মাঠে খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেপাল। আর বাইরে থেকে টেনশন বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের। এর কারণ নেপালের জয়ের সম্ভাবনা। দক্ষিণ আফ্রিকার ৭ উইকেটে করা ১১৫ রান তাড়া করতে নেমে শেষ পযন্ত তারা টনাটান উত্তেজনার জন্ম দিয়ে হেরেছে ১ রানে।
এই একই ভেন্যুতে সোমবার বাংলাদেশ খেলবে নেপালের বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইটে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ নিজেদের বেশ এগিয়ে রেখেছে। শেষ নেপাল হওয়াতে সেখানে অনেকটা নির্ভার কাজ করছে। কিন্তু নেপাল জিতে গেলে ‘ডি’ গ্রুপের সমীকরণই বদলে যেতে। তখন বাংলাদেশ-নেপাল দুই দলেরই সুপার এইটে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো। ৩ ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ ও নেপাল ৩ পয়েন্ট নিয়ে খেলতে নামত। ২ পয়েন্ট নিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডস বাদ পড়ে যেতো। শেষ ম্যাচে তারা শ্রীলঙ্কাকে হারালেও ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে যেতে পারত না। কারণ বাংলাদেশ জিতলে ৬ আর নেপাল জিতলে ৫ পয়েন্ট হতো। তখন বাংলাদেশ-নেপালের ম্যাচটি পরিণত হতো গ্রুপের অলিখিত সেমি ফাইনাল। ম্যাচে নতুন করে প্রাণ তৈরি হতো। কিন্তু শেষ পযন্ত তা আর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নেপাল নতুন করে রূপকথা লিখতে পারেনি। নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ মাঠে নামবে আগের সমীকরণেই। হারাতে হবে নেপালকে। আর হারাতে না পারলেও শ্রীলঙ্কা-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। নেদারল্যোন্ডস হেরে গেলে বাংলাদেশ চলে যাবে সুপার এইটে। আর নেদারল্যান্ডস জিতলে দুই দলের পয়েন্ট হবে সমান। তখন নেট রান রেট সামনে চলে আসবে!
নেপাল হয়তো হেরে গিয়ে বাংলাদেশকে এক হিসেবে টেনশনমুক্ত রেখেছে। কিন্তু যে ম্যাচ তারা হেরেছে, সেটি ছিল অবিশ্বস্য। বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে ছিল তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৩ রান তাড়া করতে নেমে এক পযায়ে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬ উইকেটে ১৮ বলে ২০ রান।
উইকেটে দুই সেট ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ ৩৭ ও তাওহীদ হৃদয় ১৬ রানে অপরাজিত। সেখান থেকে বাংলাদেশ আর ২০ রান করতে পারেনি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রানের। ৫ রান সংগ্রহ করে হেরেছিল ৪ রানে। নেপালের শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রানের। হাতে ছিল ৬ উইকেট। তাদের এই অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন মূলত ওপেনার আসিফ শেখ ও অনিল শাহ তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান যোগ করে। এই জুটি যখন ভাঙ্গে, তখন তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৮ বলে ৩১ রানের। সেখান থেকে শেষ ৩ ওভারের সমীকরণ দাঁড়িয়েছিল ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮ বলে ১৮ রানের।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭ নম্বার ওভারে রাবাদা হৃদয়কে আউট করে ২ রান দিয়ে সমীকরণ দাঁড় করিয়েছিলেন ৫ উইকেটে ১২ বলে ১৮ রানের। নেপালর বিপক্ষে ১৭ নম্বার করেন তাবরাইজ সামসি। তিনি ২ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন। যেখানে ছিল সেট ব্যাটার ওপেনার আসিফ শেখও ( ৪২)। শেষ ২ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৫ উইকেটে ১৬ রানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ নম্বার ওভার বার্তম্যান করে রান দিয়েছিলেন ৭। নেপালের বিপক্ষে এই ওভার করেন নরকিয়া। প্রথম ৪ বলে কোনো রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচকে নেপালের জন্য কঠিন করে তুলেন। কিন্তু পঞ্চম বলে সম্পাল খান ছক্কা মারলে ম্যাচের পাল্লা আবার নেপালের দিকে হেলে পড়ে। শেষ বলে ২ রান নিয়ে সমীকরণ অনেকটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে নেপাল। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৮ রানের। হাতে উইকেট ৪টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ওভার করেছিলেন কেশব মহারাজ। চরম উত্তেজনার জন্ম দিয়ে কেশব মহারাজ ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জিততে দেননি ম্যাচ। নেপালের বিপক্ষে শেষ ওভার করেন বাতম্যান। প্রথম দুই বলে তিনি কোনো রান না দিয়ে নেপালের জন্য ম্যাচটি কঠিন করেন তুলেন। কিন্তু তৃতীয় বলে গুলশান বাউন্ডারি মেরে ম্যাচকে আবার নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন। ৩ বরে প্রয়োজন পড়ে ৪ রানের। পরের বলে ২ রান নিলে সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ২ রান। পঞ্চম বলে কোন রান না আসাতে শেষ বলে প্রয়োজন পড়ে ২ রানের। ১ রান হলে টাই। খেলা গড়াবে সুপার ওভারে। কিন্তু শেষ বলেও গুলশান কোনো রান নিতে না পারলেও স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার হাজার নেপালি দর্শক স্তব্ধ হয়ে পড়েন। যেমনটি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন নিউইয়র্ক স্টেডিয়ামে হাজার হাজার বাঙ্গালি দর্শক।
এই ম্যাচ নেপাল জিততে পারলে ‘ডি’ গ্রুপে সুপার নাটকীয়তা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে নেপালের প্রথম জয় পাওয়াও হতো। কিন্তু প্রোটিয়াদের অবিশ্বাস্য লড়াই তা আর হতে দেয়নি।