![বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় ১০ দিনে কোটি টাকার বাণিজ্য](uploads/2024/03/10/1710058940.bisik.jpg)
দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, কেনাবেচা, বাজারজাতকরণ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরির জন্য মানিকগঞ্জে হয়ে গেল ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা।
মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ৮০টি স্টলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অন্য জেলার উদ্যোক্তারাও এই মেলায় অংশ নেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিচিতির পাশাপাশি ১ কোটি টাকার কেনাবেচা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়। প্রতিবছর এই মেলা করার কথা জানান উদ্যোক্তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদিত পণ্য ছাড়াও মেলায় শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, মাটির তৈরি শো-পিস, তৈজসপত্র ও বাঁশ-বেত ও পাটের তৈরি পণ্যসহ পিঠা-পুলি বিক্রি হয়েছে।
জেলায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া এ মেলায় পণ্য প্রদর্শনী ছাড়াও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিদিন আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গতকাল শনিবার মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন স্টলে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পণ্যে ছাড় থাকায় নিজেদের পছন্দমতো জিনিসও কিনেছেন ক্রেতারা।
ডিফারেন্ট বিউটি শপের উদ্যোক্তা লাবণী আক্তার বলেন, ‘আমি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, মাটির তৈরি গহনা নিয়ে কাজ করি। দেশের বিভিন্ন মেলায় অংশ নিলেও এই প্রথম মানিকগঞ্জে উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নিয়েছি। আমি মূলত অনলাইনে ব্যবসা করি। এই মেলায় ক্রেতারা এসে আমাদের তৈরি করা কাপড়গুলো দেখছেন। পছন্দসই কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মেলার প্রথম ৪ থেকে ৫ দিন প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছি। তবে শেষের দিনগুলো দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।’
চায়না বুটিক হাউসের কর্ণধার চায়না আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। আমার মানিকগঞ্জে চারটি শোরুম আছে। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশেই আমার তৈরি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, শীতের শাল বিক্রি করে আসছি। কিন্তু ১০ দিনব্যাপী এই উদ্যোক্তা মেলা ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের একটি সেতুবন্ধ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা চাই আমাদের এই মেলা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হোক।’
অর্গানিক খাদ্যসামগ্রী নিয়ে কাজ করেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া এলাকার বুবলি আনসারি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম স্বদেশি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রান্নার মসলা, ঘি, তেল, আচার, পিঠা-পুলি নিয়ে কাজ করছেন। অনলাইনের পাশাপাশি তার ঢাকায় একটি শোরুমও রয়েছে। এ মেলায় গ্রাহকদের কাছে তার পণ্যগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মেলা নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বেশ সহায়তা করবে।’
মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান এসেছেন তার ছোট মেয়ে মরিয়ম জামানকে নিয়ে। মেলার প্রতিটি স্টল তিনি মেয়েকে নিয়ে ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি সালোয়ার-কামিজ কিনেছি। যেটা শপিং সেন্টার থেকে কিনলে ৮০০ টাকার কমে পাওয়া যেত না। উদ্যোক্তারা অনেক মানসম্মত পণ্য নিয়ে এসেছেন।’
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রবিন খান তার স্ত্রী ও ছোট বোনকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি ও ছোট বোনের জন্য থ্রি-পিস কিনেছেন। গুণগতমান তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো। কম দামে কিনতে পেরেছেন।
মানিকগঞ্জ বিসিক কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মাহবুবুল ইসলাম, ‘জেলা প্রশাসন ও বিসিকের আয়োজনে মানিকগঞ্জে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। এখানে অনেক উদ্যোক্তা তাদের তৈরি পণ্যগুলো নিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাই বেশি মেলায়। মেলায় যারা অংশ নিয়েছেন অধিকাংশ উদ্যোক্তারাই অনলাইনে ব্যবসা করেন। এই মেলা করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানিকগঞ্জের কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার-প্রসার, বাজারজাতকরণ ও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা। যে উদ্দেশ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল তাতে আমরা সফল হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক মানুষ আমাদের এই মেলা ঘুরতে এসেছেন। সেই সঙ্গে চাহিদামতো পণ্য সামগ্রীও কিনেছেন। সব উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি ১০ দিনের এই মেলায় প্রায় কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়েছে। প্রতিবছর আমরা এই মেলার আয়োজন করব।’