ফুটবলের দেশ জার্মানিতে সবশেষ ফুটবলের বড় কোনো আসর বসেছিল ২০০৬ সালে। সেবার জার্মানরা আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল। দেড়যুগ অপেক্ষার পর ফের কোনো আসর ফুটবলের বড় কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে দেশটি। ইউরোপ সেরার লড়াই আয়োজনের আগে জার্মানিজুড়ে তৈরি হয়েছে বর্ণবাদ বিতর্ক। ২০১২ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত ডানপন্থি রাজনৈতিক দল অল্টারনেটিভ অব জার্মানি (এএফডি) অভিবাসনবিরোধী দল। পাশাপাশি মুসলিমবিরোধী মনোভাবও পোষণ করে তারা। দিনকে দিন তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশটিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বর্ণবাদ বিতর্ক। যার প্রভাব পড়েছে জার্মান ফুটবলেও। যার প্রমাণ দেশটির প্রতি পাঁচজন নাগরিকের মধ্যে একজনের চাওয়া হচ্ছে জার্মান ফুটবল দলে সুযোগ দেওয়া হোক বাড়তি শেতাঙ্গ ফুটবলারদের। এমন বিতর্কের মধ্যে শনিবার (১৫ জুন) থেকে জার্মানির মিউনিখে শুরু হবে ইউরোর এবারের আসর।
ইউরো শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ওয়েস্ট জার্মানি রেডিও ও টেলিভিশন করপোরেশন (ডব্লিউডিআর) একটি জরিপে জানায় প্রতি পাঁচ জার্মান নাগরিকের মধ্যে একজন চান দেশটির ফুটবল দলে শেতাঙ্গ ফুটবলারের সংখ্যা বাড়ানো হোক। এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২১ শতাংশ জার্মান। এ ছাড়া ১৭ শতাংশ জার্মান নাগরিক ইলকায় গুন্ডোগানকে অধিনায়ক হিসেবে পছন্দ করেন না। শেতাঙ্গ হওয়ার পরও তাকে পছন্দ না করার একমাত্র কারণ তিনি তুরস্ক বংশোদ্ভূত। এমন ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ দেশটির কোচ জুলিয়ান ন্যাগেলসম্যান। তিনি বলেন, ‘এটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না।’ দলটির গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার জশুয়া কিমিখ বলেন, ‘যারা ছোট থেকে ফুটবলের সঙ্গে বড় হয়েছে সে জানে এগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা। ফুটবল কীভাবে বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন রং এবং বিভিন্ন ধর্মকে একত্রিত করতে পারে তার একটি ভালো উদাহরণ। এটাই আমাদের দল। এখানে না থাকলে আমি অনেক খেলোয়াড়কে মিস করতাম। এটা একেবারে বর্ণবাদী (জরিপ) এবং আমাদের ড্রেসিংরুমে এর কোনো স্থান নেই।’
অভিবাসন নীতি খানিকটা সহজ হওয়ায় জার্মানিতে অভিবাসীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। যার প্রভাব আছে দেশটির ফুটবল দলেও। ভিন্ন শেকড়ের ফুটবলারদের তাই দেখা যায় জার্মানদের জার্সি গায়ে মাঠ মাতাতে। জার্মান ফুটবলকে অনেক সাফল্য উপহার দেওয়া অভিবাসী ফুটবলারদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয় জরিপ প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানে। সেখানে বলা হয়, ‘একটা পক্ষ জার্মানির হয়ে খেলে গর্ববোধ করে। তবে জার্মানি ওই পক্ষকে নিয়ে গর্ববোধ করে না।’ পাশাপাশি তাদের দাবি, পুরোনো শেতাঙ্গ জার্মানরাই প্রকৃত জার্মান এবং কেউ নাগরিকত্ব পেলেই প্রকৃত জার্মান হতে পারেন না।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের দল এসপিডির ২৯ আসনের বিপরীতে ডানপন্থি এএফডির পেয়েছে ১৫ আসন। তাতে স্পষ্ট দিনকে দিন বাড়ছে এএফডির জনপ্রিয়তা। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। ইউরো সংশ্লিষ্টদের ধারণা মাঠে সমর্থকদের কাছ থেকে খেলোয়াড়রা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে পারেন। তবে জার্মানিতে ফুটবলারদের বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) নিজেদের খেলোয়াড় মেসুত ওজিলকে বর্ণবাদী আচরণ থেকে বাঁচাতে পারেনি। ফলে ফুটবলারদের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে বর্ণবাদী আচরণ সহ্য করা। ডিএফবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফেডেরিখ কার্টিয়াস জানান, ড্রেসিংরুমে থাকা সকল অভিবাসী ফুটবলাররা দলের ভেতরে থাকা সম্পর্কের বন্ধন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি আরও যোগ করেন, ফুটবলে এমন বর্ণবাদী আচরণ ও বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। কোনো কারণে এমন কিছু হলে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা উচিত।
চলতি বছরের মে মাসে থাইল্যান্ডে বসেছিল ফিফা কংগ্রেস। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্ণবাদ ও যেকোনো ধরনের বৈষম্যকে গণ্য করা হবে আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে। শুধু ফুটবলার, ম্যাচ অফিশিয়ালস কিংবা খেলার সঙ্গে জড়িতরা নয়, সমর্থকদের জন্যও আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হবে। জার্মানিতে ইউরো চলাকালে এমন বর্ণবাদী আচরণ করলে দর্শকদের শাস্তির কবলে পড়তে হবে।