![ইংল্যান্ডের আজ অস্ট্রেলিয়া পরীক্ষা](uploads/2023/11/04/1699075235.preview-aus-vs-eng.jpg)
‘ইংল্যান্ডের আজ অস্ট্রেলিয়া পরীক্ষা’- এমন শিরোনাম দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং এটাই বাস্তব। কঠিন এবং চরমতম পরীক্ষার মুখে এখন বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ভারত বিশ্বকাপে যেভাবে খেলছে ইংল্যান্ডের জন্য এমন শিরোনামই যথার্থ। ছয় ম্যাচে মাত্র এক জয়, হার পাঁচটিতে। মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সবার নিচে অবস্থান ইংলিশদের। সেমি দূরে থাক, ইংল্যান্ডের লক্ষ্য এখন সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত করা।
আজ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলে সেমিফাইনালের আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে জস বাটলার, জো রুটদের। অন্যদিকে ইংলিশরা জিতে গেলে কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়াবে অস্ট্রেলিয়া। জিতলে শেষ চারের পথ সুগম হবে স্মিথ, ওয়ার্নার, কামিন্সদের। ছয় খেলায় চার জয় এবং দুই হারে অজিদের সংগ্রহ এখন ৮ পয়েন্ট। টেবিলের ৩ নম্বরে অবস্থান দলটির।
আহমেদাবাদের ম্যাচটি অজিদের জন্য প্রতিশোধেরও। চার বছর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চেই সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। নিজেদের ঘরের মাঠ বার্মিংহামের এজবাস্টনে ওই ম্যাচটি জিতেছিল ইংল্যান্ড। হেরে সেদিন শিরোপা মঞ্চে ওঠার আফসোসে পুড়েছিল অজিরা। সেই হারের বদলা এবার ভারত বিশ্বকাপে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অজিদের সামনে। ইংলিশরা যেভাবে পারফরম্যান্স করছেন তাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশোধ নেওয়াটা মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার। তবে দলটা যেহেতু ইংল্যান্ড, সেহেতু অতি আত্মবিশ্বাসী হলে বিপদে পড়ার শঙ্কাকেও তুলে রাখলে চলবে না।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিশোধের ম্যাচে আজ অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে ছাড়াই লড়তে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। আঘাত পাওয়ায় এই ম্যাচে থাকছেন না ম্যাক্সওয়েল। ব্যক্তিগত কারণে বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন মার্শ। ভারত বিশ্বকাপে মার্শের ফেরা নিয়ে রয়েছে সংশয়! এই দুজনের পরিবর্তে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অজি দলে দেখা যেতে পারে শন অ্যাবটকে। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরছেন অলরাউন্ডার মারকাস স্টয়নিস ও ক্যামেরুন গ্রিন। ইংল্যান্ড দলেও ইনজুরির সমস্যা রয়েছে। আঙুলের চোটে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন ইংলিশ বাহাতি পেসার রেসি টপলি। তার পরিবর্তে সুযোগ দেওয়া হতে পারে ব্রাইডন কার্সকে। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা দলের সবাইকেই সুযোগ দিয়েছেন ইংলিশ নির্বাচকরা। বাদ ছিলেন কার্স। অজিদের বিপক্ষে তাকেও নামানো হতে পারে- অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমের বরাতে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
হার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের কাছে হেরে যায় প্যাট কামিন্সের দল। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও হার জোটে। এরপর টানা চার ম্যাচে জয়ী দল অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস হয়ে সর্বশেষ ম্যাচে হারায় প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে। দারুণ ছন্দে রয়েছেন অজি ব্যাটার-বোলাররা। আজ পঞ্চম জয়ের পথে বাধা ইংল্যান্ড।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু ইংল্যান্ডেরও। এরপর বাংলাদেশকে হারালেও পরে টানা চার ম্যাচে নিতে হয় হারের তেতো স্বাদ। আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এবং সর্বশেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের কাছে হার মানে বাটলার বাহিনী।
যদিও সর্বশেষ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ওটাই বিশ্বকাপে অজিদের বিপক্ষে সেরা সাফল্য দলটির। এর বাইরে ১৯৯২ এবং ১৯৭৯ বিশ্বকাপে অজিদের হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির। বিশ্বকাপে ৯ বারের দেখায় ছয়বারই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া; তিন জয় ইংল্যান্ডের। সর্বশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হারলেও গ্রুপ পর্বে জয়ী দল কিন্তু অজিরা। এ ছাড়া ২০১৫, ২০০৭, ২০০৩, ১৯৮৭ এবং ১৯৭৫ (প্রথম বিশ্বকাপ) অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড।
মোট ওয়ানডের জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে অজিরা। অস্ট্রেলিয়ার ৮৭ জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ডের জয় ৬৩ ম্যাচে। দুটি ম্যাচ টাই ও তিনটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। আজ আহমেদাবাদের যে পিচে খেলবে অস্ট্রেলিয়া এখানে বিশ্বকাপের আগে আরও দুটি ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। তাতে এক জয় এবং এক হার জুটেছে। এবারের বিশ্বকাপে এই পিচে দুটি ম্যাচ হয়েছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ইংলিশরা নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। অন্য ম্যাচটি হয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সেখানে জয় ভারতের। দুটি ম্যাচই পরে ব্যাট করা দল জিতেছে। আজ টস যারা জিতবে তারা নেবে ফিল্ডিং, তা অনুমেয়। সন্ধ্যার পর মাঠে শিশির পড়ে পিচ ভেজার হিসাবটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে দুই দলকে।
সম্ভাব্য দুই দল
অস্ট্রেলিয়া: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), শন অ্যাবট, মার্নাস লাবুশানে, ক্যামেরুন গ্রিন, ট্রাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার, স্মিভ স্মিথ, অ্যাডাম জাম্পা, মারকাস স্টয়নিস, মিচেল স্টার্ক এবং জস হ্যাজলউড।
ইংল্যান্ড: জস বাটলার (অধিনায়ক), মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো, ব্রাইডেন কার্স, লিয়াম লিভিংস্টোন, ডেভিড মালান, আদিল রশিদ, জো রুট, বেন স্টোকস, ডেভিড উইলি ও মার্ক উড।