![বরিশালে জাঁকজমক দীপাবলি উৎসব](uploads/2023/11/12/1699762515.1.jpg)
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব পালিত হলো বরিশাল মহাশ্মশানে। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে নগরীর কাউনিয়ার বিসিসিক রোডে অবস্থিত মহাশ্মান ঘাটে প্রতি বছর দীপাবলি উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর তিথি নক্ষত্র অনুযায়ী শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকাল থেকে সমাধিতে পূর্বপুরুষদের স্মৃতিতে মোম প্রজ্বালন করে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন স্বজনরা।
বরিশাল মহাশ্মশানের প্রায় ছয় একর জায়গাসহ আশপাশের এলাকা স্বজনদের মোমের আলোয় ঝলমলে ওঠে। সন্ধ্যা গড়াতে না গড়াতে প্রায় ৭০ হাজার সমাধির মোমের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মহাশ্মশানের এলাকা। চারপাশে ছড়িয়ে পরে আলোর রশ্মি। প্রতিটি সমাধি মন্দিরে রাখা হয় প্রিয়জনদের প্রিয় খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছদ।
কালীপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশীর পুণ্য তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রয়াত স্বজনের সমাধিতে দ্বীপ জ্বেলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের এই ধর্মীয় আচারটি ২০০ বছর ধরে সর্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
ঝালকাঠী থেকে আশার জগদীশ রায় বলেন, ‘এখানে আমার বাবা-দাদুর সমাধি। প্রতি বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে তাদের আত্মার শান্তি কমানার জন্য আসি। সারা রাত তাদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য প্রার্থনা করব। যাতে পরপারে তারা ভালো থাকেন।’
নগরীর ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা অনিমেষ সাহা লিটু বলেন, ‘চার বছর হয়েছে মাকে হারিয়েছি। সেই থেকে দুই বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বাবা-মার আত্মার মঙ্গল কামানায় এখানে এসেছি। মা বেঁচে থাকতে যা যা পছন্দ করতেন সেই ফল, মিষ্টি ও পায়েস নিয়ে এসেছি। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এখন প্রার্থনার আসরে আছি।’
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, দীপাবলি অনুষ্ঠানে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। স্বজনরা ভূত চতুর্দশীর পুণ্য তিথি অনুযায়ী যে যার মতো করে প্রয়াত স্বজনের সমাধিতে দ্বীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। যাদের স্বজন নেই এমন প্রায় এক হাজার সমাধি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আলোকিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্তর এই মহাশ্মশানে কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু, দনবীর অমৃতলাল দে, শিক্ষাবিদ কালী চন্দ্র ঘোষ, ২০০৫ সালে ঝালকাঠীতে জেএমবির বোমা হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের সমাধি মন্দিরসহ বহু খ্যাতিমান নারী-পুরুষের সমাধি রয়েছে।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি বলেন, ‘দীপাবলি উৎসব ঘিরে মহাশ্মশান এলাকায় প্রতিবারের মতো মেলা বসেছে। কমিটির পক্ষ থেকে তোরণ নির্মাণ এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীপাবলির দিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ নানা ধর্মের মানুষের ঢল নামে মহাশ্মশানে। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব শুধু বরিশাল মহাশ্মশানেই হয়ে থাকে। ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে এসেছেন প্রয়াত স্বজনের স্মরণ করতে।’
মঈনুল ইসলাম/ইসরাত/অমিয়/