![মোবাইল হাতবদলের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন](uploads/2024/03/11/1710126800.masud.jpg)
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার দক্ষিণ বিরামপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী গত বছরের নভেম্বরে খুন হন। এ সময় তার মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় হত্যাকারী। এবার চুরি হওয়া মোবাইলটি পাওয়া গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে। এটি ব্যবহার করতেন এক নারী। এর আগেও মোবাইলটি হাতবদল হয়েছে আরও তিনবার। সেই মোবাইল ফোন হাতবদলের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নরসিংদী জেলার পিবিআই ইউনিটের ইনচার্জ (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
এর আগে গত বুধবার মাধবদী থানার অজপাড়াগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ‘খুন হওয়া ব্যবসায়ীর নাম নির্মল দেবনাথ। তিনি পেশায় একজন মিষ্টির কারিগর ছিলেন।
ঘটনার আগের দিন গত বছরের ১৪ নভেম্বর নির্মলের স্ত্রী মনি দেবনাথ সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে যান। পেশাগত কাজ শেষে রাতে নির্মল একাই বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে যান। পরদিন সকালে বাড়ি ফিরে নির্মলের স্ত্রী খাটের ওপর স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। কোনো মালামাল খোয়া না গেলেও নির্মলের ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার এক মাস পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।’
তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে পারেন নির্মলের মোবাইল ফোনটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর এলাকায় এক নারী ব্যবহার করছেন। পরবর্তী সময়ে অভিযান চালিয়ে মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।’
পিবিআইয়ের এই ইউনিট ইনচার্জ বলেন, ‘মোবাইলটির ব্যবহারকারী লাইলী নামের নারী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, মাধবদীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার প্রেমিক সাকিল এটি তাকে উপহার দিয়েছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে সাকিলকে নরসিংদী জেলার পলাশ থানা এলাকা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে সাকিল জানান, রবিন নামের একজনের কাছ থেকে মাত্র ২৫০ টাকায় মোবাইলটি কিনে লাইলীকে দিয়েছেন তিনি। সাকিলের আটকের খবরে রবিন আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তী সময়ে মাধবদী থানার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রবিনকে আটক করা হয়।
রবিন জানান, তার ফুফাতো ভাই মাসুম বিল্লা মোবাইলটি বিক্রির জন্য তাকে দিয়েছিলেন। রবিন আটকের খবরে গা-ঢাকা দেন মাসুম। একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পিবিআই। তবে বারবারই ফাঁকি দেন মাসুম। পরবর্তী সময়ে মাধবদীতে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয় মাসুম।
এনায়েত হোসেন মান্নান আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার মাসুম একজন পেশাদার চোর। তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। চুরির উদ্দেশ্যে ১৪ নভেম্বর রাত সোয়া তিনটার দিকে নির্মল দেবনাথের বাড়িতে যান তিনি। বাসায় ঢুকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রহ করেন। মাসুম নির্মলের মাথার বালিশের নিচে থাকা মোবাইল ও টাকার ব্যাগ নিতে যান। এতে ঘুম ভেঙে যায় নির্মলের। এ সময় নির্মল চিৎকার দিলে পালানোর চেষ্টা করেন মাসুম। তবে বাড়ির প্রধান গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেননি তিনি। পরে চোর মাসুমকে বঁটি দিয়ে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী নির্মল। বঁটি কেড়ে নিয়ে নির্মলকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গেট খুলে পালিয়ে যান মাসুম।’
গ্রেপ্তারের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মাসুম।