![চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ে আশার আলো নতুনদের](uploads/2024/06/15/pkkkk-1718466081.jpg)
“হাতি, ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল”- বাংলা ভাষায় এমন একটা প্রবাদ আছে। ক্ষুদ্র কোনো কিছুর অতি সাহস দেখানোর ক্ষেত্রে অনেকটা ব্যঙ্গ করে এমনটা বলা হয়ে থাকে। তবে মার্কিন মুল্লুকে অনুষ্ঠিত এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেন এই প্রবাদকেই ব্যঙ্গ করছে। কারণ এখানে একের পর এক অঘটন ঘটে যাচ্ছে। অবশ্য অঘটন বলা ভুল হবে। কারণ ঘটনাগুলো হর-হামেশাই ঘটছে। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের কেউ কেউ নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। ছোট দলগুলোর কাছে হারের লজ্জা পাচ্ছে। সেখানেও ক্ষ্যান্ত হয়নি। টুর্নামেন্ট থেকেও বিদায় নিচ্ছে। তাদের বিদায়ে আশার আলো দেখছে নতুনরা। নতুন স্বপ্ন বুনছে। হয়তো নতুন করে এবার সব রেকর্ড লিখবে তারা।
একদিকে টি-টোয়েন্টি দলের র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দিকে। অন্যদিকে আগের আসরে হয়তো চ্যাম্পিয়ন, নয়তো রানার্স আপ। কেউ কেউ আবার একাধিকবার ফাইনালিস্ট। তাতেই ফেবারিটের তকমা নিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করে। এবারও ছিল শিরোপার অন্যতম দাবিদার। কিন্তু গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার আগেই তাদের ব্যাগ গুছিয়ে ফেলতে হয়েছে। কাটতে হচ্ছে বিমানের টিকিট। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তো দূরের কথা দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার আগেই তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। গ্রুপ পর্বে পা পিছলে যাওয়া এমন দলের তালিকায় আছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা। তাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড। তবে যাদেরকে হিসেবেই ধরা হয়নি। ছোট দলের তকমা পাওয়া সেই যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান আলো ছড়াচ্ছে। জায়গা করে নিয়েছে সুপার এইটে।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে সব সময় ফেবারিট ভাবা হয়। এবারও ব্যতিক্রম ছিল না। অবশ্য এমনটা ভাবা ভুল নয়। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে রানার্স আপ হয়েছিল পাকিস্তান। আর দ্বিতীয় আসরেই শিরোপা ছিনিয়ে নেন শহীদ আফ্রিদিরা। এরপর দীর্ঘ দিন ফাইনালে উঠতে না পারলেও দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফের রানার্স আপ হয় বাবর আজমরা। এবার হয়তো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই তাদেরকে হতাশ করে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট। র্যাঙ্কিংয়ে ১৭তম স্থানে থাকা দলটির কাছে হেরে যায় ৭ম স্থানে থাকা পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ভারতের কাছেও হেরে যায়। তৃতীয় ম্যাচে জয় পেলেও এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তাদের বিদায় ঘন্টা বেজে যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ম্যাচে কানাডাকে হারানোর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে ৪ পয়েন্ট অর্জন করে। ভারতের কাছে হারলেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ায়নি। তাতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় মার্কিনরা। অন্য দিকে এক ম্যাচ হাতে থাকতে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় দুইবারের রানার্স আপ ও একবারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান।
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ রেকর্ডও অত্যন্ত উজ্জ্বল। তারাও দুইবার রানার্স আপ ও একবার চ্যাম্পিয়ন। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে হারের পর ২০১২ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। তবে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে তারা। কিন্তু এবার গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আছে। তাতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারের পর বাংলাদেশের কাছে হারে লঙ্কানরা। তৃতীয় ম্যাচটি নেপালের বিপক্ষে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে শেষ ভরসাটুকুও শেষ হয়ে যায়।
নিউজিল্যান্ড এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও সব সময় ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করে। তার প্রমাণও তাদের পারফরম্যান্স-এ পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের পর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের কোনো টুর্নামেন্ট এর সেমিফাইনালের আগে বিদায় নেয়নি। আর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছিল রানার্স আপ। অথচ এবার তারা গ্রুপ পর্বই পার হতে পারেনি। তারাও এক ম্যাচ হাতে থাকতে দেশে ফেরার পত্র পেয়ে গেছে। তাদের কপাল পুড়ছে আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচেই আফগানদের কাছে ধরাশায়ী হয় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও হেরে যায়। তৃতীয় ম্যাচে উগান্ডার বিপক্ষে দাপুটে জয় পেলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। কারণ টানা তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট করে নিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ র্যাঙ্কিংয়ে ৪ ও ৫ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপে হিসেবেই ছিল না র্যাঙ্কিয়ে ১০ নম্বরে থাকা আফগানিস্তান। তবে ব্যাট ও বল হাতে তারা চমক দেখিয়েছে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান স্কোরার ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তারা। তাই তো এবার হয়তো নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে রশিদ খানরা।