![কিশোরগঞ্জে চিনি চোরাচালানে ছাত্রলীগ সভাপতি, নিয়ন্ত্রণে এমপিপুত্র](uploads/2024/06/15/4545454kkk-1718462053.jpg)
কিশোরগঞ্জে ট্রাকবোঝাই ২৩০ বস্তা চোরাই চিনি জব্দের ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হলেও কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের চাপে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আল জুবায়েদ খান নিয়াজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। মামলার এজাহারে ৪নং চোরাকারবারি হিসেবে তাকে পলাতক আসামি উল্লেখ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ জুন) ভোর ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে জেলা শহরের তালতলা এলাকা থেকে চিনিভর্তি ট্রাক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে মামলার দুই আসামি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার ৩নং আসামি জনি। তিনি জেলা শহরের নিউটাউন এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে। জানাগেছে জব্দ হওয়া চোরাই চিনির ট্রাকটি জনির।
গোপন একাধিক সূত্র জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মধ্যে বিগত একবছর যাবৎ অবৈধভাবে চোরাইপথে ভারতীয় চিনি চালান আসে প্রতিদিন ভোরে। যেখানে সহযোগিতা করে মোল্লা সুমনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু। প্রতি চালানে চিনির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে ট্রাকগুলো পাহারা দিয়ে শহরের অদূরে ছেড়ে আসে সুমনের ঘনিষ্ঠরা। প্রত্যক্ষভাবে ভারতীয় চিনি পাচারে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার ভাগ্নে নাজমুল হীরা।
নাজমুল হীরা নেত্রকোণার মদন উপজেলার ফেকনী গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে। ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় একটি বাড়িতে চুরির মামলার আসামি হওয়ার পর একেবারে কিশোরগঞ্জের বয়লা মামার বাড়িতে চলে আসে। তার মামা আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর নেত্রকোণা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত কৌশলে চিনি পাচারের কাজ করে আসছে। তাদের সঙ্গে পাভেল, রবিন, হযরত, শুভ নাথসহ আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন এই কাজে সহযোগিতা করছে।
সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ থেকে ভারতীয় চিনির ট্রাকগুলো নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানা হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলায় আসে। সেখান থেকে তাড়াইল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ঈসমাইল সিরাজী পাহারা দিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার মেইন রোড পর্যন্ত দিয়ে যায়। আবার সেখান থেকে ট্রাকগুলোকে মাঝখানে রেখে সামনে এবং পেছনে দুই/তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকারে করে জেলা শহরের একরামপুর পর্যন্ত নিয়ে আসে মোল্লা সুমন। একরামপুর থেকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার ভাগ্নে নাজমুল হীরা ও পাভেলসহ অন্যান্য সহযোগীরা মোটরসাইকেল দিয়ে পাহারা দিয়ে চৌদ্দশত ইউনিয়নের সামনে পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। এরপর পুলেরঘাট পৌঁছালে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের ছেলে ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য তৌফিকুল হাসান সাগরের নির্দেশনায় ট্রাকগুলো ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় বাই রোডে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। তৌফিকুল হাসান সাগর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও এমপিপুত্র হওয়াতে স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাঁটিয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে হরদম। বর্তমানে চিনি সিন্ডিকেটের ক্যাডার হিসেবে শহরে মোল্লা সুমনের নাম মুখে মুখে। আর সেই তথ্যগুলো প্রকাশ করাতে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে থানায় চাপ প্রয়োগ করে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আল জুবায়েদ খান নিয়াজ খবরের কাগজকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হীরা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। তারা দুজন ও তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা চিনির চোলাচালনের সঙ্গে জড়িত এটি কমবেশি সবাই জানে। সদর থানার ওসিকে চাপ প্রয়োগ করে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও এমপিপুত্র তৌফিকুল হাসান সাগরকে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
মামলার বিষয়ে শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা খবরের কাগজকে বলেন, যারা যারা চিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত তারা সকলেই আইনের আওতায় আসবে। যারা এজহারভুক্ত আসামি আছে তারা তো থাকবেই আরও যারা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলায় এজাহারভুক্ত চারজন ও অজ্ঞতনামা ৫/৬ জন আসামিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সংশ্লিষ্টতা কিভাবে সেটা বলা যাবে না, এটা তদন্তের বিষয়।তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।