![কুমিল্লার পঞ্চম, না বরিশালের প্রথম](uploads/2024/03/01/1709265055.BPL.jpg)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পঞ্চম নাকি ফরচুন বরিশালের প্রথম শিরোপা? সেই উত্তর মেলাতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। বিপিএলের প্রথম দল হিসেবে হ্যাটট্রিক শিরোপার দ্বারপ্রান্তে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে বিপিএলের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ফরচুন বরিশাল। ফাইনালের আগের দিন গতকাল মিরপুরে ছিল না কোনো সাজসাজ রব কিংবা উত্তেজনা। কারণ, দুই ফাইনালিস্টের মধ্যে যে শুধু কুমিল্লাই এসেছিল অনুশীলনে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করা বরিশাল সময় কাটিয়েছে টিম হোটেলে। তারা চেষ্টা করেছে ফাইনালের আগে যতটুকু সম্ভব নির্ভার থাকতে।
দুই দল কিন্তু এবারই প্রথম ফাইনাল খেলছে না। এর আগে ২০২২ সালে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে কুমিল্লা ১ রানে জিতেছিল। বিভিন্ন নামে খেলে বরিশাল এর আগে তিনবার ফাইনাল খেলে একবারই জিততে পারেনি শিরোপা। এবার তাদের খরা কাটানোর পালা।
ফাইনালের আগে কুমিল্লার অনুশীলনে অবশ্য খুব বেশি সিরিয়াসনেস দেখা যায়নি। খানিকটা হালকা অনুশীলনেই সময় পার করেছে। আবশ্যিক অনুশীলন না হওয়ায় ছিল না পুরো স্কোয়াড। এই অনুশীলন সেশনে কুমিল্লা শিবিরে স্বস্তি ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। মাথায় আঘাত পাওয়ায় দলের শেষ চার ম্যাচে ছিলেন না। বিসিবি থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে শুরু করেছেন অনুশীলন। অনুশীলনে ফেরা মোস্তাফিজকে আজ ফাইনালের মঞ্চেও দেখা যেতে পারে। তাকে নিয়ে কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ভাষ্য ছিল এই রকম- আমি সব সময়ই তো তাকে চাই। তার এই কথায় স্পষ্ট আভাস, মোস্তাফিজকে আজকের ম্যাচে দেখা যাবে।
হ্যাটট্রিক শিরোপার দৌড়ে থাকা কুমিল্লার বিপিএলের ফাইনাল খেলা নিয়মিত ব্যাপার। এখন পর্যন্ত চার ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা ঘরে তুলেছে দলটি। ফলে দলের খেলোয়াড়দের আছে ফাইনালে খেলার চাপ নেওয়ার অভিজ্ঞতা। এখানেও নিজ দলকে এগিয়ে রাখেন সালাউদ্দিন। দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটারদের ওপরও রাখছেন আস্থা। কারণ শেষ দুই ফাইনালে যে মঈন আলী, সুনিল নারিনদের পেয়েছিল তারা। এবারও তাদেরকে কুমিল্লার জার্সিতে ফাইনালে খেলতে দেখা যাবে। সঙ্গে আন্দ্রে রাসেল আর উইল জ্যাকস।
অন্যদিকে বরিশালে খেলা মুশফিকুর রহিম-মেহেদি হাসান মিরাজরা খেলেছেন বিপিএলের ফাইনাল। কিন্তু তাদের শিরোপা ঘরে তোলার সুযোগ হয়নি কখনো। এবার ওই আক্ষেপ মেটাতে চান দুজনই। ফাইনাল নিশ্চিতের পর মুশফিক জানান, তিনি এবার শিরোপা জিততে চান। ফাইনালের আগের দিন অফিসিয়াল ফটোশুটের পর মিরাজ বলেন, ‘কখনো বিপিএলে ট্রফি জিতিনি। যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হব। এর আগে দুবার ফাইনাল খেলেছি, এটা নিয়ে তৃতীয়বার হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব।’ এই দিকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের পর ফরচুন বরিশাল শিবির ছাড়ার কথা ছিল প্রোটিয়া ব্যাটার ডেভিড মিলারের। দল ফাইনালে ওঠায় অবশ্য এখনই ফিরছেন না। ফাইনালে বরিশালের জার্সিতে দেখা যাবে। ফাইনালের আগে দুদল নতুন কোনো ক্রিকেটারকে যুক্ত করছে না দলে। পুরোনোদের নিয়েই খেলবে ফাইনালে।
ফাইনালের আগে ছিল বিপিএলের ফটোশুটের আনুষ্ঠানিকতা। পুরোনো ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিলে ছিল ক্যাপ্টেনস ফটোশুট। কিন্তু তেতো হলেও সত্য দুই দলের কেউই অধিনায়ককে পাঠায়নি সেখানে। ছিলেন দুই দলের সহ-অধিনায়ক। বরিশালের হয়ে মিরাজ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে আসেন জাকের আলী অনিক। সেখানেও কথা হয়েছে বিপিএলের ফাইনাল নিয়ে। শিরোপা জয়ের প্রশ্নে মিরাজ বলেন, ‘সবাই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে, কুমিল্লাও চায়। মাঠে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।’ প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান রেখে মিরাজ যোগ করেন, ‘আশা করছি, আবার ভালো একটা ম্যাচ হবে, সবাই উপভোগ করবে। কুমিল্লা সব সময়ই অনেক বড় দল, তারা অনেক ভালো দল সব সময়ই গড়ে। প্রতিপক্ষ হিসেবে চ্যালেঞ্জিং হবে, সহজ হবে না। দুই দলের খেলাটা ভালো হবে।’
অন্যদিকে বিপিএলের ফাইনালে খেলে অভ্যস্ত কুমিল্লার জাকের আলী অনিক বলেন, ‘ফাইনালে উঠলেই যে ট্রফি পেয়ে যাব, এমন কিছু নয়। পারফর্ম করেই কুমিল্লা প্রতিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যদি চ্যাম্পিয়ন হতে হয়, ফাইনালেও আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে।’ আগের ফাইনালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা ফাইনাল খেলতে অভ্যস্ত। আমরা দল হিসেবে জানি, কীভাবে বড় ম্যাচে পারফর্ম করতে হয়। আমাদের মনোযোগ সেখানেই থাকবে।’
হ্যাটট্রিক শিরোপার লক্ষ্যে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা কুমিল্লা অবশ্য প্রতিপক্ষকে দিচ্ছে যথেষ্ট সম্মান। জাকেরের কথায়, ‘যেহেতু ম্যাচটি ফাইনাল, অবশ্যই বরিশাল ভালো খেলেই এত দূর এসেছে। আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে সব দলকেই সম্মান করি। ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হবে না। সব সময় চেষ্টা করি সেরা ক্রিকেট খেলতে, ফাইনালেও সেরাটা খেলার চেষ্টা করব।’
ফাইনালের আগে খানিকটা বিতর্কের জায়গা ছিল ক্যাপ্টেন ফটোশুট নিয়ে। সেখানে লিটনের না থাকা নিয়ে কোচ সালাউদ্দিনের স্পষ্ট জবাব ছিল, ‘কালকে (আজ) আমার ফাইনাল খেলা। এখন আমার অধিনায়ককে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন আড়াই ঘণ্টা জার্নি করে, আবার সে আড়াই ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা জার্নি করে এখানে (মিরপুর) আসবে। তার তো ট্রফি দেখার চেয়ে ট্রফিটা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতিটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক না?’ তামিমের ব্যাপারেও একই মত পোষণ করেন কোচ সালাউদ্দিন।