![খুচরা ও পাইকারি বাজারে আদার দামে বিশাল ফারাক](uploads/2024/02/18/1708247745.garlic.jpg)
অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো আদার ক্ষেত্রেও আড়ত থেকে খুচরা বাজারে দামের চরম ফারাক দেখা দিয়েছে। বর্তমানে শ্যামবাজারে ১৩০-১৫৫ টাকা কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে। সেই আদা রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ২২০-২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৮৫ টাকা বা প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা আরও বেশি দামে ৩৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দামের এত পার্থক্যের ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরকার থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, কত লাভ করা যাবে। অনেকের বেশি দামে কেনা। তবে বিভিন্ন খরচ বাদে একটা লাভ ধরেই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করা হচ্ছে আদা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আড়ত থেকে খুচরা পর্যায়ে দামের বেশি তারতম্যের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি বিপণন আইন-২০১৮তে উল্লেখ করা হয়েছে- কে কত লাভ করতে পারবে। কাজেই আড়তে কম দাম হলে খুচরা পর্যায়ে সেই লাভ ধরে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য বিক্রি করতে হবে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটাতে ভোক্তা আইনে জরিমানা পেতে হবে। কেউ সীমা ছাড়িয়ে ব্যবসায়ে লাভ করলে তা ঠিক করে না। কারণ ব্যবসা করলে অবশ্যই নিয়ম মেনে করতে হবে।
রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো আদারও ব্যবহার বেড়ে যায়। ছোলাসহ ইফতারির বিভিন্ন আইটেমে আদার ব্যবহার বেড়ে যায়। প্রতি মাসে ২৫ হাজার টন লাগে। তবে রমজান মাসে আদার ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ জন্য দামও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কাঁচাবাজারের আড়ত শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিরি সহ-সভাপতি মো. মাজেদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে বেশি দাম ছিল আদার। বর্তমানে কমেছে। বিভিন্ন দেশের আদা ১৩০-১৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। রমজান মাসে বাড়তে পারে। কারণ বেশি শুল্ক- কেজিতে ১২-১৩ টাকা লাগে। শুল্ক না কমালে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আদার দামও বেড়ে যাবে।
আড়তে কম দামে আদা বিক্রি হলেও কিন্তু কারওয়ান বাজারে পাইকারি বাজারে ৭৫০-৮০০ টাকা পাল্লা বা ১৫০-১৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরাফাত ট্রেডার্সের আনিসসহ অন্যান্য পাইকারি বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে আদার দাম কম। ৭৫০-৮০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে। তবে চায়না আদার দাম একটু বেশি ১৮০ টাকা কেজি। এর চাহিদা বেশি। তাই দামও বেশি। একই বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের আ. গনিও জানান, বর্তমানে আদার দাম কম। সর্বোচ্চ ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। এদিকে রাজধানীর অপর কৃষিপণ্যের বাজার কৃষিমার্কেটেও পাইকারি বাজারে কম দামে আদা বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
পাইকারিতে কম দামে বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে বেশি দামেই ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা ফারুক জানান, আদার কেজি ২২০-২৪০ টাকা। আগের চেয়ে দাম কম। তবে দেশি আদার দাম বেশি ২৮০ টাকা কেজি।
এদিকে কারওয়ান বাজারেও খুচরা বাজারে বেশি দামে আদা বিক্রি করছে বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতা হালিম জানান, বিদেশি আদা ২২০ টাকা কেজি। তবে চায়না আদার দাম আরও বেশি, ২৪০ টাকা। দেশি আদা আরও বেশি, ৩৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের মালিক শাহ আলম জানান, এখন আদার কেজি ২২০-২৪০ টাকা। দাম কমেছে। আগে বেশি দাম ছিল।
বাজারে খুচরা পর্যায়ে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লায় আরও বেশি দামে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের নামা বাজারের রুবেল জানান, প্রতি কেজি আদা ২৪০-২৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্ষাকালে আদার দাম অনেক বেড়ে যায়। গত জুলাই মাসে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি। তবে বার্মিজ আদা ৪০০-৪২০ টাকা, থাই ও ভারত থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা কেজি।
আদার দাম না কমার কারণ হিসেবে শ্যামবাজারের আদা ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, 'আমাদের দেশে যে আদা আমদানি হয় সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ চীনা আদা এবং বাকিগুলো বার্মা, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশের। তবে বেশি পরিষ্কার হওয়ায় দেশে চীনা আদার চাহিদা বেশি। কিছু দিন ধরে চীনের আদা আসছে না। তাই বাজারে আদার কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। দেশে এ বছর আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আমদানিও কম হয়েছে। এ জন্য দাম বেশি। রমজানে আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।'