেকে সিলেট গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসার পর প্রথমবারের মতো দলগত সংগ্রহ দুই শ পার হয়েছিল। চট্টগ্রামের বিপক্ষে রংপুর করেছিল ৩ উইকেটে ২১১ রান। এখন এই রান তিনে নেমে এসেছে। চট্টগ্রামে দুশোর্ধ্ব রানের দুটি ইনিংসই হয়েছে প্রথম দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে কুমিল্লা করেছিল ৩ উইকেটে ২৩৯ রান। এই রান আবার বিপিএলের ইতিহাসেও দলগত সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে সমান রান রংপুরও করেছিল ৪ উইকেট হারিয়ে। প্রতিপক্ষ ছিল এই চট্টগ্রাম ভাইকিংস। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে রংপুর করেছিল ৫ উইকেটে ২১৯ রান। বিপিএলের ইতিহাসে দলগত সর্বোচ্চ ১০টি ইনিংসের প্রথম ৯টিই হয়েছে চট্টগ্রামে। রান ফায়ারার চট্টগ্রামে দলগত সর্বনিম্ন রান ছিল খুলনার ১২৭। প্রতিপক্ষ ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
ঢাকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে কুমিল্লার তাওহিদ হৃদয় অপরাজিত ১০৮ রান করেছিলেন। চট্টগ্রামে প্রথম দিনই স্বাগতিকদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি উপহার দেন একই দলের বিদেশি ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের উইল জ্যাকস অপরাজিত ১০৮ রানের ইনিংস খেলে। তবে তাদেরকে পেছনে ফেলে চূড়ায় উঠে বসেন শেষ দিন স্বাগতিক দলের ওপেনার তানজিদ তামিম ১১৬ রানের ইনিংস খেলে। এ ছাড়া তাওহিদ হৃদয় দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পাননি। খুলনার বিপক্ষে ৯১ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ঢাকায় প্রথম পর্বে ও সিলেটে সবার ওপরে ছিলেন ফরচুন বরিশালের মুশফিকুর রহিম। ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বে ৯ ম্যাচে ২৬৬ রান করে শীর্ষে উঠে এসেছিলেন দুর্দান্ত ঢাকার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। এখন তিনি নেমে গেছেন পাঁচে। ১২ ম্যাচে তার রান ৩১০। ১১ ম্যাচে ৩৮২ রান করে সবার ওপরে তানজিদ তামিম। সমান ম্যাচে ৩৫৮ রান করে দুইয়ে কুমিল্লার তাওহিদ হৃদয়। ১১ ম্যাচে ৩৫২ রান করে প্রথম পাঁচ জনের মাঝে একমাত্র বিদেশি দুর্দান্ত ঢাকার আলেকজান্ডার আয়ান রোজ। তিনি আছেন তিনে। এর পরের নামটিই বরিশালের কাপ্তান তামিম ইকবালের। ১১ ম্যাচে তার রান ৩২৫।
ব্যাটিংয়ের শীর্ষস্থানে পরিবর্তন হলেও বোলিংয়ের শীর্ষস্থানের পরিবর্তন হয়নি। শুরু থেকেই উইকেট শিকারির তালিকায় নিজের নামটি ধরে রেখেছেন ঢাকার শরিফুল। ২২ উইকেট নিয়ে তিনি সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঢাকায় প্রথম পর্বে সর্বাধিক ৫টি করে উইকেট ছিল শরিফুলের সঙ্গে কুমিল্লার মোস্তাফিজুর রহমান ও বরিশালের সৈয়দ খালেদ আহমেদেরও। সিলেটে গিয়েও সর্বাধিক ১০টি উইকেট ছিল শরিফুলের। তার সঙ্গে এবার শামিল ছিলেন রংপুরের শেখ মাহেদী হাসান ও সিলেটের এনগ্রাবা। আবার ঢাকায় ফিরে আসার পর শরিফুল ১৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরেই থাকেন। এবার আর কেউ তার সঙ্গে ভাগ বসাতে পারেননি। ১২ উইকেট নিয়ে দুইয়ে ছিলেন শেখ মাহেদী হাসান। চট্টগ্রাম পর্ব শেষেও দুইয়ে থাকা সাকিবের সঙ্গে শরিফুলের উইকেটের ব্যবধান ৫টি।
চট্টগ্রামে ৫ উইকেট নেওয়ার ঘটনা আছে দুটি। ঢাকায় খুলনার বিপক্ষে কুমিল্লার আমির জামালের ২৩ রানে ৫ উইকেট নেমে এসেছে দুইয়ে। সেরা বোলিং রংপুরের আবু হায়দার রনির। বরিশালের বিপক্ষে তিনি ১২ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এ ছাড়া চট্টগ্রামে প্রথম দিন দুটি ম্যাচেই দুশোর্ধ্ব রানেই ইনিংসের সঙ্গে রংপুরের ইমরান তাহিরও নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। চট্টগ্রামের বিপক্ষে তিনি ২৬ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এই একই দিন হ্যাটট্রিকেরও ঘটনা ছিল। রান ফোয়ারের ম্যাচে কুমিল্লার মঈন আলী চট্টগ্রামের বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৩.৩ ওভার বোলিং করে ২৩ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এবারের আসরে এটি ছিল দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন আসরের প্রথম ম্যাচে ঢাকার শরিফুল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লারে বিপক্ষে তিনি ৪ ওভারে ২৭ রান নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।