ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

ভারতে পাচার হতো মোবাইল ফোন, আসত কসমেটিকস

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
ভারতে পাচার হতো মোবাইল ফোন, আসত কসমেটিকস
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে আইফোনসহ চোরাই দামি স্মার্টফোন ভারতে পাচার করে একটি চক্র। একই সঙ্গে ভারতে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে কসমেটিকস, শাড়ি ও থ্রি পিসসহ নানা দ্রব্য অবৈধ পথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করে তারা। এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে ৯ ভারতীয় ও এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, ভারতীয় নাগরিক রাজা শাও, পঙ্কজ বিশ্বাস, উৎপল মাইটি, দীপঙ্কর ঘোষ, রাজু দাস, সুজন দাস, এস কে আজগর আলী, লারাইব আশ্রাব, সমরজিৎ দাস ও বাংলাদেশি নাগরিক মুরাদ গাজী। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২১টি দামি মোবাইল ফোনসহ চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে আনা বিপুল পরিমাণ কসমেটিকস, শাড়ি, থ্রি পিস, ৫টি ভারতীয় পাসপোর্ট ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (৮ মার্চ) ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বাংলাদেশ থেকে আইফোন, স্যামসাংসহ অন্যান্য দামি স্মার্টফোন চুরি করে ভারতে পাচার করত। আবার ভারতে চুরি হওয়া কিছু মোবাইল ফোন বাংলাদেশে এনে বিক্রি করত। বুধবার (৬ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বাংলাদেশি মুরাদ গাজী তার বোন ববিকে নিয়ে মধ্য বাড্ডায় নিজের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ভারতীয় কাপড়, জুতা স্যান্ডেল, তেল, সাবান, কসমেটিকস, সেক্স পিল ও জেল বিক্রি করে আসছিলেন। অভিযুক্তরা স্বীকার করেছেন জব্দ করা মালামাল কোনোটাই বৈধ পথে আনা হয়নি। কলকাতা থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে যে আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল করে সেই ট্রেনে করে তারা দীর্ঘদিন ধরে ট্যাক্স পরিশোধ না করে ভারতীয় এসব মালামাল চোরাই পথে বাংলাদেশ এনে বিক্রি করে আসছিলেন।

হারুন বলেন, নামাজ পড়তে গিয়ে, জনসভায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে, পথিমধ্যে চলতে গিয়ে অথবা শপিং করতে গিয়ে প্রতিদিন অনেক আইফোন, স্যামসাংসহ অন্যান্য দামি ব্র্যান্ডের ফোন চুরি হয়। এসব ঘটনায় চোর ধরা পড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মোবাইল উদ্ধার হয় না।

চোর এবং তাদের মহাজনদের গ্রেপ্তার করে জানা গেছে, বাংলাদেশে চুরি হওয়া ভালো মানের মোবাইলফোনগুলো পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিক্রি হয়। গ্রেপ্তার কয়েকজন এবং তাদের অন্য সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া দামি মোবাইলফোনগুলো কম দামে কিনে ভারতের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। 

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

খাজা/এমএ/

পাথরঘাটায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে জেলেকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
পাথরঘাটায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে জেলেকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
ছবি : খবরের কাগজ

বরগুনার পাথরঘাটায় নির্বাচনি শত্রুতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে শহিদুল ইসলাম নামে এক জেলেকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (৬ জুলাই) রাত ২টার দিকে পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদুলের মৃত্যু হয়। 

এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চরদুয়ানি ইউনিয়নের একচল্লিশ ঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

শহিদুল একই এলাকার মৃত বাহার আলীর ছেলে।

নিহতের ভাই নাসির বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাকির বিশ্বাস, নাসির, রুবেল, সোবহান, মুসাসহ চেয়ারম্যান এনামুল হোসাইনের লোকজন আগুন দিয়ে কয়েকদিন আগে শহিদুলের মেয়ের ঘর পুড়িয়ে দেয়। পাথরঘাটা থানায় এ নিয়ে মামলা করলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এনামুলের নির্দেশে তার লোকেরা আমার ওপর হামলা করে আমার বাম হাত ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় আবারও থানায় মামলা করেছি বলে এনামুলের নির্দেশে আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য শেষ হওয়া পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চরদুয়ানি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে শহিদুলকে হত্যায় এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে।

নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় রাত দেড়টার দিকে হাসপাতাল নিয়ে আসি।

পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাশিদা তানজুম বলেন, নিহতের শরীরে ২০টির মতো ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। পায়ের রগও কাটা ছিল। যার ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার সুনাম নষ্ট করতে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করছে।

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা বলেন, এ ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে বলেছি।

মহিউদ্দিন অপু/জোবাইদা/অমিয়/

তীর্থ হত্যার বর্ণনা দিল বন্ধু আমান

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১১ এএম
তীর্থ হত্যার বর্ণনা দিল বন্ধু আমান
বন্ধু তীর্থকে গলাকেটে হত্যা করা বন্ধু আমান গ্রেপ্তার। ছবি: খবরের কাগজ

মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তীর্থ রুদ্র হত্যার বর্ণনা দিয়েছে তার বন্ধু তায়হান ইসলাম আমান।

মূলত নেশার টাকা জোগাড় এবং ফুর্তি করার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমান তার বন্ধু তীর্থকে গলা কেটে হত্যা করে।

তীর্থকে হত্যা করতে সোমবার (১ জুলাই) সকালে স্থানীয় একটি দোকান থেকে তার মামা মিঠুর নাম করে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি প্যাথেড্রিন ইনজেকশন কিনে আমান। আর শহরের সততা স্টোর থেকে কিনে একটি দা। সেই দা দিয়েই তীর্থকে একাই হত্যা করে আমান।

শুক্রবার (৫ জুলাই) মাগুরা সদরের শত্রুজিতপুর এলাকা থেকে আটকের পর এভাবেই স্বীকারোক্তি দেয় হত্যাকারী আমান।

আমান মাগুরা শহরের ঋষিপাড়ার জিয়াউর রহমান জিবলুর ছেলে। মাগুরা আদর্শ কলেজের শিক্ষার্থী আমান ও খুন হওয়া তীর্থ এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

সোমবার রাতে হত্যার পর বাড়ি ফিরে সকালে পরীক্ষায় অংশ নেয় আমান। পরীক্ষা শেষে আমান তার বান্ধবীকে নিয়ে তীর্থেরই বাইকে চড়ে বড়বিলা এলাকায় সময় কাটায়। দুপুরের পর মাগুরা পৌর এলাকার কাশিনাথপুর পূর্বপাড়ায় খালার বাড়িতে গিয়ে রান্নাঘরে বাইকটি লুকিয়ে রেখে ফিরে আসে শহরে। 

ঘটনার পর পুলিশের জেরায় আমান হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আনাম।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমানকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং ভিকটিমের মোটরসাইকেল ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

কাশেমুর রহমান/ইসরাত চৈতী/

মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি আমান গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১১ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:২৯ পিএম
মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি আমান গ্রেপ্তার
তীর্থ রুদ্র হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি তারই বন্ধু মো. তায়হান ইসলাম আমান। ছবি: খবরের কাগজ

মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তীর্থ রুদ্র (২১) হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি তারই বন্ধু মো. তায়হান ইসলাম আমানকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিতপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী হত্যাকাণ্ডের পর তীর্থের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আমানের খালার বাড়ি মাগুরা শহরের কাশিনাথপুর পূর্বপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ির নম্বর প্লেটটি শহরের খানপাড়া ও মোটরসাইকেলের চাবি ও তীর্থের ব্যবহৃত মোবাইল আমানের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তায়হান ইসলাম আমান মাগুরা শহরের ঋষিপাড়ার জিয়াউর রহমান জিবলুর (জিবু) ছেলে।

পুলিশ জানায়, মাগুরা আদর্শ কলেজের শিক্ষার্থী এবারের চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী তীর্থ রুদ্র মাগুরা শহরের পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী নিমাই রুদ্রের ছেলে। আমান তার বন্ধু। এইচএসসি পরীক্ষায় সেও অংশ নিচ্ছে। সোমবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমান বাড়ি থেকে তীর্থ রুদ্রকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর শহরের দরিমাগুরা দোয়ারপাড় এলাকায় আল আমিন এতিমখানার পেছনে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না, সেই বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এম মোবাশ্বের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, আমানকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী বিকেলে তীর্থ রুদ্রর মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে তার খালার বাড়ি থেকে। মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে তার নিজ বাড়ি থেকে। সে পুলিশকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কাশেমুর/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : মামলা থেকে নাম মুছতে সাবেক ডিসির ঘষামাজা

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম
২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : মামলা থেকে নাম মুছতে সাবেক ডিসির ঘষামাজা
সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নিজের নাম কেটে দিয়েছিলেন প্রধান আসামি সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার তাকে সহায়তা করার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত সোমবার (১ জুলাই) কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে এই দুই কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে  প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তিনি। 

বিশেষ জজ আদালতের নাজির মো. বেদারুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী নামে মাতারবাড়ীর এক বাসিন্দা কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলা হওয়ার পর এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।

দুদকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আদালতের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় দরখাস্তে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ২৮ জন আসামি ছিলেন। পরে তিনটি পৃষ্ঠা পরিবর্তন করে রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে দুই নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমকে এক নম্বর আসামি করা হয়। আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়। এসব করার সময় বাদীর জাল স্বাক্ষর দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। 

দুদক কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুর রহিম জানান, জালিয়াতির ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক গত সোমবার আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। মামলার নথি জালিয়াতিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা দুইজন হলেন দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান।

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ীতে তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়িঘের, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে চিংড়ি চাষে ক্ষতিপূরণের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ থেকেই ২৫টি চিংড়িঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। 

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়। 

২০১৭ সালের ২২ মে দুর্নীতির মামলায় জামিনের আবেদন করে বরখাস্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

এর আগে, একই মামলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এলও) সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ সিকদারকে গ্রেপ্তার করে দুদক। মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/সালমান/

মেয়ের পরকীয়ার জেরে খুন সাবেক এমপির স্ত্রী

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
মেয়ের পরকীয়ার জেরে খুন সাবেক এমপির স্ত্রী
হত্যাকাণ্ডের শিকার সেলিনা খান মজলিশ-সুবল কুমার রায়-সেলিনা খানের মেয়ে শামীমা খান মজলিশ পপি (ডানে)।

হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পর সাভারের সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিনা খান মজলিশ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সাবেক এমপির বাসার বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি সুবল কুমার রায় (৫০), এমপিকন্যা শামীমা খান মজলিশ ওরফে পপি (৫৭) ও গৃহকর্মী আরতি সরকার (৬০)।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। 

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মামলার তদন্তকাজ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে নির্দেশনা আসে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরু হলে আমরা ভিকটিমের বড় মেয়ে আসামি শামীমা খান মজলিশের পাশাপাশি বাকি দুই মেয়েকেও সন্দেহের মধ্যে রাখি। আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে, ওই বাসায় কারা কারা আসতেন। জানতে পারি একজন ইলেকট্রিশিয়ান মাঝে মাঝে ওই বাসায় আসতেন। কিন্তু বহুদিন ধরে তার ওই বাসায় আসা-যাওয়া নেই। জানতে পারি তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে সাভারে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে পাশেই তার একটি বড় মুদি দোকানও আছে।’

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা তদন্তকালে যেসব তথ্য জানতে পারি, তার মধ্যে বাসার সুইচ বোর্ডটি ভাঙা এবং সেখান থেকে দুটি তার বের করে রাখার একটা বিষয় উঠে এসেছিল। এরপর আমরা আসামি ইলেকট্রিশিয়ান সুবলকে নিয়ে আসি। সাবেক সংসদ সদস্য সামসুদ্দোহা খান মজলিশ তাকে পছন্দ করতেন। তাই আসামি সুবল মাঝেমধ্যে সেখানে যাতায়াত করতেন। বাড়ির ইলেকট্রিকের কাজও করে দিতেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সুবল খান মজলিশের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামি সুবল গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ভিকটিম সেলিমা খান মজলিশের (৬৩) বড় মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তার স্বামীকে নিয়ে নিচতলায় বসবাস করতেন। সেখানে তিনি নিয়মিত যাতায়াতের একপর্যায়ে আসামি শামীমা খান মজলিশের স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ২০০১ সালে আসামি সুবল ও শামীমা খান পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি ২০০৫ সালে জানাজানি হলে সুবলকে মারধর ও অপমান করা হলে তিনি বাসা থেকে চলে যান। তাকে আর ওই বাসায় যেতে নিষেধ করা হয়। ২০০৮ সালে সুবল বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার সেই বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।’

যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, সেদিন ভোরবেলা ফজরের নামাজের সময় ভিকটিম সেলিমা খান মজলিশ ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখান থেকে দেখতে পান সুবল চুপি চুপি তার বাড়ির দিকে আসছেন। সুবলকে দেখে তিনি চিৎকার করতে করতে নিচে নামছিলেন। তখন আসামি সুবল ও শামীমা মায়ের চিৎকার থামাতে ওপরে যান। মাকে থামানোর জন্য মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তাকে জাপটে ধরেন এবং পাশে থাকা একটি ফল কাটার চাকু দিয়ে গলার দুই পাশে তিনটি পোঁচ দেন। এরপর যখন তারা দেখেন তার মা মারা যাননি জীবিত আছেন। তখন আসামি সুবল ইলেকট্রিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুটি তার বের করে ভিকটিমের মাথায় ইলেকট্রিক শক দেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন।’

পিবিআইয়ের প্রধান আরও বলেন, ‘জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৪ জুন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বাসার ডাইনিং রুমে ভিকটিমের গলার দুই পাশে ফল কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিমকে তার প্রতিবন্ধী ছেলে সেতুর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে খাটের চাদরের ওপরে একটি পুরোনো পত্রিকা বিছিয়ে ভিকটিমের মাথার কাছে দুটি বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে এবং ঘাড়ের নিচে তোশক দিয়ে শুইয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আসামিরা।’